সরদার, বেগম আয়েশা
সরদার, বেগম আয়েশা (১৯২৭-১৯৮৮) সমাজসেবক, রাজনীতিক। ১৯২৭ সালে যশোর জেলার বাঘারপাড়া থানার খানপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতার নাম সুবরাত আলী সরদার। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পড়াশুনা করে তিনি বিএ ডিগ্রি লাভ করেন।
বেগম আয়েশা সরদার ১৯৫৪ সাল থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি মুসলিম লীগ মহিলা কমিটির চেয়ারম্যান (১৯৫৪), ১৯৬২ সালে জেলা পরিষদ ও ডিভিশনাল কাউন্সিলের সদস্য, প্রথম মৌলিক গণতন্ত্রের সদস্য (১৯৬৫) এবং যশোর পৌরসভার কমিশনার ছিলেন। তিনি ১৯৬৫ সালে মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থায় প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন খুলনা জোন শ্রমিক ফেডারেশনের চেয়ারম্যান (১৯৬৭), ঢাকা পৌরসভার কমিশনার (১৯৭৭) এবং মহিলা জাগদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য (১৯৭৮)। পরে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ মহিলা সমাজকল্যাণ সমিতির সভানেত্রী, ঢাকা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের কমিশনার এবং জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সহ-সভানেত্রী ছিলেন। ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বেগম আয়েশা সরদার ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি যশোর সাহিত্য সংঘের সদস্য (১৯৪০), যশোর মাতৃ ও শিশুমঙ্গল কেন্দ্রের সেক্রেটারি (১৯৪৮), আপওয়ার সভানেত্রী, যশোর উইমেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল হোমের সেক্রেটারি (১৯৫২), যশোর কেন্দ্রীয় জেলের পরিদর্শক ও জেল বোর্ডের সদস্য ছিলেন। ১৯৫৫ সালে তিনি পাকিস্তান নারী সমাজকল্যাণ ও সেবাসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাঁর উদ্যোগে মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, খুলনায় মহিলা সমাজকল্যাণ সমিতি গঠিত হয়। তিনি ১৯৫৮ সালে যশোর সাংবাদিক সমিতি এবং ১৯৭০ সালে যশোর উপ-শহরে শিশু ও মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কেশবপুর গার্লস হাইস্কুল, এস.এস গার্লস হাইস্কুল, যশোর নিউ টাউন গার্লস স্কুল এবং মাদ্রাসা ও প্রাইমারি স্কুলসহ বৃহত্তর যশোরে প্রায় ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তিনি যশোর মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সিটি কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৫৬-৭১ সালে শতদল নামে একটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি যশোর জেলা সাংবাদিক সমিতি এবং ১৯৬৩ সালে যশোর এবাকুইব সমিতির সভানেত্রী, ১৯৬৪ সালে যশোর মহিলা সমবায় সমিতির সেক্রেটারি ও ঢাকা সমবায় সমিতির পরিচালক ছিলেন।
১৯৫৩ সালে রাণী এলিজাবেথের অভিষেক উপলক্ষে তিনি করোনেশন পদক লাভ করেন এবং ১৯৬২ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ‘তমগা-ই-খিদমত’ খেতাবে ভূষিত হন।
১৯৮৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়। [মোঃ আলী আকবর]