সালাম, শেখ আবদুস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''সালাম, শেখ আবদুস '''(১৯৪০-১৯৭১)  শিক্ষাবিদ, শহীদ বুদ্ধিজীবী। জন্ম ১৯৪০ সালের ১২ জুলাই নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বিলবাওচ গ্রামে। তাঁর পিতার নাম শেখ আবদুল গফুর এবং মাতা ফুলজান নেছা। শেখ আবদুস সালাম ১৯৫৬ সালে কালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৫৮ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৬০ সালে তিনি খুলনা বিএল কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ ক্লাসে ভর্তি হন। ১৯৭০ সালে এমএ প্রথম পর্ব পাস করেন এবং ১৯৭১ সালে শেষ পর্বের পরীক্ষা চলাকালে আন্দোলনের কারণে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। শেখ আবদুস সালাম পরে খুলনা আইন কলেজ থেকে বিএল এবং ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি শিক্ষা ব্যবস্থা, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেন।
[[Image:SalamSheikhAbdus.jpg|thumb|400px|শেখ আবদুস সালাম]]
'''সালাম, শেখ আবদুস''' (১৯৪০-১৯৭১)  শিক্ষাবিদ, শহীদ বুদ্ধিজীবী। জন্ম ১৯৪০ সালের ১২ জুলাই নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বিলবাওচ গ্রামে। তাঁর পিতার নাম শেখ আবদুল গফুর এবং মাতা ফুলজান নেছা। শেখ আবদুস সালাম ১৯৫৬ সালে কালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৫৮ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৬০ সালে তিনি খুলনা বিএল কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ ক্লাসে ভর্তি হন। ১৯৭০ সালে এমএ প্রথম পর্ব পাস করেন এবং ১৯৭১ সালে শেষ পর্বের পরীক্ষা চলাকালে আন্দোলনের কারণে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। শেখ আবদুস সালাম পরে খুলনা আইন কলেজ থেকে বিএল এবং ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি শিক্ষা ব্যবস্থা, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেন।


শেখ আবদুস সালাম ১৯৬০ সালে নওয়াগ্রাম ইউনাইটেড একাডেমীর প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি বেন্দা ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন এবং বড়দিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি কালিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন।
শেখ আবদুস সালাম ১৯৬০ সালে নওয়াগ্রাম ইউনাইটেড একাডেমীর প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি বেন্দা ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন এবং বড়দিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি কালিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন।
৬ নং লাইন: ৭ নং লাইন:
শেখ আবদুস সালাম ছাত্রাবস্থা থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী গণ-আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। রাজনৈতিক তৎপরতার কারণে ১৯৭০ সালে তিনি সামরিক সরকার কর্তৃক কারারুদ্ধ হন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলনে আবদুস সালাম সংগঠকের ভূমিকায় অবতীর্ন হন। এ সময় তিনি ছিলেন কালিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর নেতৃত্বে কালিয়ায় প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। আবদুস সালাম সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে কালিয়ায় গড়ে ওঠে ‘মুক্তিবাহিনী সংগ্রাম পরিষদ’। তিনি ছিলেন এ পরিষদের আহবায়ক। ১৯৭১ সালের মে মাসের প্রথমদিকে রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি সৈন্যরা শেখ আবদুস সালামকে গ্রেফতার করে। যশোর ক্যান্টনমেন্টে কয়েকদিন নির্যাতনের পর ১৩ মে তাঁকে হত্যা করা হয়।
শেখ আবদুস সালাম ছাত্রাবস্থা থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী গণ-আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। রাজনৈতিক তৎপরতার কারণে ১৯৭০ সালে তিনি সামরিক সরকার কর্তৃক কারারুদ্ধ হন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলনে আবদুস সালাম সংগঠকের ভূমিকায় অবতীর্ন হন। এ সময় তিনি ছিলেন কালিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর নেতৃত্বে কালিয়ায় প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। আবদুস সালাম সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে কালিয়ায় গড়ে ওঠে ‘মুক্তিবাহিনী সংগ্রাম পরিষদ’। তিনি ছিলেন এ পরিষদের আহবায়ক। ১৯৭১ সালের মে মাসের প্রথমদিকে রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি সৈন্যরা শেখ আবদুস সালামকে গ্রেফতার করে। যশোর ক্যান্টনমেন্টে কয়েকদিন নির্যাতনের পর ১৩ মে তাঁকে হত্যা করা হয়।


