সন্দ্বীপ উপজেলা

সন্দ্বীপ উপজেলা (চট্টগ্রাম জেলা) আয়তন: ৭৬২.৪২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°১৬´ থেকে ২২°৪৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°১৭´ থেকে ৯১°৩৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) উপজেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে সীতাকুন্ড ও মিরসরাই উপজেলা এবং সন্দ্বীপ চ্যানেল, পশ্চিমে নোয়াখালী সদর ও হাতিয়া দ্বীপ।

জনসংখ্যা ২৭৮৬০৫; পুরুষ ১২৮৬৫৬, মহিলা ১৪৯৯৪৯। মুসলিম ২৫৩০১৯, হিন্দু ২৫৪৩৯, বৌদ্ধ ৭ এবং অন্যান্য ১৪০।

প্রশাসন সন্দ্বীপ থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৫ ৩৪ ৩৪ ৫২৯৮২ ২২৫৬২৩ ৩৬৫ ৪৮.৫ (২০০১) ৫১.৭
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার(%)
৩০.০৩ (২০০১) ১০ ৪১৩৬৫ ১৪২৭ (২০০১) ৫১.৩
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২৩.১১ (২০০১) ১১৬১৭ ৬১৮ (২০০১) ৪৭.৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আজিমপুর ১৩ ৫০০৪ ১০৮২ ১২৪৭ ৫২.১
আমানুল্লাহ্ ১১ ৫০৮ ২২৪৪ ২৫৮৭ ৪৬.৭
উড়িরচর ৯৬ ২৬০০১ ৫৫৯৯ ৫৩২০ ৪৪.৩
কালাপানিয়া ৫৫ ২৫৬০ ৭৯৪২ ৮৬২১ ৫৭.৭
গাছুয়া ৩০ ৩৪৭৩ ৭৮৮৩ ৯৪৩০ ৫৭.০
দিঘাপার ২৫ - ৮৪৭ ৮৭২ ৬২.৬
বাউরিয়া ২০ ৬১২৬ ৯৪৯২ ১১৩৫৬ ৫০.৮
মগধরা ৬৫ ৩৮৫৯২ ১৭৫৬৩ ২০৪২৫ ৪৪.১
মাইটভাঙ্গা ৭০ ৩০০৮ ৯২৪১ ১১৬৮৯ ৫৭.৯
মুসাপুর ৭৫ ৫৩১০ ১৬৯৫৩ ২১২১৯ ৫৬.৪
রহমতপুর ৮৫ ২৬৫৪ ৩৭৪৩ ৪৩৪৫ ৪৬.৯
সন্তোষপুর ৯০ ৪২০৫ ৫৮৫৬ ৬৫৬৯ ৫১.৮
সরিকাট ৯২ ৮৪০৫ ১১৩৫৪ ১৩১৮৯ ৪৬.৯
হরিষপুর ৪০ ৩৫৫৩ ১৮০৪ ২০৬৯ ৪৮.৩
হারামিয়া ৩৫ ৩৮৯৫ ৭৮৫৮ ৮৮৪১ ৫২.০

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

ঐতিহাসিক ঘটনা এ উপজেলায় ১৭৬৭ সালে আবু তোরাবের নেতৃত্বে বাংলার প্রথম কৃষক-বিদ্রোহ এবং ১৯৩০ সালে কংগ্রেস সভাপতি কালী কেশব ঘোষের নেতৃত্বে আইন অমান্য-আন্দোলন সংঘটিত হয়। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফার প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেন এখান থেকে।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে এ উপজেলা ১ নং সেক্টরের অধীন ছিল। ১০ মে পাকবাহিনী সন্দ্বীপ শহরে আইনজীবী জাহেদুর রহমানসহ অনেক নিরীহ লোককে গুলি করে হত্যা করে এবং অনেক ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় ও লুটপাট করে। সন্দ্বীপের মুক্তিযোদ্ধারা হরিশপুর ও মাইটভাঙ্গাসহ উপজেলায় কয়েকটি স্থানে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে অপারেশন পরিচালনা করে। তারা গুপ্তছড়া ঘাটে পাকসেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে এলাকা থেকে শত্রুদের বিতাড়িত করে। ৭ ডিসেম্বর সন্দ্বীপ শত্রুমুক্ত হয়।

বিস্তারিত দেখুন সন্দ্বীপ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ১০।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ২৭০, মন্দির ৭৩, মাযার ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: সাহাবানু মসজিদ, সন্দ্বীপ টাউন জামে মসজিদ, সন্দ্বীপ টাউন বাজার মসজিদ, আব্দুল গনি চৌধুরী মসজিদ।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫১.৫%; পুরুষ ৫০.৭%, মহিলা ৫২.১%। কলেজ ৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৫, মাদ্রাসা ২২৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সরকারি হাজী এ বি কলেজ (১৯৬৭), মোস্তাফিজুর রহমান ডিগ্রী কলেজ, সাউথ সন্দ্বীপ কলেজ, কার্গিল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০২), সন্দ্বীপ পাবলিক বিদ্যালয়, সন্দ্বীপ আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, আজিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কার্গিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৫০), বশিরিয়া আহমদিয়া আলহাজ্ব আবু বকর ছিদ্দিক ফাজিল মাদ্রাসা (১৯০২), কাঠগড় ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২৯)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দ্বীপ চিত্র, দ্বীপ বার্তা, সন্দ্বীপ সন্দর্শন।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, সিনেমা হল ১, কমিউনিটি সেন্টার ১৩, ক্লাব ২০, খেলার মাঠ ১৫, মহিলা সমিতি ৬।

বিশেষ আকর্ষণ  বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকত।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৪.১৬%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৮৮%, শিল্প ০.৩২%, ব্যবসা ১৩.১৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৯৭%, চাকরি ১৫.৬৪%, নির্মাণ ১.১৭%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১৫.৫১% এবং অন্যান্য ১১.৮০%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৩৯.৪৩%, ভূমিহীন ৬০.৫৭%। শহরে ৩৩.৭২% এবং গ্রামে ৪০.৪৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, পান, আখ, নারিকেল, বাদাম, তাল, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  তিল, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, পেয়ারা, কুল, সুপারি, খেজুর, জলপাই।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২২, গবাদিপশু ৮, হাঁস-মুরগি ৮।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৬.১৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫.১০ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৬.২০ কিমি; নৌপথ ১৮৫.৭৪ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, বরফকল, বিড়ি কারখানা, ছাপাখানা, হোসিয়ারী শিল্প, জাহাজ নির্মাণ শিল্প।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, কাঁসা ও পিতলশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩৪, মেলা ২। আকবর হাট, শিবের হাট, বক্তার হাট, নাজির হাট, ধোপার হাট, চৌধুরী হাট, সওদাগর হাট, নন্দির হাট, মুন্সির হাট, সন্দ্বীপ টাউন বাজার, বাংলা বাজার, আনন্দ বাজার এবং সালাম বাজার উলে­খযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, মাছ, পান, সুপারি, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩২.২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে ।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৪.১%, ট্যাপ ০.১% এবং অন্যান্য ৫.৮%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৮.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৯.১% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২.৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে­ক্স ২, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ৭, ক্লিনিক ৪।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ উপজেলায় ১৮৭৭, ১৯৬৩, ১৯৭০ সালে এবং ১৯৮৫ সালের ২৫ মে ও ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রবল সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস ও ঝড়ে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এছাড়া ঘরবাড়ি, মৎস্য, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও আশা, প্রশিকা, কেয়ার, কারিতাস। [তৌহিদ হোসেন চৌধুরী]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; সন্দ্বীপ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।