শ্যামসিদ্ধি মঠ
শ্যামসিদ্ধি মঠ মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার অধীনে শ্রীনগর বাজারের পশ্চিমদিকে শ্যামসিদ্ধি গ্রামে অবস্থিত। মঠটির দক্ষিণদিকের প্রবেশদ্বারের উপর নিবদ্ধ একটি বাংলা শিলালিপির তথ্যানুযায়ী বাংলা ১২৪৩ সাল, ১৭৫৪ শকাব্দে (১৮৩৬ খ্রি) জনৈক শম্ভুনাথ মজুমদার এর নির্মাতা।
মঠটি বর্গাকার, বাইরের দিকে এর প্রতিবাহুর পরিমাপ ৬ মিটার এবং দেয়ালগুলি ১ মিটার প্রশস্ত। ইটের তৈরী প্রায় ২০ মিটার উঁচু মঠটি ১.২০ মিটার উঁচু একটি প্লাটফর্মের উপর দাঁড়িয়ে আছে। মঠটি তিনটি স্তরে বিভক্ত। নিচের অংশটি মূল গর্ভগৃহ। এর দক্ষিণ দিকে কৌণিক খিলান দ্বারা তৈরী একটি প্রবেশদ্বার আছে, উভয়পাশে রয়েছে আয়তাকার প্যানেল; পক্ষান্তরে অন্য তিনদিকের প্রতি দিকের দেয়াল পলেস্তরায় তিনটি করে প্যানেল ধারণ করে আছে, এদের মধ্যে মাঝেরটি পাশের দুটি থেকে বড়। চার দিকেই সরদল (lintel) স্তরের উপর একটির উপর আরেকটি করে মোট অর্ধবৃত্তাকার খিলান নকশা রয়েছে। এগুলি একটি বড় অর্ধবৃত্তাকার খিলানের নিচে আয়তাকার ফ্রেমে স্থাপিত। ছোট খিলানটির মধ্যে একটি সূর্যনকশা অংকিত রয়েছে।
সবগুলি দেয়ালই মূলত পলেস্তরা করা ছিল, কিন্তু বর্তমানে এগুলি বহুলাংশে ক্ষতিগ্রস্ত। গর্ভগৃহটি একটি গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত, যার উপর ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়া শিখরটির ভিত মঠের দ্বিতীয় স্তরে অষ্টকোণাকার আকৃতিতে রুপান্তরিত হয়েছে। অভ্যন্তরভাগে গম্বুজটি বহু খাঁজবিশিষ্ট খিলানের স্কুইঞ্চের সমর্থনে তৈরী। পক্ষান্তরে পাশের দেয়ালগুলি অলঙ্কৃতি খিলান প্যানেলে চিত্রিত। এই খিলান প্যানেল ও কোণার খিলানগুলির উপরে মেজলিয়ান চিত্রায়ণ করা হয়েছে। গম্বুজের ভেতরের দিকে এর ভিত দুসারি ফুলেল বন্ধনী দ্বারা অলংকৃত।
অষ্টকোণাকার দ্বিতীয় স্তরের আটকোণে আটটি নিমগ্নস্তম্ভ রয়েছে এবং প্রত্যেক দিকের বড় আয়তাকার অংশটি বদ্ধ ঝাপসহ বড় জানালা প্যানেল দ্বারা অলংকৃত। জানালা প্যানেলের উপরে চলমান প্যানেলগুলি আটদিক ঘিরেই পরপর একটি করে একগুচ্ছ নাগমুন্ডু বা ফুল-পাতার নকশা ধারণ করে রয়েছে। আট দিকের প্রতিটির উপরে বক্রচালা অলঙ্করণ আছে, যার উপর থেকেই মঠের সবচেয়ে উপরের স্তর ক্রমশ সরু হয়ে উপরে উঠে গেছে। শিখরটির শীর্ষ কলস ফিনিয়ালে পরিশোভিত ছিল; বর্তমানে বিলুপ্ত, কিন্তু একটি লোহার ত্রিশূল এখনও দাঁড়িয়ে আছে।
এই মঠ একশিখর রীতির মঠ, যেটিতে ধারাবাহিকভাবে উল্লম্ব বক্র মোন্ডিং-এর পুনরাবৃত্তি রয়েছে। এদিক দিয়ে সোনারঙ মন্দিরগুলির সাথে এটি সাদৃশ্যপূর্ণ। [মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন]