সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ১৯৮৫

সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ১৯৮৫ এই বিধিমালায় কোন সরকারি কর্মচারীর অপরাধের তদন্ত প্রক্রিয়া এবং অপরাধ বা অপরাধসমূহের গুরুত্ব অনুসারে তাকে কি ধরনের শাস্তি প্রদান করা হবে তার বিধান রয়েছে। এতে আপীল, পুনঃতদন্ত ও পুনর্বিচার প্রক্রিয়াও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ বিধিতে অসদাচরণের ব্যাপক সংজ্ঞা দিয়ে বলা হয়েছে যে, স্বাভাবিক শৃঙ্খলা বা চাকুরির শৃঙ্খলার পরিপন্থী বা আচরণবিধিতে বর্ণিত যেকোন শর্ত লঙ্ঘন অথবা কোন কর্মকর্তা বা ভদ্রলোকের জন্য শোভনীয় নয় এমন কোন আচরণ অসদাচরণ বলে বিবেচিত হবে। এ ছাড়াও অসদাচরণ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে: (১) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আইনসম্মত নির্দেশ অমান্য করা; (২) কর্তব্যকর্মে অবহেলা; (৩) আইনসঙ্গত কারণ ব্যতিরেকে সরকারি কোন আদেশ, বিজ্ঞপ্তি ও নির্দেশপত্রের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন এবং (৪) কোন সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে যেকোন কর্তৃপক্ষের কাছে অসৌজন্যমূলক, বিভ্রান্তিকর, ভিত্তিহীন বা তুচ্ছ বিষয়ে অভিযোগ পেশ করা।

এই বিধিতে শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রগুলি হচ্ছে অযোগ্যতা, অসদাচরণ, ইচ্ছাকৃত অনুপস্থিতি, দুর্নীতি ও শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রম। শাস্তির প্রকৃতি দু ধরনের। প্রথমটি লঘু শাস্তি এবং দ্বিতীয়টি গুরু ধরনের। লঘু শাস্তি হলো সাধারণত তিরস্কার করা, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পদোন্নতি স্থগিত রাখা, দক্ষতা সীমা অতিক্রমের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা এবং তা অতিক্রম করার ক্ষেত্রে অযোগ্য করে রাখা, অবহেলা বা আদেশ অমান্য করার কারণে ঘটিত সরকারের আর্থিক কোন ক্ষতি কর্মচারীর বেতন বা গ্রাচ্যুইটি থেকে সম্পূর্ণ বা আংশিক আদায় করা এবং বেতনের টাইমস্কেল নিম্নতর স্তরে অবনমিত করা। গুরু ধরনের শাস্তি হলো পদাবনতি বা বেতন হ্রাস, বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান, চাকুরি থেকে অপসারণ বা চাকুরিচ্যুতি। এ বিধির আওতায় চাকুরিচ্যুত করা হলে ওই কর্মচারী ভবিষ্যতে অন্য কোন সরকারি চাকুরিতে অথবা কোন আইন বলে বা আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত কোন সংস্থায় নিয়োগ লাভের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে চাকুরি থেকে অপসারিত হলে কর্মচারী পুনর্নিয়োগ লাভের অযোগ্য হবেন না।

সুনির্দিষ্ট কোন অপরাধে কি ধরনের শাস্তি প্রযোজ্য তা এই বিধিতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। অদক্ষতার দায়ে তিরস্কার ও চাকুরিচ্যুতি ছাড়া যেকোন শাস্তি প্রদান করা যেতে পারে অথবা অদক্ষতার প্রকারভেদে চাকুরিচ্যুতি ব্যতীত অন্য যেকোন শাস্তি প্রযোজ্য হতে পারে। অসদাচরণ এবং দুর্নীতি বা নাশকতামূলক অপরাধে লঘু বা গুরু উভয় ধরনের যেকোন শাস্তি এবং পদাবনতি বা বেতন হ্রাস ব্যতীত যেকোন গুরু দন্ড প্রদান করা যেতে পারে। তবে কর্মচারীর নিয়োগ কর্তৃপক্ষের অধস্তন কোন কর্তৃপক্ষ গুরু দন্ড প্রদানের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন না। এ শর্তটি সংবিধানের ১৩৫ (১) অনুচ্ছেদের উপর ভিত্তিশীল।

