শিক্ষা প্রশাসন
শিক্ষা প্রশাসন শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার কাজে বর্তমানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ২টি প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পালন করছে। এ দুটি হলো শিক্ষা মন্ত্রণালয় (MOE) এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ (PMED)। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে এমওই ও পিএমইডি-র আওতায় তিন ধরনের সংস্থা আছে। সংস্থাগুলি হচ্ছে অধিদপ্তর, পেশাগত সংস্থা এবং আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৪টি অধিদপ্তর/বিভাগ রয়েছে: ক. মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (DSHE), খ. কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর (DTE), গ. পরিদর্শন ও অডিট অধিদপ্তর (DIA), এবং ঘ. ফ্যাসিলিটিজ বিভাগ (FD)। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগের অধীনে দুটি অধিদপ্তর আছে। এগুলি হচ্ছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (DPE) এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদপ্তর (DNFE)। শিক্ষা প্রশাসনের তিনটি পেশাগত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে, ক. জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমী (NAEM), খ. বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (BANBEIS) এবং গ. জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমী (NAPE)। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কয়েকটি আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলি হচ্ছে, ক. জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (NCTB), খ. মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (BISE), গ. কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (TEB), ঘ. মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (MEB), ঙ. বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (UGC) এবং চ. বাংলাদেশ কারিগরি ইনস্টিটিউট পরিষদ (BIT)।
ইনস্টিটিউশন বা ক্ষুদ্র পর্যায়ে, ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনা কমিটি বা পরিচালনা পর্ষদ এবং ইনস্টিটিউটের প্রধানগণ স্ব স্ব ইনস্টিটিউটের প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
আনুষ্ঠানিক শিক্ষা মোটামুটি ৩টি ধাপে সমাপ্ত হয় প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ। প্রাথমিক শিক্ষা ৫ বছরের (গ্রেড ১ থেকে ৫), মাধ্যমিক শিক্ষা ৭ বছরের (গ্রেড ৬ থেকে ১২) এবং উচ্চ শিক্ষা ২ থেকে ৫ বছরের (গ্রেড ১৩ এবং তদূর্ধ্ব) হয়ে থাকে। মাধ্যমিক ধাপকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়: নিম্ন মাধ্যমিক (গ্রেড ৬ থেকে ৮), মাধ্যমিক (গ্রেড ৯ ও ১০) এবং উচ্চ মাধ্যমিক (গ্রেড ১১ ও ১২)। গ্রেড ১২ শেষ করার পর স্নাতক পর্যায়ে সাধারণ (পাস) ডিগ্রির জন্য ৩ বছর, অনার্স ডিগ্রির জন্য ৪ বছর এবং মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য এক বছর সময় লাগে। উচ্চতর ডিগ্রির (এম.এস/ এম.ফিল/ পিএইচ.ডি) জন্য ন্যূনপক্ষে ২ বছর সময় লাগে।
সাধারণ শিক্ষার সমান্তরালে ইসলাম ধর্মীয় বা মাদ্রাসা শিক্ষার একটি ধারা বিদ্যমান। এর ৫টি ধাপ রয়েছে: ৫ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা (এবতেদায়ি), ৫ বছর মেয়াদি মাধ্যমিক শিক্ষা (দাখিল), ২ বছর মেয়াদি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা (আলিম), ২ বছর মেয়াদি ব্যাচেলর (পাস) ডিগ্রি (ফাজিল), এবং ২ বছর মেয়াদি মাস্টার্স ডিগ্রি (কামিল)। দাখিল ও আলিম পরীক্ষাসমূহকে সাধারণ শিক্ষার এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি পরীক্ষার সমমানের ধরা হয়। ফাজিল ও কামিলকে এখনও সাধারণ শিক্ষাধারার স্নাতক (পাস) ও মাস্টার ডিগ্রির সমমানের হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় নি। শিক্ষার অন্যান্য ধারাগুলি হচ্ছে: কারিগারি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা, প্রকৌশল শিক্ষা, কৃষি শিক্ষা, চিকিৎসা শিক্ষা, আইন শিক্ষা এবং ব্যবসায় শিক্ষা। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার তিনটি পর্যায় রয়েছে: ১. গ্রেড ৮-এর পরে এক থেকে ২ বছরের সার্টিফিকেট পর্যায়; ২. এস.এস.সি পাসের পর ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা পর্যায়, এবং ৩. এইচ.এস.সি পাসের পর ৪ বছরের স্নাতক পর্যায়। প্রকৌশল, কৃষি, চিকিৎসা, ব্যবসায় এবং আইন বিষয়ক শিক্ষাসমূহ এইচ.এস.সি পাসের পর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের।
সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রশাসন এবং ব্যবস্থাপনার জন্য ১৯৯২ সালের আগস্ট মাসে মন্ত্রণালয়ের মর্যাদাসম্পন্ন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ সৃষ্টি করা হয়। এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা দেখাশোনা করত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা (বাধ্যতামূলক) আইন, ১৯৯০ ও উপানুষ্ঠানিক ও গণশিক্ষা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘সবার জন্য শিক্ষা’ লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্য সাধনে প্রাথমিক শিক্ষাখাতে কাজের পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে যায়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষার গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার বিবেচনা করে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনার গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ পিএমইডি সৃষ্টি করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নের নীতিমালা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের দায়িত্ব এই বিভাগের ওপর ন্যস্ত করা হয়। এর পাশাপাশি, এই বিভাগ অধীনস্থ অধিদপ্তরসমূহের কাজকর্মের নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান, অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সমন্বয় সাধনের দায়িত্ব পালন করে থাকে। মন্ত্রিসভার একজন সদস্য (সাধারণত শিক্ষামন্ত্রী) পিএমইডি-র প্রধান নির্বাহী। অনেক সময় একজন উপ বা প্রতিমন্ত্রীকে এককভাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। একজন সচিব, একজন অতিরিক্ত সচিব, দুইজন যুগ্মসচিব এবং অন্যান্য সাহায্যকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মন্ত্রীকে তার দায়িত্ব পালনে সহায়তা করে থাকেন।
১৯৮১ সালের ১ মার্চ সরকারের পরিকল্পনা, কর্মসূচি ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (DPE) প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পূর্বে শিক্ষা অধিদপ্তর প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত গোটা শিক্ষাব্যবস্থা তত্ত্বাবধান করত। এর প্রধান ছিলেন ডাইরেক্টর অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন। প্রাথমিক শিক্ষার প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনা কাঠামোকে শক্তিশালীকরণের প্রথম ধাপ ছিল শিক্ষা অধিদপ্তরকে দ্বিধাবিভক্ত এবং প্রাথমিক শিক্ষার জন্য একটি স্বাধীন অধিদপ্তরের সৃষ্টি করা। একজন মহাপরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রধান থাকেন। এর চারটি কার্যকরী শাখা রয়েছে: প্রশাসনিক শাখা, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখা, প্রশিক্ষণ শাখা এবং মনিটরিং ও মূল্যায়ন শাখা। প্রতিটি শাখার একজন করে পরিচালক থাকেন। তাকে সহায়তা করার জন্য কয়েকজন উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, গবেষণা কর্মকর্তা, শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং অন্যান্য সাহায্যকারী কর্মচারী থাকেন। এই অধিদপ্তরের বিভাগ, জেলা এবং থানা পর্যায়ে মাঠ কর্মকর্তা রয়েছে। প্রতিটি থানায় প্রাথমিক বিদ্যালয় তত্ত্বাবধান ও মনিটরিং করার জন্য কয়েকজন থানা শিক্ষা কর্মকর্তা আছেন। স্কুল পর্যায়ে প্রতিটি স্কুলের জন্য একটি করে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি আছে।
প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন বিষয় দেখাশোনার জন্য জেলা ও থানা পর্যায়ে কমিটি রয়েছে। এছাড়া, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য পিএমইডি-র অধীনে একটি আলাদা বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন মনিটরিং ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। একজন মহাপরিচালক এই ইউনিটের প্রধান।
জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি একটি শীর্ষ প্রশিক্ষণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট। প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন এই কেন্দ্রের দায়িত্ব। এই একাডেমী পিটিআই ইন্সট্রাক্টর এবং প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য চাকরিকালীন প্রশিক্ষণ ও সতেজীকরণ (Refresher) কোর্স পরিচালনা করে থাকে। প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও পরিচালনার জন্য সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন কোর্সের পাঠক্রম তৈরির দায়িত্বও এই একাডেমি পালন করে থাকে।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদপ্তর (DNFE) পিএমইডি-র অধীনে আরেকটি অধিদপ্তর। আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার পরিপূরক ও সম্পূরক হিসেবে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাকে (NFE) প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ঘটনা বাংলাদেশে একটি সাম্প্রতিক বিষয়। উপানুষ্ঠানিক খাতে একটি অবকাঠামো তৈরির জন্য ১৯৯১ সালে এটি সমন্বিত উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচি (INFEP) নামে একটি প্রকল্পের অধীনে কাজ শুরু করে। ইনফেপের উদ্দেশ্যাবলি ছিল: ক. প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি বৃদ্ধি এবং তা ধরে রাখার উদ্দেশ্যে ৪-৫ বছরের শিশুদের জন্য একটি সংগঠিত বুনিয়াদি কোর্স প্রবর্তন; খ. ৬ থেকে ১০ বছরের বিদ্যালয়-বহির্ভূত এবং ঝরে-পড়া শিশুরা যাতে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ফিরে আসে সেজন্য একটি মৌলিক শিক্ষা কর্মসূচি গড়ে তোলা; গ. প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেনি এ ধরনের ১১-১৪ বছরের বালক-বালিকাদের জন্য একটি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন; ঘ. ১৫-৩৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়স্কদের জন্য কার্যকরী সাক্ষরতা কোর্স চালু; এবং ঙ. সাক্ষরতা পরবর্তী শিক্ষা কর্মসূচি প্রণয়নের মাধ্যমে নব্য সাক্ষরদের অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা সংহত করা।
