সরিষা

সরিষা ক্ষেত

সরিষা (Mustard)  Cruciferae গোত্রের তৈল উৎপাদক দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ Brassica napus (সরিষা) ও B. nigra (কালো সরিষা)। এসব একবর্ষজীবী প্রজাতির উৎপত্তিস্থল এশিয়ায়। বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরিষা একটি শীতকালীন শস্য (রবিশস্য)। সরিষা গাছ সচরাচর এক মিটার উঁচু হয়, তবে রাই সরিষার (B. campestris) গাছ প্রায় ২ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। কৃষিক্ষেতে এর হলুদ ফুলের সমারোহ অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন।

বাংলাদেশে সরিষার চাষ করা হয় সাধারণত বীজ থেকে তেল উৎপাদনের জন্য, যা প্রধানত রান্নার কাজে ব্যবহূত হয়। আচার, চাটনি তৈরিতে এর ব্যবহার হয়। এছাড়া শরীরে, বিশেষ করে ছোট শিশুদের গায়ে মাখার জন্য সরিষার তেল ব্যবহার করা হয়। কলকব্জার ক্ষয় নিবারণের জন্য এটির ব্যবহার আছে। সরিষার কচি পাতা ও ডগা শাক হিসেবে এবং সরিষাবাটা ইলিশ মাছের সঙ্গে রান্না করে খাওয়া যায়। এছাড়া সরিষা ক্ষেত থেকে আহরিত মধু (মৌমাছির দ্বারা) অত্যন্ত সুস্বাদু। এর শুকনো গাছ ও পাতা জ্বালানি এবং খৈল গবাদি পশুর খাদ্য ও সার হিসেবে ব্যবহূত হয়।

কয়েক দশক আগেও সরিষার তেল ছিল বাংলাদেশে রান্নায় বহুল ব্যবহূত ভোজ্যতেল। কোন কোন এলাকায় এখনও দেশী তেলকল বা ঘানি দিয়ে বীজ থেকে তেল নিংড়ানো হয়। এই পেশার লোকদের কলু বলে। আজকাল ঘানির বদলে বৈদ্যুতিক কল চালু হয়েছে। সরিষার উৎপাদন দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয় বিধায় প্রচুর পরিমাণ সয়াবিন তেল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। অন্যদিকে সয়াবিন সরিষার তেলের তুলনায় সস্তা হওয়ায় দেশে সরিষা চাষ  হ্রাস পেয়েছে।

সরিষা দেশের সর্বত্র চাষ হলেও ঢাকা, টাঙ্গাইল, কুমিল­া, ফরিদপুর, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, যশোর, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, পাবনা, রাজশাহী ও রংপুর জেলায় অধিক চাষ হয়। বর্তমানে সরিষা চাষাধীন জমি প্রায় ২ লক্ষ ৪২ হাজার হেক্টর এবং বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ১ লক্ষ ৯১ হাজার মে টন।  [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]

আরও দেখুন তেলপ্রদায়ী উদ্ভিদ