সরফরাজ খান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Image:SarfarazKhan.jpg|thumb|right|400px|সরফরাজ খান]]
'''সরফরাজ খান'''  নওয়াব সুজাউদ্দীনের পুত্র ও উত্তরাধিকারী। তিনি ১৭৩৯ সালে ‘আলাউদ্দীন হায়দার জং’ উপাধি গ্রহণ করে মুর্শিদাবাদের মসনদে আরোহণ করেন। ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ হলেও প্রশাসক হিসেবে তাঁর দক্ষতার অভাব ছিল। পিতার উপদেশ অনুযায়ী তিনি শাসন পদ্ধতিতে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটান নি। হাজী আহমদ, আলম চাঁদ ও জগৎ শেঠকে তাঁদের স্ব স্ব পদে বহাল রাখেন। সরফরাজ খানের দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাঁকে সিংহাসন থেকে উৎখাতের প্রচেষ্টা চালান। এই ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা প্রকাশ হলে হাজী আহমদকে দীউয়ানের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। অসন্তুষ্ট হাজী আহমদ তার ছোট ভাই ও বিহারের নায়েব নাজিম  আলীবর্দী খানকে সরফরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে প্ররোচিত করেন। আলীবর্দী খান তাঁর বড় ভাইয়ের অবমাননার অতিরঞ্জিত ও মিথ্যা সংবাদে ক্ষুব্ধ হন। হাজী আহমদ আলম চাঁদ ও জগৎ শেঠকেও তাঁর পক্ষে নিতে সক্ষম হন।
'''সরফরাজ খান'''  নওয়াব সুজাউদ্দীনের পুত্র ও উত্তরাধিকারী। তিনি ১৭৩৯ সালে ‘আলাউদ্দীন হায়দার জং’ উপাধি গ্রহণ করে মুর্শিদাবাদের মসনদে আরোহণ করেন। ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ হলেও প্রশাসক হিসেবে তাঁর দক্ষতার অভাব ছিল। পিতার উপদেশ অনুযায়ী তিনি শাসন পদ্ধতিতে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটান নি। হাজী আহমদ, আলম চাঁদ ও জগৎ শেঠকে তাঁদের স্ব স্ব পদে বহাল রাখেন। সরফরাজ খানের দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাঁকে সিংহাসন থেকে উৎখাতের প্রচেষ্টা চালান। এই ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা প্রকাশ হলে হাজী আহমদকে দীউয়ানের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। অসন্তুষ্ট হাজী আহমদ তার ছোট ভাই ও বিহারের নায়েব নাজিম  আলীবর্দী খানকে সরফরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে প্ররোচিত করেন। আলীবর্দী খান তাঁর বড় ভাইয়ের অবমাননার অতিরঞ্জিত ও মিথ্যা সংবাদে ক্ষুব্ধ হন। হাজী আহমদ আলম চাঁদ ও জগৎ শেঠকেও তাঁর পক্ষে নিতে সক্ষম হন।


ইতোমধ্যে আলীবর্দী খান বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার  [[সুবাহদার|সুবাহদার]] হিসেবে মুগল দরবারের স্বীকৃতি লাভ করেন। এ সময় দিল্লি নাদির শাহের আক্রমণের সম্মুখীন হয়। এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে আলীবর্দী খানের পক্ষে মুগল সম্রাটের স্বীকৃতি লাভ সম্ভব হয়। আলীবর্দী খান এক বিশাল বাহিনী নিয়ে সরফরাজ খানের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। কিন্তু সরফরাজের প্রতি চরম আঘাত হানার পূর্ব মুহূর্তে তিনি একটি পত্রে মুর্শিদাবাদে অবস্থানরত হাজী আহমদ ও তাঁর পরিবার পরিজনদের মুক্ত করে পাটনায় প্রেরণের দাবি জানান। সরফরাজ খান এই দাবি পূরণ করেন এবং হাজী আহমদ তাঁর ভাইয়ের সাথে মিলিত হন। আলীবর্দী খান এতেও শান্ত না হয়ে সৈন্য বাহিনীসহ সুবাহদার সরফরাজ খানের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন।  
ইতোমধ্যে আলীবর্দী খান বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার  [[সুবাহদার|সুবাহদার]] হিসেবে মুগল দরবারের স্বীকৃতি লাভ করেন। এ সময় দিল্লি নাদির শাহের আক্রমণের সম্মুখীন হয়। এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে আলীবর্দী খানের পক্ষে মুগল সম্রাটের স্বীকৃতি লাভ সম্ভব হয়। আলীবর্দী খান এক বিশাল বাহিনী নিয়ে সরফরাজ খানের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। কিন্তু সরফরাজের প্রতি চরম আঘাত হানার পূর্ব মুহূর্তে তিনি একটি পত্রে মুর্শিদাবাদে অবস্থানরত হাজী আহমদ ও তাঁর পরিবার পরিজনদের মুক্ত করে পাটনায় প্রেরণের দাবি জানান। সরফরাজ খান এই দাবি পূরণ করেন এবং হাজী আহমদ তাঁর ভাইয়ের সাথে মিলিত হন। আলীবর্দী খান এতেও শান্ত না হয়ে সৈন্য বাহিনীসহ সুবাহদার সরফরাজ খানের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন।  
[[Image:SarfarazKhan.jpg|thumb|right|সরফরাজ খান]]


