শ্রীমানী, শ্যামাচরণ
শ্রীমানী, শ্যামাচরণ (মৃত্যু ১৮৭৫) শিল্পি ও ভারতীয় শিল্পকলার প্রথম বাঙালি শিল্প সমালোচক। তিনি ভারতীয় শিল্পকলা বিষয়ে নিয়মিত পান্ডিত্যপূর্ণ বক্তৃতা প্রদান ও শিল্পকলা বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা করেন, যা ভারতীয় পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীতে নিয়মিত প্রকাশিত হয়। তিনি কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট অ্যান্ড ক্রাফট স্কুলের পরিচালক হেনরী হোভার লক-এর প্রথমদিককার ছাত্র। শ্যামাচরণ কাঠ খোদাই, লিথোগ্রাফি ও জ্যামিতিক রেখাঙ্কনে পারদর্শী ছিলেন। এজন্য ছাত্রাবস্থাতেই লক তাঁকে ১৮৬৪ সালে তাঁর স্কুলে জ্যামিতিক রেখাঙ্কনের শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করেন।
১৮৭২ সালে নবগোপাল মিত্র ন্যাশনাল আর্ট স্কুল চালু করলে লকের অনুমতি নিয়ে তিনি সেখানে চারু ও মূর্তিকলার শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এ সময় তিনি নবগোপাল মিত্র ও অপরাপর স্বদেশী নেতৃবৃন্দের আয়োজিত হিন্দু মেলা প্রদর্শনীর ব্যাপারে সহযোগিতা করেন।
শ্রীমানী রচিত সুকুমার শিল্পের উৎপত্তি ও আর্য জাতির শিল্পচাতুরী নামক গ্রন্থটি ১৮৭৪ সালে প্রকাশিত হলে তিনি খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করেন। এ গ্রন্থের মাধ্যমে তিনি ভারতীয় শিল্পিদের পাশ্চাত্য শিল্পকলার অন্ধ অনুকরণ থেকে বিরত থাকা এবং ভারতীয় শিল্পকলার প্রতি মনোনিবেশ করার উদাত্ত আহবান জানান। গ্রন্থটি সমসাময়িক পত্র-পত্রিকায় প্রশংসিত হয় এবং বিদগ্ধ মহলের সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
গ্রন্থটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর উভয়েই সাদরে গ্রহণ করেন। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্যামাচরণ শ্রীমানীর এতই গুণমুগ্ধ ছিলেন যে, শ্যামাচরণের মৃত্যুর দীর্ঘ তিরিশ বছর পরও আর্ট স্কুলের ছাত্রদের সভায় তাঁর বক্তৃতায় শ্যামাচরণকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শিল্পি ও শিল্প সমালোচক ছাড়াও স্বাদেশিকতার জন্যও শ্যামাচরণ শ্রীমানী খ্যাতি অর্জন করেন। [নাজমা খান মজলিস]