সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে মূলধন বাজার নিয়ন্ত্রণকারী একটি সরকারি সংগঠন। সিকিউরিটিজ বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অ্যাক্ট ১৯৯৩-এর (অ্যাক্ট নং-১৫, ১৯৯৩) অধীনে এ কমিশনটি ওই বছরের ৮ জুন প্রতিষ্ঠিত হয়। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে ‘ক্যাপিটাল ইস্যুজ অ্যাক্ট ১৯৪৭’ অনুযায়ী ক্যাপিটাল ইস্যুসমূহের নিয়ন্ত্রক কর্তৃক বাংলাদেশের সিকিউরিটিজ বাজার নিয়ন্ত্রিত হতো। ক্যাপিটাল ইস্যুসমূহের নিয়ন্ত্রকের কার্যাবলিও অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ছিল। ঢাকা মহানগরীর দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় এসইসি-র প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। একজন চেয়ারম্যান এসইসি-র প্রধান নির্বাহী এবং তার অধীনে ৪ জন সদস্য কাজ করেন। তাদের মধ্যে ২জন সার্বক্ষণিক নির্বাহী এবং তারা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সরাসরি মনোনীত হন। অপর ২ জনের মধ্যে একজন বাংলাদেশ ব্যাংকের এবং অপরজন অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি। এসইসি-র সদস্যগণ কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন, মূলধন ইস্যু, কর্পোরেট নিরীক্ষা, প্রশাসন ও অর্থ, আইনগত বিষয়সমূহ এবং সেগুলির পরিপালন পরিবীক্ষণ, কোম্পানিগুলির কার্যক্রম পরিদর্শন, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। ৪ জন সদস্য ব্যতীত এসইসি-তে ৪ জন নির্বাহী পরিচালক, একজন কর্পোরেট হিসাবরক্ষক এবং একজন আইন উপদেষ্টা রয়েছেন। এরা সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত ২ জন সদস্যের তত্ত্বাবধানে কাজ করেন।
এসইসি-র প্রাথমিক ও প্রধান উদ্দেশ্যাবলির মধ্যে সিকিউরিটিজ বাজারের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষা, সিকিউরিটিজ বাজারের উন্নয়ন, যথাযথ পদ্ধতিতে সিকিউরিটিজ ইস্যু এবং ইস্যুপ্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট আইনের অনুসরণ নিশ্চিতকরণ, বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে নতুন আইন, অধ্যাদেশ, নীতি ও প্রবিধি প্রণয়ন ও প্রচার এবং সিকিউরিটিজ বাজারের সুষ্ঠু পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্দেশনা ও নেতৃত্ব প্রদান উল্লেখযোগ্য। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩-এর আওতায় বাজার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা ও তাদের স্বার্থ রক্ষা এসইসি-র অন্যতম প্রধান কাজ। কমিশনটি মূলধন ইস্যু এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানির প্রসপেক্টাস অনুমোদন, বিধিবহির্ভূত ও ইনসাইডার লেনদেন নিয়ন্ত্রণ, স্টক এক্সচেঞ্জ তদারকি, সিকিউরিটিজ ইস্যু ও ক্রয়-বিক্রয়ে নিয়োজিত ফার্ম ও ব্রোকারদের কাজ এবং কোম্পানির শেয়ারসমূহের পাবলিক ইস্যুর সাথে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে। এ সকল কাজের অংশ হিসেবে এসইসি কোম্পানিগুলি কর্তৃক সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ, যথাসময়ে বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠান, লভ্যাংশ প্রদান, শেয়ার বণ্টনের চিঠি প্রেরণ এবং সিকিউরিটিজসমূহের ইস্যুকারী কর্তৃক আবেদনকারীদের নিকট দ্রুত রি-ফান্ড ওয়ারেন্ট প্রেরণ তদারকি ও নিশ্চিতকরণসহ সিকিউরিটিজ বাজার সংক্রান্ত আরও নানাবিধ কাজ সম্পাদন করে।
১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এসইসি দেশের সিকিউরিটিজ বাজারের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। উক্ত বাজারের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং প্রাজ্ঞোচিত নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে এসইসি ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি আদেশ ও বিধি প্রণয়ন এবং জারি করতে সক্ষম হয়েছে। এগুলির মধ্যে: ক. সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার অ্যান্ড অথরাইজড রিপ্রেজেনটেটিভ) রেগুলেশন ১৯৯৪, খ. সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্চেন্ট ব্যাংকার অ্যান্ড পোর্টফলিও ম্যানেজার) রেগুলেশন ১৯৯৫, গ. সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ড) রেগুলেশন ১৯৯৭, ঘ. ক্রেডিট রেটিং রুলস ১৯৯৭, ঙ. সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (কন্ট্রোল অব ইনসাইডার ট্রেডিং) রেগুলেশন ১৯৯৫, চ. পাবলিক ইস্যু রুলস ১৯৯৮, ছ. রাইট ইস্যু রুলস ১৯৯৮, এবং জ. ডিপোজিটরি অ্যাক্ট ১৯৯৯, অন্যতম।
এসইসি সিকিউরিটিজ বাজারে কার্যরত স্টক ডিলার, ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংক, শেয়ার বাজার সদস্যবৃন্দের অনুমোদিত প্রতিনিধি এবং অপরাপর সকল মধ্যবর্তী পক্ষসমূহের অনুকূলে নিবন্ধন সনদ প্রদান এবং বাতিল করার একমাত্র কর্তৃত্বধারী প্রতিষ্ঠান। সিকিউরিটিজ বাজারের নিবিড় তত্ত্বাবধান এসইসি-র অন্যতম প্রধান কাজ। এটি ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার মূল্যসমূহের গতিপ্রকৃতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা করে। সিকিউরিটিজ বাজার এবং উক্ত বাজারে অংশগ্রহণকারীদের কার্যাবলি পরিদর্শন ও নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে এসইসি তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহকে গুরুত্ব দেয়। এটি স্টক ব্রোকার, নিবন্ধিত কোম্পানি এবং সকল ইন্টারমিডিয়ারির বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেগুলির নিষ্পত্তি করে। কখনও কখনও এদের লাইসেন্স বাতিল, জরিমানা আরোপ ইত্যাদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কমিশনটি খেলাপি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
সিকিউরিটিজ বাজারের তথ্যসমূহ নিয়ে এসইসি ব্যাপক গবেষণা পরিচালনা করে এবং গবেষণার ফলাফল প্রচার ও প্রকাশ করে। এ কমিশনের বেশ কয়েকটি নিয়মিত প্রকাশনা রয়েছে এবং এগুলির মধ্যে এসইসি বার্ষিক রিপোর্ট, ত্রৈমাসিক রিভিউ, এসইসি পরিক্রমা উল্লেখযোগ্য। এটি বিভিন্ন সময়ে ম্যানুয়াল, হ্যান্ডবুক ইত্যাদিও প্রকাশ ও বিতরণ করে। সিকিউরিটিজ বাজারে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন পক্ষকে (বিনিয়োগকারী, ইন্টারমিডিয়ারি, ব্রোকারকে) বাজার এবং এর কার্যপ্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ করে তোলার লক্ষ্যে এসইসি বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকে। [ইশতিয়াক আহমেদ খান]