উভয় পক্ষ গিরিয়ায় পরস্পর শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয় (৬ এপ্রিল, ১৭৪০)। যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত  [[সরফরাজ খান|সরফরাজ খান]] পরাজিত ও নিহত হন। সরফরাজ খানের সেনাপতিত্রয় মীর হাবিব, শমসের খান ও গৌধর সিং শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। তাঁর বিশ্বস্ত সেনাপতি গাউস খান যুদ্ধে নিহত হন। সরফরাজ খানের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে বাংলার ইতিহাসে  [[মুর্শিদকুলী খান|মুর্শিদকুলী খান]] বংশের শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটে।  [কে.এম করিম]
উভয় পক্ষ গিরিয়ায় পরস্পর শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয় (৬ এপ্রিল, ১৭৪০)। যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত  [[সরফরাজ খান|সরফরাজ খান]] পরাজিত ও নিহত হন। সরফরাজ খানের সেনাপতিত্রয় মীর হাবিব, শমসের খান ও গৌধর সিং শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। তাঁর বিশ্বস্ত সেনাপতি গাউস খান যুদ্ধে নিহত হন। সরফরাজ খানের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে বাংলার ইতিহাসে  [[মুর্শিদকুলী খান|মুর্শিদকুলী খান]] বংশের শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটে।  [কে.এম করিম]

০৬:৪৬, ১৯ মার্চ ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

সরফরাজ খান

সরফরাজ খান  নওয়াব সুজাউদ্দীনের পুত্র ও উত্তরাধিকারী। তিনি ১৭৩৯ সালে ‘আলাউদ্দীন হায়দার জং’ উপাধি গ্রহণ করে মুর্শিদাবাদের মসনদে আরোহণ করেন। ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ হলেও প্রশাসক হিসেবে তাঁর দক্ষতার অভাব ছিল। পিতার উপদেশ অনুযায়ী তিনি শাসন পদ্ধতিতে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটান নি। হাজী আহমদ, আলম চাঁদ ও জগৎ শেঠকে তাঁদের স্ব স্ব পদে বহাল রাখেন। সরফরাজ খানের দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাঁকে সিংহাসন থেকে উৎখাতের প্রচেষ্টা চালান। এই ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা প্রকাশ হলে হাজী আহমদকে দীউয়ানের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। অসন্তুষ্ট হাজী আহমদ তার ছোট ভাই ও বিহারের নায়েব নাজিম  আলীবর্দী খানকে সরফরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে প্ররোচিত করেন। আলীবর্দী খান তাঁর বড় ভাইয়ের অবমাননার অতিরঞ্জিত ও মিথ্যা সংবাদে ক্ষুব্ধ হন। হাজী আহমদ আলম চাঁদ ও জগৎ শেঠকেও তাঁর পক্ষে নিতে সক্ষম হন।

ইতোমধ্যে আলীবর্দী খান বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার  সুবাহদার হিসেবে মুগল দরবারের স্বীকৃতি লাভ করেন। এ সময় দিল্লি নাদির শাহের আক্রমণের সম্মুখীন হয়। এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে আলীবর্দী খানের পক্ষে মুগল সম্রাটের স্বীকৃতি লাভ সম্ভব হয়। আলীবর্দী খান এক বিশাল বাহিনী নিয়ে সরফরাজ খানের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। কিন্তু সরফরাজের প্রতি চরম আঘাত হানার পূর্ব মুহূর্তে তিনি একটি পত্রে মুর্শিদাবাদে অবস্থানরত হাজী আহমদ ও তাঁর পরিবার পরিজনদের মুক্ত করে পাটনায় প্রেরণের দাবি জানান। সরফরাজ খান এই দাবি পূরণ করেন এবং হাজী আহমদ তাঁর ভাইয়ের সাথে মিলিত হন। আলীবর্দী খান এতেও শান্ত না হয়ে সৈন্য বাহিনীসহ সুবাহদার সরফরাজ খানের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন।

উভয় পক্ষ গিরিয়ায় পরস্পর শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয় (৬ এপ্রিল, ১৭৪০)। যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত  সরফরাজ খান পরাজিত ও নিহত হন। সরফরাজ খানের সেনাপতিত্রয় মীর হাবিব, শমসের খান ও গৌধর সিং শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। তাঁর বিশ্বস্ত সেনাপতি গাউস খান যুদ্ধে নিহত হন। সরফরাজ খানের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে বাংলার ইতিহাসে  মুর্শিদকুলী খান বংশের শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটে।  [কে.এম করিম]