শুল্ক, আবগারি ও মূসক আপিল ট্রাইব্যুনাল
শুল্ক, আবগারি ও মূসক আপিল ট্রাইব্যুনাল ১৯৯৫ সালে বহিঃশুল্ক আইন ১৯৬৯-এর অধীনে গঠিত হয়েছে এবং ১ অক্টোবর ১৯৯৫ সালে কার্যকর হয়েছে। এর আগে বহিঃশুল্ক নির্ধারণ-সংক্রান্ত বিষয়ে সর্বোচ্চ আপিল কর্তৃপক্ষ ছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তখন বহিঃশুল্ক সমাহর্তার (বর্তমান কমিশনার) কোন সিদ্ধান্ত বা আদেশ দ্বারা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে উক্ত সিদ্ধান্ত বা আদেশের তারিখ থেকে তিন মাসের মধ্যে বোর্ডের নিকট আপিল করতে হতো। অন্য বহিঃশুল্ক কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত বা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার কর্তৃপক্ষ ছিল বহিঃশুল্ক ও আবগারি সমাহর্তা/কমিশনার (আপিল)। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বাইরে হাইকোর্ট ছাড়া আপিলের আর কোন জায়গা ছিল না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের স্বাভাবিক নির্বাহী কাজের উচ্চচাপের কারণে আপিল মামলার নিষ্পত্তি যথাসময়ে হয়ে উঠত না। এ সমস্যার সমাধান করতে শুল্ক, আবগারি ও মূসক আপিল ট্রাইব্যুনাল সৃষ্টি করা হয়েছে। এই ট্রাইব্যুনালের প্রাথমিক কাজই হলো বহিঃশুল্ক, আবগারি শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক) সংক্রান্ত বিরোধের দ্রুত নিষ্পত্তি করা। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে ট্রাইব্যুনালের রায়ের আগে বহিঃশুল্ক, আবগারি ও মূসক মামলাসমূহ কোন আদালতে উত্থাপন করা যাবে না। ট্রাইবুনাল আপিল করার পূর্বে শর্ত মোতাবেক সরকারি তোষাখানায় অ-দেয় করের অর্থাৎ যে কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে তার ১০% এবং শাস্তিস্বরূপ কর যোগ্য আয়ের (যে কর ফাঁকি দেওয়া হয়নি) ১০% অতিরিক্ত কর প্রদানে বাধ্য থাকবে।
ট্রাইব্যুনাল কারিগরি ও বিচারিক এই দুই ধরনের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত এবং সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে সরকার ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেন। কারিগরি সদস্যকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য হতে হবে অথবা বহিঃশুল্ক ও আবগারি কমিশনার হিসেবে কমিশনার পদে কমপক্ষে তার দুই বৎসরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বিচারিক সদস্যকে কমপক্ষে দশ বছর জেলা বা দায়রা বিচারক হিসেবে আসীন থাকতে হবে অথবা তাকে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস-এর (বিচার) সদস্য হতে হবে এবং বেতন ক্রমের নির্বাচিত পর্যায়ে অর্জিত বেতনে তাকে কমপক্ষে তিন বছর কোন বিচারক পদে আসীন থাকতে হবে, অথবা তাকে জেলা ও দায়রা বিচারকের আদালতের নিচে নয় এমন আদালতে কমপক্ষে দশ বৎসর যাবৎ অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত থাকতে হবে। ট্রাইব্যুনালের সর্বমোট জনবল সংখ্যা ৩২, যার মধ্যে ৫ জন প্রথম শ্রেণির, একজন দ্বিতীয় শ্রেণির, ১৯ জন তৃতীয় শ্রেণির এবং ৭ জন চতুর্থ শ্রেণির।
ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রামের আপিল কমিশনারেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা প্রয়োগ ও কর্মকান্ড পরিচালিত হয় প্রেসিডেন্ট কর্তৃক গঠিত বেঞ্চের মাধ্যমে। বেঞ্চ সাধারণত একজন কারিগরি সদস্য ও একজন বিচারিক সদস্য নিয়ে গঠিত হয়। ট্রাইব্যুনাল সদস্যদের সংখ্যাধিক্যের মতামতের ভিত্তিতে বেঞ্চের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বহিঃশুল্ক কমিশনার অথবা করদাতা-পক্ষ ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে উক্ত আদেশের বিজ্ঞপ্তি জারির ৬০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে আপিল করতে পারবে। [স্বপন কুমার বালা]