সন্দ্বীপ, আবুল কাশেম: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Image:SandwipAbulKashem.jpg|thumb|right|আবুল কাশেম সন্দ্বীপ]]
'''সন্দ্বীপ, আবুল কাশেম''' (১৯৪৫-১৯৯৫)  শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগঠক এবং প্রথম সংবাদ পাঠক। তাঁর জন্ম ১৯৪৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ থানার সারিকাইত গ্রামে। তাঁর পিতার নাম নুর আহমেদ। আবুল কাশেম সন্দ্বীপ ১৯৫৯ সালে সাউথ সন্দ্বীপ হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রামের সরকারি আই,আই কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) এবং একই বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৪ সালে ভারত থেকে কো-অপারেটিভ বিষয়ে ফেলোশিপ এবং ১৯৭৫-৭৬ সালে সোভিয়েত রাশিয়া থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন।
'''সন্দ্বীপ, আবুল কাশেম''' (১৯৪৫-১৯৯৫)  শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগঠক এবং প্রথম সংবাদ পাঠক। তাঁর জন্ম ১৯৪৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ থানার সারিকাইত গ্রামে। তাঁর পিতার নাম নুর আহমেদ। আবুল কাশেম সন্দ্বীপ ১৯৫৯ সালে সাউথ সন্দ্বীপ হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রামের সরকারি আই,আই কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) এবং একই বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৪ সালে ভারত থেকে কো-অপারেটিভ বিষয়ে ফেলোশিপ এবং ১৯৭৫-৭৬ সালে সোভিয়েত রাশিয়া থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন।


৫ নং লাইন: ৬ নং লাইন:


শিক্ষণ ও শিক্ষকতার প্রতি আবুল কাশেম সন্দ্বীপের প্রচন্ড অনুরাগ ছিল। ১৯৬১-৬২ সাল পর্যন্ত তিনি সমাজকল্যাণ বিভাগের শহর উন্নয়ন প্রকল্প চট্টগ্রামের অধীনে বয়ষ্ক নৈশ বিদ্যালয়ের পরিদর্শক এবং ১৯৬৩-৬৫ সাল পর্যন্ত একই প্রকল্পে শিক্ষকতা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি জুন ১৯৭০ থেকে ৮ মার্চ ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ফটিকছড়ি কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শিক্ষণ ও শিক্ষকতার প্রতি আবুল কাশেম সন্দ্বীপের প্রচন্ড অনুরাগ ছিল। ১৯৬১-৬২ সাল পর্যন্ত তিনি সমাজকল্যাণ বিভাগের শহর উন্নয়ন প্রকল্প চট্টগ্রামের অধীনে বয়ষ্ক নৈশ বিদ্যালয়ের পরিদর্শক এবং ১৯৬৩-৬৫ সাল পর্যন্ত একই প্রকল্পে শিক্ষকতা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি জুন ১৯৭০ থেকে ৮ মার্চ ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ফটিকছড়ি কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
[[Image:SandwipAbulKashem.jpg|thumb|right|আবুল কাশেম সন্দ্বীপ]]


আবুল কাশেম সন্দ্বীপ ১৯৬০-এর দশক থেকে চট্টগ্রাম বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার ও নিয়মিত লেখক ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম সংস্কৃতি সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ তিনি কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’। তিনিই এ কেন্দ্রের প্রথম কণ্ঠ। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ৭.৪০ মিনিটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে তিনি ‘ডিক্লারেশন অব ওয়ার অব ইন্ডিপেন্ডেন্স’ সংবাদ আকারে প্রচার করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আগরতলা ও কলকাতায় সংবাদ লেখার দায়িত্ব পালন করেন এবং বেতারে বাংলা খবর পাঠ করতেন। মুক্তিযুদ্ধে বহুল প্রচারিত গান ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি বাংলাদেশের নাম’ এর গীতিকার তিনি।
আবুল কাশেম সন্দ্বীপ ১৯৬০-এর দশক থেকে চট্টগ্রাম বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার ও নিয়মিত লেখক ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম সংস্কৃতি সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ তিনি কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’। তিনিই এ কেন্দ্রের প্রথম কণ্ঠ। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ৭.৪০ মিনিটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে তিনি ‘ডিক্লারেশন অব ওয়ার অব ইন্ডিপেন্ডেন্স’ সংবাদ আকারে প্রচার করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আগরতলা ও কলকাতায় সংবাদ লেখার দায়িত্ব পালন করেন এবং বেতারে বাংলা খবর পাঠ করতেন। মুক্তিযুদ্ধে বহুল প্রচারিত গান ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি বাংলাদেশের নাম’ এর গীতিকার তিনি।

