সিঙ্গাইর উপজেলা

সিঙ্গাইর উপজেলা (মানিকগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ২১৭.৫৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৪২´ থেকে ২৩°৫২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০৩´ থেকে ৯০°১৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ধামরাই ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা, দক্ষিণে নবাবগঞ্জ (ঢাকা) উপজেলা, পূর্বে সাভার ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৮৭৪৫১; পুরুষ ১৪০৮৩৪, মহিলা ১৪৬৬১৭। মুসলিম ২৭০০২৮, হিন্দু ১৭৩৮০, খ্রিস্টান ৩৫ এবং অন্যান্য ৮।

জলাশয় প্রধান নদী: ধলেশ্বরী, গাজীখালী ও কালীগঙ্গা।

প্রশাসন ১৯১৯ সালে সিঙ্গাইর থানা গঠিত হয় এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১১ ১৩৮ ২৪১ ২৬৮৮৫ ২৬০৫৬৬ ১৩২১ ৫৫.৮ ৪৫.২
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৬.৫৬ ১৪ ২৬৮৮৫ ১৬২৩ ৫৫.৮
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
চানধর ২৫ ৬৭৮২ ১৬২০৬ ১৭৫৩৮ ৪৮.২
চারিগ্রাম ৩৪ ২৮৮০ ৭৩৭০ ৮০৫২ ৪৩.৭
জয়মণ্ডপ ৫১ ৪৪১২ ১৩০৫৮ ১৩১৯৩ ৪২.২
জামশা ৬৯ ৫৪৪০ ৯৪১৯ ১০৬৮৯ ৪৮.৩
জামির্তা ৬০ ৪১৩৮ ১১৬০৮ ১২১৫৫ ৪৪.১
তালিবপুর ৯৪ ৪১৫০ ৬৮৬৮ ৭৩৭৪ ৪৫.৪
ধল্লা ৪৩ ৫৫৪২ ১৮৫০৬ ১৭৬৯৭ ৪২.১
বলধারা ১৭ ৬৭২০ ১৪২০৭ ১৪৮৭৮ ৪৮.৪
বয়রা ১৯ ৩৬৭৯ ১২০২৭ ১২৩২৬ ৪৮.৪
শায়েস্তা ৭৭ ৫১১৭ ১৩৪৪৭ ১৩৭৪১ ৩৯.০
সিঙ্গাইর ৮৬ ২৭১৭ ৫১৫৭ ৫০৫০ ৫২.২

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ ফোর্ড নগরের দুর্গ, বয়রা নীলকুঠি, দত্ত-গুপ্তদের বাসভবন, আনন্দকুঠি ও মন্দির (বলধারা), সেনবাড়ি ও দুর্গামন্ডপ (বলধারা), ইমামপাড়া জামে মসজিদ (বলধারা, পারিল), ইব্রাহীম শাহের মাযার (বলধারা, পারিল), কালীসুন্দরী দাতব্য চিকিৎসালয় (১৮৯৫)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৮ অক্টোবর তিন শতাধিক পাকসেনা সিঙ্গাইর ক্যাম্প থেকে নৌকাযোগে গোলাইডাঙা হাইস্কুলে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প আক্রমণের জন্য অগ্রসর হলে মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প ত্যাগ করে তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে নূরাণী গঙ্গা খালের পাড়ে অবস্থান নেয়। পাকসেনারা গোলাইডাঙ্গায় মুক্তিযোদ্ধাদের না পেয়ে ঐ এলাকায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ করে এবং পার্শ্ববর্তী চারটি গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। প্রায় চার ঘণ্টা এই তা-বলীলা চালিয়ে পাকসেনারা নৌকাযোগে সিঙ্গাইর ক্যাম্প অভিমুখে রওনা হয়। এ সময় নূরানী গঙ্গা খালের মোড়ে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে প্রচ- গুলি বিনিময় হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে একজন মেজরসহ শতাধিক পাকসেনা নিহত হয়। পাকসেনারা মানিকগঞ্জ থেকে নৌকাযোগে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে সিঙ্গাইর অভিমুখে রওনা হলে বয়রায় মুক্তিযোদ্ধারা পূর্ব পরিকল্পনামতো ধলেশ্বরী নদীর উভয় তীর থেকে একযোগে আক্রমণ চালায়। এই সংঘর্ষে ১৫ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়। ১৫ ডিসেম্বর পাকসেনাদের সঙ্গে গাজিন্দা গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের এক খ- লড়াই সংঘটিত হয়। এই লড়াইয়ে গাজিন্দা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আমিনুর রহমান, ছক্কেল উদ্দিন, শরীফুল ইসলাম ও রহিজউদ্দিন শহীদ হন।

