শেরপুর সদর উপজেলা

শেরপুর সদর উপজেলা (শেরপুর জেলা)  আয়তন: ৩৭২.৮৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৫৫´ থেকে ২৫°০৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫৩´ থেকে ৯০°০৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে শ্রীবর্দী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলা, দক্ষিণে জামালপুর সদর উপজেলা, পূর্বে নকলা উপজেলা, পশ্চিমে ইসলামপুর ও মেলান্দহ উপজেলা।

জনসংখ্যা ৪৯৭১৭৯; পুরুষ ২৫০৩৭৬, মহিলা ২৪৬৮০৩। মুসলিম ৪৮৩৫০১, হিন্দু ১২৯২৩, বৌদ্ধ ২৮, খ্রিস্টান ৫৫৭ এবং অন্যান্য ১৭০।

জলাশয় প্রধান নদ-নদী: পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, মৃগী, দশহানি। ইশলি বিল, বুরলা বিল, মাউসি বিল, হাপনাই বিল, বারবিলা বিল, ধলা বিল, টাকি বিল, কালডাঙ্গের বিল, নিশলা বিল, রেওয়া বিল, দুবলাকুরি বিল ও কাটাখালী খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন শেরপুর সদর থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৪ ৯৬ ১৮৮ ৯৭৯৭৯ ৩৯৯২০০ ১৩৩৩ ৫৬.২ ৩১.৭
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২৩.৪০ ৪৬ ৯৭৯৭৯ ৪১৮৭ ৫৬.২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কামারিয়া ৬৭ ১০১৫৬ ১৭৪৪২ ১৭৩১৫ ৩৫.৪
কামারের চর ৬১ ৬৬৬৬ ১৩০৭৮ ১২৭২০ ২৭.২
গাজীর খামার ৫৪ ৪১৭৫ ১০৬২৯ ১০৮৯৫ ৩৩.৫
চর পক্ষীমারী ৩৩ ৫৩৮১ ১৬০২১ ১৫৩৭৪ ২৭.৩
চর মুচারিয়া ২৭ ১০৯৮৭ ১৫৪৮৩ ১৫৫১০ ৩০.৯
চর শেরপুর ৪০ ৭৪১১ ১৭২০৬ ১৭০৮৭ ২৫.০
ধলা ৪৭ ৪০৫৯ ৯৬৭৭ ৯৪০৩ ৩৫.৯
পাকুরিয়া ৮১ ৬৮০৭ ১৮৬৯৩ ১৮৬৪৭ ৩০.০
বেতমারী ঘুঘুরাকান্দি ১৫ ৬৫৭১ ১২০৬৬ ১২০০৩ ৩১.১
বালাইরচর ১৩ ৫৯৩৭ ১৭২৭৯ ১৭০৪৬ ২৯.৫
বাজিতখিলা ১১ ৩৮৫৩ ১১৯০২ ১১৭৫৯ ৩৩.৬
ভাতশালা ২০ ৬২৪৩ ১৬৯৩৩ ১৬৫৬৮ ৩৮.৩
রৌহা ৮৮ ৩৬৪৭ ৬৯৬৯ ৭০৯৯ ৩৯.১
লক্ষ্মণপুর ৭৪ ৪২৯৬ ১৭৩৭৬ ১৭০২০ ৩৩.০

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ হযরত শাহ্ কামালের (রঃ) মাযার (১৬৪৪), মাইসাহেবা মসজিদ (১৮৬১), মোগলবাড়ি ও কাজীগলী মসজিদ, নাটমন্দির (ঊনবিংশ শতকে চীনা স্থাপত্য রীতিতে কারুকার্যপূর্ণ কাঠের তৈরি), রঘুনাথ জিউর মন্দির (১৭৭১)।