[[Image:SalamSheikhAbdus.jpg|thumb|400px|শেখ আবদুস সালাম]]
শেখ আবদুস সালাম কালিয়ায় বেশ কিছু স্কুল প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন। কালিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। এছাড়া তিনি কালিয়ার রাস্তাঘাট সংস্কার এবং বিভিন্ন সমাজ কল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। স্বাধীনতার পরে কালিয়া কলেজের নামকরণ হয় কালিয়া শহীদ আবদুস সালাম ডিগ্রি কলেজ। বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ ১৯৯৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শেখ আবদুস সালামের নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। [এ.টি.এম যায়েদ হোসেন]
 
শেখ আবদুস সালাম কালিয়ায় বেশ কিছু স্কুল প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন। কালিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। এছাড়া তিনি কালিয়ার রাস্তাঘাট সংস্কার এবং বিভিন্ন সমাজ কল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। স্বাধীনতার পরে কালিয়া কলেজের নামকরণ হয় কালিয়া শহীদ আবদুস সালাম ডিগ্রি কলেজ। বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ ১৯৯৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শেখ আবদুস সালামের নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে।
 
[এ.টি.এম যায়েদ হোসেন]


[[en:Salam, Sheikh Abdus]]
[[en:Salam, Sheikh Abdus]]

০৪:২৫, ২২ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

শেখ আবদুস সালাম

সালাম, শেখ আবদুস (১৯৪০-১৯৭১)  শিক্ষাবিদ, শহীদ বুদ্ধিজীবী। জন্ম ১৯৪০ সালের ১২ জুলাই নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বিলবাওচ গ্রামে। তাঁর পিতার নাম শেখ আবদুল গফুর এবং মাতা ফুলজান নেছা। শেখ আবদুস সালাম ১৯৫৬ সালে কালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৫৮ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৬০ সালে তিনি খুলনা বিএল কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ ক্লাসে ভর্তি হন। ১৯৭০ সালে এমএ প্রথম পর্ব পাস করেন এবং ১৯৭১ সালে শেষ পর্বের পরীক্ষা চলাকালে আন্দোলনের কারণে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। শেখ আবদুস সালাম পরে খুলনা আইন কলেজ থেকে বিএল এবং ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি শিক্ষা ব্যবস্থা, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেন।

শেখ আবদুস সালাম ১৯৬০ সালে নওয়াগ্রাম ইউনাইটেড একাডেমীর প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি বেন্দা ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন এবং বড়দিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি কালিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন।

শেখ আবদুস সালাম ছাত্রাবস্থা থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী গণ-আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। রাজনৈতিক তৎপরতার কারণে ১৯৭০ সালে তিনি সামরিক সরকার কর্তৃক কারারুদ্ধ হন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলনে আবদুস সালাম সংগঠকের ভূমিকায় অবতীর্ন হন। এ সময় তিনি ছিলেন কালিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর নেতৃত্বে কালিয়ায় প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। আবদুস সালাম সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে কালিয়ায় গড়ে ওঠে ‘মুক্তিবাহিনী সংগ্রাম পরিষদ’। তিনি ছিলেন এ পরিষদের আহবায়ক। ১৯৭১ সালের মে মাসের প্রথমদিকে রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি সৈন্যরা শেখ আবদুস সালামকে গ্রেফতার করে। যশোর ক্যান্টনমেন্টে কয়েকদিন নির্যাতনের পর ১৩ মে তাঁকে হত্যা করা হয়।

শেখ আবদুস সালাম কালিয়ায় বেশ কিছু স্কুল প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন। কালিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। এছাড়া তিনি কালিয়ার রাস্তাঘাট সংস্কার এবং বিভিন্ন সমাজ কল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। স্বাধীনতার পরে কালিয়া কলেজের নামকরণ হয় কালিয়া শহীদ আবদুস সালাম ডিগ্রি কলেজ। বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ ১৯৯৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শেখ আবদুস সালামের নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। [এ.টি.এম যায়েদ হোসেন]