সাইয়্যিদ নিয়ামতুল্লাহ

সাইয়্যিদ নিয়ামতুল্লাহ বুৎ-সাকেন  কাদেরিয়া তরিকার একজন সুফিসাধক। ষোড়শ শতকের শেষদিকে বাংলায় তাঁর আবির্ভাব ঘটে। তিনি ছিলেন কাদেরিয়া তরিকার প্রখ্যাত সুফিসাধক হযরত সাইয়্যিদ ইবরাহিম দানিশমন্দের পুত্র। মালিকুল উমারা উপাধিকারী  ইবরাহিম দানিশমন্দ একসময় ছিলেন হোসেনশাহী সুলতানদের অধীনে তরফের শাসনকর্তা। সোনারগাঁয়ে ছিল তাঁর খানকা। সম্ভবত সাইয়্যিদ নিয়ামতুল্লাহ পিতার মৃত্যুর পর সোনারগাঁ খানকার আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারের দাবিদার ছিলেন। কিন্তু তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা সাইয়্যিদ আরিফবিল্লাহ মুহম্মদ কামেল সোনারগাঁ খানকায় গদীনশীন হলে তিনি সোনারগাঁ ত্যাগ করে ঢাকায় চলে আসেন এবং তৎকালীন শহর খিলগাঁও এলাকায় স্বীয় খানকা প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে এ এলাকাটির নামকরণ হয় দিলকুশা।

সাইয়্যিদ নিয়ামতুল্লাহর বুৎ-সাকেন রূপে পরিচিত হওয়ার পেছনে একটি জনশ্রুতি রয়েছে। কথিত আছে, একসময় এ এলাকার হিন্দুরা তাঁর খানকার পাশ দিয়ে বাদ্য সহযোগে শোভাযাত্রা করে দেবী দুর্গার প্রতিমা শীতলক্ষ্যার শাখা ও নিকটবর্তী কমলাপুর নদীতে বিসর্জনের জন্য নিয়ে যাচ্ছিল। তিনি তখন তাঁর খানকায় এবাদতে নিরত ছিলেন। এ সময় শোভাযাত্রা থেকে শানাই ও বাদ্যের আওয়াজ বাড়ানো হলে তাঁর এবাদতে বিঘ্ন ঘটে। তখন নাকি তাঁর অঙ্গুলি সংকেতে সকল প্রতিমা (বুৎ) ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকেই নাকি তিনি ‘বুৎ সাকেন’ বা প্রতিমা বিচূর্ণকারীরূপে অভিহিত হতে থাকেন।

ঢাকার দিলকুশা মসজিদ সন্নিহিত উত্তরপূর্ব কোণে একটি আয়তাকার ইমারতের অভ্যন্তরে সাইয়্যিদ নিয়ামতুল্লাহ সমাহিত আছেন। এখানেই একসময় ছিল ঢাকার নবাবদের দিলকুশা বাগানবাড়ি ও পারিবারিক কবরস্থান। সৌধের অভ্যন্তরে রয়েছে কারুকার্যখচিত পাঁচ-ধাপ বিশিষ্ট তিনটি বাঁধানো কবর। মধ্যবর্তী কবরটি সাইয়্যিদ নিয়ামতুল্লাহর মাযাররূপে চিহ্নিত। অপর দুটি কবর তাঁর সমসাময়িক দুজন সুফি দরবেশের বলে অনুমিত হয়। [মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]