এ বিধিতে বর্ণিত তদন্ত প্রক্রিয়া মূলত তিন ধরনের: (১) নাশকতামূলক অপরাধের ক্ষেত্রে তদন্ত প্রক্রিয়া, (২) লঘু দন্ড আরোপযোগ্য অপরাধের তদন্ত প্রক্রিয়া, (৩) এমন কোন অপরাধের তদন্ত প্রক্রিয়া যাতে গুরু দন্ড আরোপিত হতে পারে। সংবিধানের ১৩৫(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, প্রজাতন্ত্রের বেসামরিক কোন পদে কর্মরত কোন ব্যক্তিকে কেন তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না এ মর্মে কারণ দর্শানোর যথাযথ সুযোগ না দিয়ে চাকুরিচ্যুত বা অপসারণ করা বা তার পদাবনতি ঘটানো যাবে না।

কোন ফৌজদারি অপরাধের জন্য গুরুদন্ড প্রদানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে অথবা যেখানে গুরুদন্ড প্রদানের যোগ্যতাসম্পন্ন কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযুক্ত সরকারি কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দেওয়া যুক্তিসঙ্গতভাবে সম্ভব নয় বলে প্রতীয়মান হবে অথবা যেসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নিশ্চিত হবেন যে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে অভিযুক্তকে এ ধরনের সুযোগ দেওয়া সঙ্গত হবে না, সেসব ক্ষেত্রে উল্লিখিত সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার ব্যতিক্রম ঘটতে পারে। সর্বশেষ উল্লিখিত ব্যতিক্রমটি এ বিধির আওতায় নাশকতামূলক কার্যকলাপের তদন্ত প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

গুরু ও লঘু উভয় ধরনের শাস্তির ক্ষেত্রে তদন্ত প্রক্রিয়ায় কারণ দর্শানোর যুক্তিসঙ্গত সুযোগ দানের বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত শুনানিরও সুযোগ রয়েছে। অভিযুক্ত সরকারি কর্মচারীকে কারণ দর্শাও নোটিশ প্রদান এবং ব্যক্তিগত শুনানির পর নিয়োগ কর্তৃপক্ষকে একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে। তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রাপ্ত তথ্য বিবেচনার উপর শাস্তিদান বা অভিযোগ থেকে রেহাই পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করবে। অবশ্য লঘু শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে নিয়োগ কর্তৃপক্ষ অভিযোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হলে তদন্তকারী নিয়োগ ছাড়াই আদেশ প্রদান করতে পারেন। গুরু শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে দ্বিতীয় দফা কারণ দর্শাও নোটিশ ইস্যু করতে হবে। এ ধরনের ঘটনায় নিয়োগ কর্তৃপক্ষ যথাযথ বিবেচনা করলে অভিযুক্ত সরকারি কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে অথবা ছুটি গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারেন।

নিয়োগ কর্তৃপক্ষ হিসেবে রাষ্ট্রপতি কোন শৃঙ্খলাজনিত বিষয়ে কোন আদেশ প্রদান করলে সে আদেশের বিরুদ্ধে আপীলের সুযোগ থাকে না। তবে এক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ সরকারি কর্মচারী রাষ্ট্রপতি বরাবরে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন পেশ করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি এ আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রদত্ত আদেশ সংশোধন বা বহাল রাখতে পারেন। ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি কর্মচারীকে আদেশ সম্পর্কে অবহিত করার তিন মাসের মধ্যে আপীল পেশ ও পুনর্বিবেচনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। একই ইস্যুতে একজন সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হলে বা আইনগত প্রক্রিয়া শুরু হলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে কোন বাধা থাকে না। তবে কর্তৃপক্ষ শাস্তিদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে মামলা বা আইনগত প্রক্রিয়ার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শাস্তির প্রয়োগ বা কার্যকারিতা স্থগিত থাকবে। [এ.এম.এম শওকত আলী]