বিস্তারিত দেখুন সিঙ্গাইর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ১০।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৪২০, মন্দির ৩৫, মাযার ১০, তীর্থস্থান ১। উলে­খযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ইমামপাড়া জামে মসজিদ, উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদ, ইরতা জামে মসজিদ, জয়মন্ডপ জামে মসজিদ, ভূম-দক্ষিণ জামে মসজিদ (ধল্লা), শাওরাইল মন্দির, মানিকনগর বাসুদেব মন্দির, শায়েস্তা কালীমন্দির, বয়রা কালীমন্দির, শায়েস্তা হিন্দুতীর্থ, গাজী মুলক একরামুল ইব্রাহিম শাহের মাযার (পারিল), রজ্জব শাহের মাযার (পারিল), জাহির বয়াতীর মাযার (কালিয়াকৈর), পিয়ার পাগলার মাযার (বয়রা)।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৬.২%; পুরুষ ৪৮.৩%, মহিলা ৪৪.২%। কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৩, মাদ্রাসা ১৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সিঙ্গাইর কলেজ (১৯৭০), জয়মন্ডপ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৯), জামির্তা এসজি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), সিঙ্গাইর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪০), বয়রা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৩), নবগ্রাম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), চারিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৮), শাহরাইল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৪), গোলাইডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৭), চর জামালপুর মাদ্রাসা (১৯৬০)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দিশারী, আলোকলতা, শিউলী, দুর্বাচল, দাওয়াল, গাজীখালী, ছায়াপল্লী, পারিল বার্তাবহ।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, মহিলা সংগঠন ১, নাট্যদল ৫, নাট্যমঞ্চ ১, সিনেমা হল ১, ক্লাব ৫০।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৬.৮৪%, অকৃষি শ্রমিক ২.৫৫%, শিল্প ০.৯৮%, ব্যবসা ১৪.১৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.১৭%, চাকরি ৮.৩৯%, নির্মাণ ০.৯৬%, ধর্মীয় সেবা ০.১৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৫.২০% এবং অন্যান্য ৮.৫৭%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫২.৭৫%, ভূমিহীন ৪৭.২৫%। শহরে ৪৫.৬২% এবং গ্রামে ৫৩.১৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম. পাট, আখ, আলু, ডাল, তৈলবীজ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  বাদাম, অড়হর, চীনা, ডাবরী, যব, কাউন, মটর, তিল, তামাক।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, পেঁপে, পেয়ারা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৮০, গবাদিপশু ১৪৫, হাঁস-মুরগি ২০০, হ্যাচারি ৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৩৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৮ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪১২ কিমি; নৌপথ ৪৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা বিড়ি কারখানা, মোমবাতি ও আগরবাতি তৈরির কারখানা, ওয়েল্ডিং কারখানা, ব্রিকফিল্ড, প্যাকেজিং মিল, পুস্তক বাঁধাই শিল্প।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, কাঁসা ও পিতল শিল্প, শাঁখাশিল্প, রেশমশিল্প, কাঠের কাজ, বাঁশের কাজ, সেলাই কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩১, মেলা ১২। সিরাজপুর হাট, বয়রা হাট, সিঙ্গাইর হাট, চারিগ্রাম হাট, জামসা হাট, শাওরাইল বাজার, নতুন বাজার, বলধারা বাজার, মানিকনগর বাজার, জয়মন্ডপ বাজার এবং বৈরাগীর আখড়ার মেলা (সিঙ্গাইর), সাধু আশ্রমের মেলা (জামশা), চৈত্র সংক্রান্তি ও বৈশাখী মেলা (শাহরাইল), সিদ্ধাবাড়ি মেলা (শাহরাইল), পৌষ সংক্রান্তি মেলা (বলধারা ও জয়মন্ডপ) ও পাংকুই ভিটার মেলা (গাজীখালী) উলে­খযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, আলু, ডাল, তৈলবীজ, শাকসবজি, আখের গুড়, কাঁসা-পিতল সামগ্রী, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, দুধ, পেঁপে, পেয়ারা, ইট।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৭.০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.২%, ট্যাপ ১.০% এবং অন্যান্য ২.৮%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৮২.১% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৬.০%পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১.৯% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, মাতৃমঙ্গল ও শিশুসদন ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, কমিউনিটি ক্লিনিক ১১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১০, ক্লিনিক ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে এ উপজেলার বহু লোক প্রাণ হারায়।

এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, আশা, আইটিসিএল। [এম.এ রমজান]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; সিঙ্গাইর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।