শাহবাগ থানা

শাহবাগ থানা (ঢাকা মেট্রোপলিটন)  আয়তন: ৩.৪৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৪৩´ থেকে ২৩°৪৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৩´ থেকে ৯০°২৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে রমনা থানা, দক্ষিণে চকবাজার ও বংশাল থানা, পূর্বে পল্টন থানা, পশ্চিমে কলাবাগান, নিউমার্কেট ও লালবাগ থানা।

জনসংখ্যা ৭৪১১৩; পুরুষ ৪৮৫২৭, মহিলা ২৫৫৮৬। মুসলিম ৬৮৬২৮, হিন্দু ৪৯৭২, বৌদ্ধ ২৭৫, খ্রিস্টান ২০৭ এবং অন্যান্য ৩১।

প্রশাসন রমনা থানার কিছু অংশ নিয়ে ২০০৬ সালের ৭ আগস্ট শাহবাগ থানা গঠিত হয়।

থানা
ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন মহল্লা জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
২ (আংশিক) ১৩ ৭৪১১৩ - ২১২৩৬ ৭৯.৩৯ -
ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন
ওয়ার্ড নম্বর ও ইউনিয়ন আয়তন (বর্গ কিমি) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
ওয়ার্ড নং ৫৬ (আংশিক) ২.৫৪ ২৫৫৬৯ ১২৪৭৩ ৭৪.০৬
ওয়ার্ড নং ৫৭ (আংশিক) ০.৯৫ ২২৯৫৮ ১৩১১৩ ৮৪.৭১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ হাজী শাহবাজ খান মসজিদ (১৬৭৯), মুসা খানের মসজিদ (৮ম শতক), বর্ধমান হাউস (বর্তমান বাংলা একাডেমী), জগন্নাথ হলের দক্ষিণ বাড়ি, এস এম হল, বিবি মরিয়ম কামান (১৭ শতক), ঢাকা গেইট, গুরুদুয়ারা নানক শাহী (৮ম শতক), বুড়ো শিব মন্দির, নিমতলী দেউরি (১৭৬৫-৬৬), হাইকোর্ট, কার্জন হল (১৯০৪)।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি  ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় পুলিশের গুলিতে বহুসংখ্যক ছাত্র শহীদ হন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর রমনা রেসকোর্সে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) নাগরিক সংবর্ধনা দিয়ে তাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বটতলা থেকে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণ দান করেন। ২৫ মার্চ রাতে পাকবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় বুদ্ধিজীবীদের নৃশংসভাবে হত্যা করে। ২৫-২৭ মার্চ পর্যন্ত আবাসিক হলগুলোতে পাকবাহিনীর হামলায় প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী ও কর্মচারী শহীদ হন। এসময় পাকবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ধর্মীয় স্থাপনাসমূহে ধ্বংস ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ৩ (জগন্নাথ হল, রমনা কালীবাড়ি ও রোকেয়া হল), ভাস্কর্য ৮, শহীদ মিনার ২, স্মৃতিস্তম্ভ ৪, ম্যুরাল চিত্র ১, স্মৃতি সংগ্রহশালা ২।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ১৭, মন্দির ২, উপাসনালয় ১, গুরুদুয়ারা ১, মঠ ১, মাযার ৬, ঈদগাহ ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: গোলাপ শাহ মসজিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেদ্রীয় জামে মসজিদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ, পরীবাগ মসজিদ, কাটাবন মসজিদ, জাতীয় ঈদগাহ, হাইকোর্ট মাযার, গোলাপ শাহ্র মাযার, পীর ইয়ামেনি (র) মাযার, জগন্নাথ হল উপসনালয়, গুরুদুয়ারা নানক শাহী।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৭৯.৩৯%; পুরুষ ৮৩.৭৮%, মহিলা ৭০.৯৭%। বিশ্ববিদ্যালয় ২, মেডিকেল কলেজ ২, কলেজ ৪, ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯২১), ঢাকা মেডিকেল কলেজ (১৯৪৬), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬০), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬৫), ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ (১৯৬৪), মহানগর ল’ কলেজ, সেন্ট্রাল ল’ কলেজ, নিউ রাজধানী টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৭৬), উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৫৫), সেগুনবাগিচা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৩), নীলক্ষেত উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৯৫), নীলক্ষেত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৬৮), সেগুনবাগিচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পরীবাগ আনোয়ারা সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক আমাদের সময়, উত্তরাধিকার, দৈনিক শক্তি, বাংলাদেশ সময়, অপরাধ কণ্ঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য পত্রিকা, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি পত্রিকা প্রভৃতি।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৬, লাইব্রেরি ৬, খেলার মাঠ ৯, সুইমিংপুল ১, উদ্যান ও পার্ক ৪, জাদুঘর ৩, নাট্যমঞ্চ ১, অডিটোরিয়াম ৩, সাংস্কৃতিক সংগঠন ১, স্মৃতি যাদুঘর ও সংগ্রহশালা ২, কল্যাণ সমিতি ৫। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিচার্স ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাব, ঢাকা ইউনিভার্সিটি সঙ্গীত একাডেমি উল্লেখযোগ্য।