ঐতিহাসিক ঘটনা এ উপজেলার মুসলমান প্রজাদের উপর হিন্দু জমিদারদের অত্যাচার ও অবিচারের প্রতিবাদে কামারেরচর এলাকায় খোশ মামুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৯১৪ ও ১৯১৭ সালে কৃষক-প্রজা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর এ উপজেলার সূর্যদী গ্রামে পাকসেনারা ৫২ জন লোককে হত্যা করে। এই হত্যাকা-ের অব্যবহিত পূর্বে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর মধ্যে একটি সম্মুখয্দ্ধু হয়। এছাড়াও এ সময় পাকবাহিনী এ এলাকায় ব্যাপক হত্যা, লুন্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে। ৪ ডিসেম্বর শেরপুরে পাকবাহিনীর সঙ্গে যে যুদ্ধ হয় তাতে ১৬০ জন পাকসেনা আত্মসমর্পণ করে। উপজেলার গৃদনারায়ণপুর ও শেরীব্রিজ সংলগ্ন শেরী শ্মশান এলাকায় ২টি বধ্যভূমি রয়েছে; মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্টেডিয়াম নামে ১টি স্টেডিয়াম নির্মিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন শেরপুর সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৫৩৯, মন্দির ২৪, গির্জা ১, মাযার ২, মঠ ৬, তীর্থস্থান ১ (ব্রহ্মপুত্র স্নানতীর্থ)। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: মাইসাহেবা জামে মসজিদ, খরমপুর জামে মসজিদ, তেরাবাজার জামে মসজিদ, হযরত শাহ্ কামালের (র:) মাযার, রঘুনাথ জিউর মন্দির, নয়আনী বাজার কালীমন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৬.৭%; পুরুষ ৩৯.২%, মহিলা ৩৪.৩%। কলেজ ৬, সরকারি টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ৩, সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ১, কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৮৬, কিন্ডার গার্টেন ৫৭, মাদ্রাসা ৭২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শেরপুর সরকারি কলেজ (১৯৬৪), ওমরপুর সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৭২), টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ (২০০১), কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (১৯৫৭), শেরপুর সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমি (১৮৮৭), গোবিন্দপুর পিস মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট (১৯১৮), সাপমারী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৭), যোগিনীমুরা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১২), শেরপুর জিকে পাইলট হাইস্কুল (১৯১৯), শেরপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), শেরপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (২০০৪), জামিয়া সিদ্দীকিয়া তেরাবাজার মাদ্রাসা (১৯৭৮), ইদ্রিসিয়া আলীম মাদ্রাসা (১৯৯১)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: ঘটনা; সাপ্তাহিক: শেরপুর (১৯৮৬), দশকাহনিয়া (১৯৯১), চলতি খবর (১৯৯১); ত্রৈমাসিক: রংধনু ভুবন (২০০৫); সাময়িকী: সাহিত্যলোক, আড্ডা, বর্ষাতি; অবলুপ্ত: মাসিক বিদ্যোন্নতি সাধিনী (১৮৬৫), সাপ্তাহিক চারুবার্তা (১৮৮১), সাপ্তাহিক বিজ্ঞাপনী, সংস্কৃত সঞ্জীবনী, প্রবাহ, মানুষ থেকে মানুষ, সঞ্চরণ, অঙ্গন, নন্দিত নবীন, ঘোষণায় আমরা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৭, প্রেসক্লাব ১, ক্লাব ১২৪, মহিলা সংগঠন ৪৫১, নাট্যদল ১৫, স্টেডিয়াম ১, সিনেমা হল ৬, খেলার মাঠ ৭।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৮.২৮%, অকৃষি শ্রমিক ৪.২০%, শিল্প ১.৪২%, ব্যবসা ১৩.১৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৪৭%, চাকরি ৫.৪০%, নির্মাণ ১.৪৩%, ধর্মীয় সেবা ০.১৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৫% এবং অন্যান্য ১১.২৯%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৩.৫৮%, ভূমিহীন ৪৬.৪২%। শহরে ৩৩.৩০% এবং গ্রামে ৫৭.৫৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, ডাল, সরিষা, আলু, বাঁশ, মিষ্টি আলু, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  বিভিন্ন জাতের ধান, আখ, অড়হর, কালাই, তিল, তিসি, কাউন, যব।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কলা, পেঁপে, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, নারিকেল, জামরুল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ৩১, হাঁস-মুরগি ৫৭।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৯২.৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৮১.৯১ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, সোয়ারী, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা চালকল, ময়দাকল, তেলকল, বিড়ি কারখানা, পলিথিন কারখানা, ছাপাখানা।

কুটিরশিল্প মৃৎশিল্প, বুনন শিল্প, দারুশিল্প, সেলাই কাজ, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩৮, মেলা ১০। নয়আনী বাজার ও কামারেরচর বাজার এবং বারুণী তিথি মেলা, বাসন্তী অষ্টমী তিথি মেলা, রাম নবমীতে শেরী অষ্টমী তলা মেলা, গোপীনাথগঞ্জের চৈত্র সংক্রান্তির মেলা, পুরাতন গরুহাটিতে চরকের মেলা, পৌষ সংক্রান্তির মেলা, নয়ানী বাজারে অষ্টমীর মেলা ও কালীবাড়ি রথের মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য চাল, পাট, বাঁশ, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৬.৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৯%, ট্যাপ ১.১% এবং অন্যান্য ৩.০%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪১.৭% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৫.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১২.৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা সদর হাসপাতাল ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩, চক্ষু হাসপাতাল ১, ডায়াবেটিক সেন্টার ১, গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালিত চিকিৎসা কেন্দ্র ৩, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১৩, মাতৃসদন কেন্দ্র ১, পারিবারিক স্বাস্থ্য ক্লিনিক ১, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১৫, ক্লিনিক ৩, পশু হাসপাতাল ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯১৮ সালের ভূমিকম্পে এ উপজেলার ঘরবাড়ি ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়াও ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে এ উপজেলার বহু লোক প্রাণ হারায়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, সেন্টার ফর এডভান্সমেন্ট প্রোগ্রাম, রুরাল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট।  [সাকিল আহম্মেদ শাহরিয়ার মিল্টন]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; শেরপুর সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।