সিঙরা মসজিদ
সিঙরা মসজিদ বাগেরহাটের বিখ্যাত ষাটগম্বুজ মসজিদ-এর প্রায় ১৮৩ মিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। ১৯৭০ সালের প্রথম দিকে এটি একেবারে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় ছিল এবং ১৯৭৫ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এর সংরক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করে। তখন থেকে কয়েক পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে মেরামত কাজের মধ্যদিয়ে সংস্কার করে এটিকে ভাল অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়েছে।
বর্গাকার এক গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদ সম্পূর্ণরূপে ইটের তৈরি। বাইরের পরিমাপ ১২.১৯ মি। এর দেওয়ালগুলি প্রায় ২.১৩ মি পুরু। মসজিদ ইমারতটির পূর্বদিকে তিনটি দ্বিকেন্দ্রিক সূচ্যগ্র খিলানপথ আছে, আর উত্তর ও দক্ষিণ দিকে আছে একটি করে। পূর্বদিকের মাঝের প্রবেশপথটি পার্শ্বদেশে অবস্থিত প্রবেশপথদ্বয়ের চেয়ে বড়। কিবলা দেওয়ালের ভেতরে আছে খাজকৃত খিলান মিহরাব যার বাইরের দিকে রয়েছে একটি আয়তাকার অভিপেক্ষপণ। এটি মসজিদের কার্নিস পর্যন্ত উঠে গেছে। কোণার চারটি গোলাকার বুরুজ ছাদপর্যন্ত উত্তোলিত। এগুলির প্রত্যেকটি নিয়মিত ব্যবধানে উত্তোলিত বন্ধনী দ্বারা বিভক্ত। মসজিদটির কার্নিস বাংলার রীতিতে সামান্য বক্রাকারে তৈরি।
মসজিদের চার দেওয়ালের মাঝখানে পেনডেন্টিভ এবং উপরের কোণাগুলির উপর স্থাপিত অর্ধ গম্বুজাকৃতির স্কুইঞ্চগুলির সাথে সংযুক্ত হয়ে চারটি বদ্ধ খিলান ইটের একমাত্র গম্বুজটির ভার বহন করছে। গম্বুজটি মসজিদের একক বর্গাকার কক্ষটিকে আবৃত করে রেখেছে।
মসজিদটি শুধু পোড়ামাটির ফলকে অলংকৃত। দুটি কার্নিস বন্ধনী হীরকাকার নকশা দ্বারা সজ্জিত এবং এদের মধ্যবর্তী স্থানটুকু তিন ভাগ বিশিষ্ট কুলুঙ্গির সারি দিয়ে অলংকৃত। কোণার বুরুজগুলির ছাঁচকৃত বন্ধনী হীরকাকার নকশা দ্বারা চিহ্নিত।
একমাত্র মিহরাবের সুন্দর খাঁজ খিলানটি অলংকৃত ইটের পোস্তা হতে উত্তোলিত এবং এর স্প্যানড্রিলে সুস্পষ্ট গোলাপ নকশা অঙ্কিত আছে। অর্ধবৃত্তাকার মিহরাব কুলুঙ্গির ভেতরে চারটি অনুভূমিক প্যানেল আছে, যেগুলি উত্তোলিত বন্ধনী ও ঝুলন্ত মোটিফ দ্বারা সজ্জিত। খিলানের উপরে ছাঁচকৃত বন্ধনী রয়েছে, যার নিচে দিয়ে চলে গেছে দেওয়াল গাত্রে খোদিত একটি প্যানেল। এটি ফুলসহ প্যাঁচানো লতা দ্বারা সমৃদ্ধ। এসবই জালি নকশাঙ্কিত একটি প্রশস্ত আয়তাকার বর্ডারের (পাড়) মধ্যে সংযুক্ত করা ছিল। এ বর্ডারের ঠিক উপরেই অন্য একটি প্রক্ষিপ্ত বন্ধনী রয়েছে, যা বদ্ধ পাপড়ির একটি সারি দিয়ে সাজানো ছিল।
মিহরাবটির উভয়পার্শ্বে খাঁজকৃত খিলান কুলুঙ্গি ছিল। গম্বুজের বাইরের দিকটা সংস্কারের সময় সমান করে দেওয়া হয়েছিল, যা আদিতে রণবিজয়পুর মসজিদ-এর মতো বৃত্তাকার ইটের সারি দ্বারা অলংকৃত ছিল।
নির্মাণকৌশল ও অলংকরণ উভয় ক্ষেত্রেই এ ইমারত স্থানীয় খানজাহান স্থাপত্য রীতির বৈশিষ্ট্য বহন করে। একারণে এর নির্মাণ কাল পনেরো শতকের মাঝামাঝি বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। [এম.এ বারি]