দর্শনীয় স্থান বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা কার্জন হল (১৯০৪), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯২১), বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি (১৯৫২), বাংলা একাডেমী (১৯৫৫), সিরডাপ ভবন (১৯২০), সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ওসমানী মিলনায়তন ও উদ্যান, পুরাতন হাইকোর্ট ভবন, জাতীয় জাদুঘর (১৯১৩), মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর (১৯৯৬), তিন নেতার মাযার, ঢাকা গেইট, বিসিএস প্রশাসন একাডেমী, পান্থকুঞ্জ পার্ক, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, বাংলাদেশ টেলিগ্রাফ অ্যান্ড টেলিফোন বোর্ড, বাংলাদেশ রোডস্ অ্যান্ড হাইওয়ে ডিপার্টমেন্ট, রেলওয়ে ভবন, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, শিশু পার্ক, শিশু একাডেমী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, স্থাপত্য ভবন, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, ভাষা শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা, বাংলাদেশ সচিবালয়, কাজী নজরুল ইসলাম কমপে­ক্স ও সমাধি, ব্রিটিশ কাউন্সিল, শিক্ষা ভবন, খাদ্য অধিদপ্তর, জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, জন্ম নিবন্ধন কার্যালয়।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ০.৭৭%, অকৃষি শ্রমিক ০.৪৮%, শিল্প ১.৫৭%, ব্যবসা ২০.৩৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.১১%, নির্মাণ ০.৮৬%, চাকুরি ৫৯.৫২%, ধর্মীয় সেবা ০.১৪%, রেন্ট ও রেমিট্যান্স ১.৯৭% এবং অন্যান্য ১১.২৫%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬২.০৭%, ভূমিহীন ৩৭.৯৩%।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, নারিকেল, কলা, লিচু, জাম, পেয়ারা।

যোগাযোগ বিশেষত্ব মোট সড়ক ৪৫.৩৬ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা মুদ্রণ শিল্প, ধাতব শিল্প, পোশাক শিল্প, অটোমোবাইল কারখানা, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প হস্তশিল্প, পাথরের কাজ, কাঠের কাজ প্রভৃতি।

হাটবাজার ও মেলা পীর ইয়ামেনি মার্কেট, আজিজ সুপার মার্কেট, বঙ্গবাজার, শাহবাগ বিপনী বিতান, নাহার প­াজা, মোতালেব প­াজা, গোল্ডেন প­াজা, ফুলবাড়ীয়া সুপার মার্কেট, কাঁটাবন বাজার, আনন্দ বাজার, হাতিরপুল বাজার, এবং বৈশাখী মেলা, আন্তর্জাতিক বই মেলা, অমর একুশের বই মেলা (বাংলা একাডেমী), চারুকলা শিল্প মেলা।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   তৈরি পোশাক, ধাতব সামগ্রী প্রভৃতি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ থানার সবক’টি ওয়ার্ড বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৯৭.৩৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস ট্যাপ ৯০.৬৩%, নলকূপ ৪.৮৭%, পুকুর ০.২২% এবং অন্যান্য ৪.২৮%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ থানার ৯০.৬৪% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৭.৭৩% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১.৬৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ৫।  উল্লেখযোগ্য হাসপাতাল: ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতাল (পিজি হাসপাতাল), যক্ষা নিরাময় ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান, সচিবালয় ক্লিনিক।

এনজিও বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।  [লিলীমা আহমেদ]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।