১০:৫০, ১৮ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

আবুল কাশেম সন্দ্বীপ

সন্দ্বীপ, আবুল কাশেম (১৯৪৫-১৯৯৫)  শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগঠক এবং প্রথম সংবাদ পাঠক। তাঁর জন্ম ১৯৪৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ থানার সারিকাইত গ্রামে। তাঁর পিতার নাম নুর আহমেদ। আবুল কাশেম সন্দ্বীপ ১৯৫৯ সালে সাউথ সন্দ্বীপ হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রামের সরকারি আই,আই কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) এবং একই বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৪ সালে ভারত থেকে কো-অপারেটিভ বিষয়ে ফেলোশিপ এবং ১৯৭৫-৭৬ সালে সোভিয়েত রাশিয়া থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন।

আবুল কাশেম সন্দ্বীপ ছাত্রনেতা হিসেবে ১৯৬২-৬৪ সালে সরকারি আই,আই কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৬৪-৬৫ সালে চট্টগ্রাম কলেজ বাংলা বিভাগের সাহিত্য সম্পাদক, ১৯৬৫-৬৬ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র সংসদের বার্ষিকী সম্পাদক, ১৯৬৬-৬৭ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ১৯৬২-৬৭ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের ছাত্র সংগ্রাম কমিটির সদস্য এবং ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার নির্মাণ কমিটির আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬০-৭০ সাল পর্যন্ত দৈনিক জমানা (চট্টগ্রাম), সাপ্তাহিক জমানা (চট্টগ্রাম), দৈনিক আজাদী (চট্টগ্রাম)-এ সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

শিক্ষণ ও শিক্ষকতার প্রতি আবুল কাশেম সন্দ্বীপের প্রচন্ড অনুরাগ ছিল। ১৯৬১-৬২ সাল পর্যন্ত তিনি সমাজকল্যাণ বিভাগের শহর উন্নয়ন প্রকল্প চট্টগ্রামের অধীনে বয়ষ্ক নৈশ বিদ্যালয়ের পরিদর্শক এবং ১৯৬৩-৬৫ সাল পর্যন্ত একই প্রকল্পে শিক্ষকতা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি জুন ১৯৭০ থেকে ৮ মার্চ ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ফটিকছড়ি কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

আবুল কাশেম সন্দ্বীপ ১৯৬০-এর দশক থেকে চট্টগ্রাম বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার ও নিয়মিত লেখক ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম সংস্কৃতি সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ তিনি কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’। তিনিই এ কেন্দ্রের প্রথম কণ্ঠ। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ৭.৪০ মিনিটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে তিনি ‘ডিক্লারেশন অব ওয়ার অব ইন্ডিপেন্ডেন্স’ সংবাদ আকারে প্রচার করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আগরতলা ও কলকাতায় সংবাদ লেখার দায়িত্ব পালন করেন এবং বেতারে বাংলা খবর পাঠ করতেন। মুক্তিযুদ্ধে বহুল প্রচারিত গান ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি বাংলাদেশের নাম’ এর গীতিকার তিনি।

কর্মজীবনে আবুল কাশেম সন্দ্বীপ গণশিক্ষা প্রকল্পের পরিচালক, ভিইআরসি’র (VERC- Village Education Research Centre, Savar) সমন্বয়কারী ও উপ-পরিচালক এবং গণসাহায্য সংস্থায় কাজ করেন। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন, গণচীন, কিউবা, ভারত, থাইল্যান্ড, জাপান, ফিলিপাইন, তাইপে, হংকং সফর করেন।

মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে অবদানের জন্য আবুল কাশেম সন্দ্বীপ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক, ১৯৮৬ সালে আজিজুর রহমান স্বাক্ষরতা পুরস্কার, ১৯৮৯ সালে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি, স্বাধীনতা ও স্বাক্ষরতায় অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত ১৯৯৮ সালে একুশে পদক (মরণোত্তর), ২০০২ সালে চাঁদ সুলতানা স্বাক্ষরতা পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন।

১৯৯৫ সালের ১০ ডিসেম্বর আবুল কাশেম সন্দ্বীপের মৃত্যু হয়।  [মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল]