সিংড়া উপজেলা
সিংড়া উপজেলা (নাটোর জেলা) আয়তন: ৫২৮.৪৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°২৪´ থেকে ২৪°৪১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০৩´ থেকে ৮৯°২০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নন্দীগ্রাম উপজেলা, দক্ষিণে গুরুদাসপুর উপজেলা, পূর্বে তাড়াস ও শেরপুর (বগুড়া) উপজেলা, পশ্চিমে নাটোর সদর, আত্রাই ও রাণীনগর উপজেলা (নওগাঁ)।
জনসংখ্যা ৩৬৪৩৮২; পুরুষ ১৮২৫৮৬, মহিলা ১৮১৭৯৬। মুসলিম ৩৩২৪১৩, হিন্দু ৩১৫৭৯, খ্রিস্টান ১৮৯ এবং অন্যান্য ২০১। এ উপজেলায় সাঁওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
জলাশয় গুর, আত্রাই, গুমানী এবং নাগর নদী উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন সিংড়া থানা গঠিত হয় ১৮৬৯ সালে এবং থানাকে ১৯৮২ সালের ১৫ ডিসেম্বর উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। ২০০৩ সালে সিংড়া পৌরসভা গঠিত হয়।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১২ | ৩৯৭ | ৪২৪ | ৩৩১৯২ | ৩৩১১৯০ | ৬৮৯ | ৫৬.৮ | ৪১.৫ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার(%) | |||
২৯.৩৯ | ১২ | ৩৬ | ৩৩১৯২ | ১১২৯ | ৫৬.৮ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
ইতালি ৪৭ | ১৬০৯৬ | ১৫১৮০ | ১৪৮৭১ | ৪২.২ | ||||
কলম ৫৫ | ৫৯৬৯ | ১৪৩৯২ | ১৪১৮০ | ৪২.৮ | ||||
চামারি ১২ | ৭৪০০ | ১৫৭৩৯ | ১৫৮৪১ | ৪০.১ | ||||
চৌগ্রাম ২৩ | ১১৫০৫ | ১০৬৭৪ | ১০৫৫৮ | ৪৭.৬ | ||||
ছাতারদীঘি ১৫ | ৯৬৭৫ | ১২৯০৯ | ১২৬৪০ | ৩৯.৭ | ||||
তাজপুর ৮৭ | ৮৪২৯ | ৬৪৬৯ | ৬৫১২ | ৪২.০ | ||||
দহিয়া ৩১ | ১৭৭৯৫ | ১৬২২৬ | ১৬০৩৩ | ৩৫.১ | ||||
রামানন্দ খাজুরা ৭১ | ১১৯১১ | ১৫৪৯৩ | ১৫২৭৬ | ৪১.৮ | ||||
লালোর ৬৩ | ৭৫১৮ | ১২৪৯৪ | ১২৪৬১ | ৪৩.১ | ||||
শেরকোল ৭৯ | ৮৬৬৫ | ১৫১৬৬ | ১৫৩৮০ | ৪৫.৮ | ||||
সুকাশ ৯৪ | ১৩৫৪৯ | ১৭৪৮৬ | ১৭৪৮৬ | ৩৬.৪ | ||||
হাতিয়ানদহ ৩৯ | ৮২৩৭ | ১৩৬৭৬ | ১৪০৪৮ | ৪৪.৯ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ শ্রী শ্রী রাধারমণ ও শ্রী শ্রী নারায়ণ বিগ্রহ ঠাকুর ও দেববিগ্রহ মন্দির (১৮৯০)।
ঐতিহাসিক ঘটনা ১৬৫৮ সালে সিংড়া অঞ্চল সুবা বাংলার বারবকাবাদ সরকারের অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং চৌগ্রাম পরগনার সদর দফতর ছিল। ১৭৪৮ সালে এ অঞ্চল রাণী ভবানীর জমিদারির অন্তর্গত হয়। নাটোর, বড়াইগ্রাম ও সিংড়া নিয়ে ১৯১৪ সালে নাটোর সার্কেল প্রতিষ্ঠিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা সিংড়ার চৌগ্রাম জমিদার বাড়ির রাজাকার ক্যাম্পে অপারেশন চালায়। তাছাড়া পাকবাহিনীকে বেকাদায় ফেলার জন্য তারা চলন বিলের পাশে তাদেরকে এম্বুশের মধ্যে ফেলে। উপজেলার কুমারপাড়ায় ১টি গণকবর রয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন সিংড়া উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ১০।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪২৩, মন্দির ৭৬, গির্জা ২, মাযার ৪। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: সিংড়া জামে মসজিদ, জামতলী মসজিদ, ঘাসিপীরের মাযার (দহিয়া), শ্রী শ্রী রাধারমণ ও শ্রী শ্রী নারায়ণ বিগ্রহ ঠাকুর, দেববিগ্রহ মন্দির।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪২.৯%; পুরুষ ৪৬.৩%, মহিলা ৩৯.৬%। কলেজ ৭, মাধ্যমিক ৫৩, প্রাথমিক ২০০, কারিগরি স্কুল ১৭, মাদ্রাসা ১২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কলম ডিগ্রী কলেজ, বিলহালতি ত্রিমোহণী ডিগ্রী কলেজ (দাঙ্গাপাড়া), রহমত ইকবাল ডিগ্রী কলেজ (বমিহাল), চৌগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ (১৯১৩), সিংড়া দমদমা স্কুল ও কলেজ, লালোর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০১), কলম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), আয়েসা বশিরুল দাখিল মাদ্রাসা, গোলকপাড়া দাখিল মাদ্রাসা, ভুলবাড়ীয়া আলহাজ্ব ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ১৪, লাইব্রেরি ২, সিনেমা হল ৩, নাট্যমঞ্চ ১, মহিলা সংগঠন ৫, যাত্রাদল ১, খেলার মাঠ ১৪।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৯.৭৯%, অকৃষি শ্রমিক ৩%, শিল্প ০.৫৩%, ব্যবসা ৭.৯৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.২৮%, চাকরি ২.৯৭%, নির্মাণ ০.৪৩%, ধর্মীয় সেবা ০.১৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১২% এবং অন্যান্য ৩.৭১%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬০.৪৮%, ভূমিহীন ৩৯.৫২%। শহরে ৪৭.১১% এবং গ্রামে ৬১.৪৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা, আলু, রসুন, পিঁয়াজ, বাঁশ।
বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তামাক, তিল, পাট।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, খেজুর, তরমুজ।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৪, গবাদিপশু ৪১, হাঁস-মুরগি ১০৬।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৬৮ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫৬৯ কিমি; নদীপথ ৫০০ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা চালকল, আটাকল, বরফকল, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, ওয়েল্ডিং কারখানা।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, কাঁসা ও পিতল শিল্প, কাঠের কাজ, চাটাই তৈরি।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৯, মেলা ৯। সিংড়া হাট, কালীগঞ্জ হাট, বিলদহর হাট, জামতলী হাট, দহিয়া হাট, পাকুরিয়া হাট, দুর্গাপুর হাট, বন্দর হাট, শেরকোল হাট, তাজপুর হাট এবং বটতলার মেলা, তিসিখেলা ওরস মেলা ও নাগর নদীর তীরে দুর্গা বিসর্জনের মেলা উলেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, চাল, মাছ, খেজুরের গুড়, চাটাই, কাঁসা-পিতলের বাসনপত্র।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪২.৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯১.০%, ট্যাপ ২.১% এবং অন্যান্য ৬.৯%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬৩.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৯.৮% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৬.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৫, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৭, ক্লিনিক ২।
এনজিও আশা, প্রশিকা, ব্র্যাক, কেয়ার। [এম.জি নেওয়াজ]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; সিংড়া উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা রিপোর্ট ২০০৭।