ডিএনএফই-র প্রধান হচ্ছেন মহাপরিচালক। তাকে সহায়তা করার জন্য কয়েকজন পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক এবং অন্যান্য কর্মচারী রয়েছেন। বাংলাদেশের মাধ্যমিক, উচ্চ ও কারিগরি শিক্ষার নীতিমালা, পরিকল্পনা প্রণয়ন, পরিচালনা এবং প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণের দায়-দায়িত্ব ন্যস্ত রয়েছে সর্বোচ্চ সংস্থা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর।
মন্ত্রী হচ্ছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান নির্বাহী। তাকে সহায়তা করার জন্য একজন সচিব, একজন অতিরিক্ত সচিব, কয়েকজন যুগ্ম সচিব, উপ-সচিব, সহকারী সচিব ও অন্যান্য সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাংগঠনিক কাঠামোতে একজন প্রধানের নেতৃত্বে একটি পরিকল্পনা কোষ রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা কোষ অধীনস্থ বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক দাখিলকৃত উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাবসমূহ সরকারি অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়া তৈরি ও চূড়ান্ত করে থাকে। তাছাড়া, বাংলাদেশ জাতীয় ইউনেস্কো কমিশনকে (BNCU) মন্ত্রণালয়ের সাংগঠনিক কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই সংস্থা ইউনেস্কো কর্তৃক গৃহীত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (DSHE) মাধ্যমিক, মাদ্রাসা এবং কলেজ শিক্ষার প্রশাসন দেখাশোনা ও পরিচালনার সার্বিক দায়িত্ব পালন করে। একজন মহাপরিচালক এই অধিদপ্তরের প্রধান। এই অধিদপ্তরের ৪টি শাখা রয়েছে: মহাবিদ্যালয় ও প্রশাসন শাখা, মাধ্যমিক শিক্ষা শাখা, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখা এবং প্রশিক্ষণ শাখা। প্রতিটি শাখার প্রধান হচ্ছেন একজন পরিচালক। একজন উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে একটি শারীরিক শিক্ষা শাখা রয়েছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশালে এর ৮টি আঞ্চলিক কার্যালয় আছে। প্রতিটি আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান হচ্ছেন একজন উপ-পরিচালক। তাকে সহায়তা করার জন্য একজন বিদ্যালয় পরিদর্শক, একজন বিদ্যালয় পরিদর্শিকা, একজন সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক, একজন সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শিকা এবং অন্যান্য কর্মচারী রয়েছেন। মাঠ পর্যায়ে আরও নিম্নস্তরে ৬৪টি জেলা শিক্ষা কার্যালয় আছে এবং প্রতিটি কার্যালয়ের প্রধান হচ্ছেন একজন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
মাধ্যমিক, মাদ্রাসা এবং মহাবিদ্যালয় শিক্ষার সরকারি নীতিমালা, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের সার্বিক দায়-দায়িত্ব ডিএসএইচই-এর ওপর ন্যস্ত। ডিএসএইচই-র কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে সরকারি বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় এবং মাদ্রাসার শিক্ষক ও কর্মচারীদের নিয়োগ, পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি-সংক্রান্ত কাজ, তাদের ছুটি, পেনশন মঞ্জুর, তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাজনিত ব্যবস্থা গ্রহণ, বেসরকারি বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও মাদ্রাসার জন্য দান ও অনুদান বণ্টন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ও ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনসংক্রান্ত কার্য সম্পাদন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যাদি পরিচালনা, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্ত্তত ও বাস্তবায়ন ইত্যাদি। কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে এটি মাধ্যমিক, মহাবিদ্যালয় ও মাদ্রাসা শিক্ষার সার্বিক তত্ত্বাবধান, মনিটরিং ও মূল্যায়ন করে থাকে। মাঠ পর্যায়ে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধান ও মনিটরিং করে থাকে আঞ্চলিক ও জেলা পর্যায়ের কার্যালয়গুলি। উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ সরাসরি ডিএসএইচই-এর নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা দেখাশোনা করে। ১৯৬১ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। মহাপরিচালক এই অধিদপ্তরের প্রধান এবং তাকে সহায়তা করার জন্য ৫টি শাখার ৫ জন পরিচালক রয়েছেন। শাখাগুলি হচ্ছে প্রশাসন শাখা, পরিকল্পনা শাখা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ শাখা, প্রকল্প বাস্তবায়ন শাখা এবং কর্মসূচি পরিদর্শন শাখা। পরিচালকদের অধীনে ১০ জন সহকারী পরিচালক ও অন্যান্য সহায়ক কর্মচারী রয়েছেন। দেশের চারটি বিভাগ ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও খুলনা-তে ৪টি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। প্রতিটি আঞ্চলিক কার্যালয়ে একজন আঞ্চলিক পরিদর্শক ও একজন সহকারী আঞ্চলিক পরিদর্শক রয়েছেন। ডিটিই-র অধীনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ হচ্ছে: একটি টেক্সটাইল টেকনোলজি কলেজ, ২০টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, একটি গ্লাস ও সিরামিক ইনস্টিটিউট, একটি গ্রাফিক্স আর্টস ইনস্টিটিউট, একটি সার্ভে ইনস্টিটিউট, ৫১টি ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (VTI), একটি টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (TTTC) এবং একটি ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (VTTI)। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (NCTB) দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষাক্রম তৈরি ও পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করা। প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য দেশে ৫৩টি প্রাথমিক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (PTI) রয়েছে।
পরিদর্শন ও অডিট অধিদপ্তর (DIA) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-সহায়তা হিসেবে সরকারি অনুদান রূপে প্রদত্ত বিশাল অঙ্কের অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা, শিক্ষাবিষয়ক তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন। ডিআইএ-র প্রধান হচ্ছে একজন পরিচালক, তাকে সহায়তা করেন একজন যুগ্ম পরিচালক, কয়েকজন উপ-পরিচালক, কয়েকজন পরিদর্শক, অডিটর এবং অন্যান্য সহায়ক কর্মচারী। প্রতিটি উপ-পরিচালকের অধীনে একটি করে পরিদর্শক ও অডিট দল রয়েছে। প্রতিটি দল নিয়ম করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি পরিদর্শন করে থাকে এবং তাদের হিসাবপত্র অডিট করে থাকে। তারা সঠিকভাবে হিসাব সংরক্ষণের ব্যাপারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে পরামর্শ দিয়ে থাকে। আর্থিক ব্যপারে কোন অনিয়ম ধরা পড়লে তারা তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে।
ফ্যাসিলিটিজ বিভাগ (FD) প্রকৃত অর্থে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশল শাখা। ১৯৮৬ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভবন নির্মাণ ও সংস্কার করা। ফ্যাসিলিটিজ বিভাগের প্রধান হচ্ছেন প্রধান প্রকৌশলী। কেন্দ্রে তাকে দুইজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, ৬ জন নির্বাহী প্রকৌশলী এবং সহকারী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীসহ অন্যান্য কর্মচারী সহায়তা করে থাকেন। ফ্যাসিলিটিজ বিভাগের সাংগঠনিক কাঠামো কেন্দ্র থেকে অঞ্চল, জেলা এবং থানা পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত।
১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর প্রধান হচ্ছেন একজন চেয়ারম্যান। এর দুজন পূর্ণকালীন ও ৯ জন খন্ডকালীন সদস্য রয়েছেন। এছাড়া, একজন সচিব, কয়েকজন পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক এবং অন্যান্য সহায়ক কর্মচারী রয়েছেন। সরকার বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইউজিসিকে অর্থ বরাদ্দ করে থাকে। ইউজিসি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন ও চাহিদা মোতাবেক এই অর্থ আবার পুনর্বণ্টন করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন অন্য যে কাজগুলি করে থাকে সেগুলি হচ্ছে: বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষাসংক্রান্ত চাহিদা নিরূপণ, উচ্চশিক্ষা উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন, উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারকে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন বা বিদ্যমানগুলির সম্প্রসারণের বিষয়ে পরামর্শ প্রদান।
প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের প্রধান একটি ব্যবস্থাপনা কমিটির অধীনে কাজ করে থাকেন। এই কমিটিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি (SMC) এবং কলেজের ক্ষেত্রে পরিচালনা পরিষদ (GB) বলা হয়ে থাকে। এসব কমিটির গঠনতন্ত্র, ক্ষমতা ও দায়িত্ব বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে স্ব স্ব মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, মহাবিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদ্রাসার ক্ষেত্রে মাদ্রাসা বোর্ড নিরূপণ করে। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও মাদ্রাসার) বেলায় কোন এসএমসি নেই। এগুলি সরাসরি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (DSHE) এবং এর আঞ্চলিক ও জেলা কার্যালয় কর্তৃক সরাসরি নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত কেন্দ্রাভিমুখী এবং বস্ত্ততপক্ষে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কোন ক্ষমতা বা কর্তৃত্বই নেই। এমনকি অধিদপ্তরগুলিরও কর্তৃত্ব সীমিত। সকল ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের হাতে। তবে, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রদান করে শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। [এস দোহা]