শাহজাদপুর উপজেলা

Banglapedia admin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৭:৪৩, ১ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

শাহজাদপুর উপজেলা (সিরাজগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ৩২৪.১৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°০৪´ থেকে ২৪°২৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩১´ থেকে ৮৯°৩১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে উল্লাপাড়া ও বেলকুচি উপজেলা, দক্ষিণে বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলা, পূর্বে চৌহালী উপজেলা, পশ্চিমে ফরিদপুর (পাবনা) ও উল্লাপাড়া উপজেলা।

জনসংখ্যা ৫৬১০৭৬; পুরুষ ২৮৩৩৩০, মহিলা ২৭৭৭৪৬। মুসলিম ৫৪১২৯৭, হিন্দু ১৯৬৯২, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ১৮ এবং অন্যান্য ৬৮।

জলাশয় যমুনা, হুরাসাগর, করতোয়া, বড়াল, হুরাসাগর ও গোহালা নদী এবং পানাদহ বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন শাহজাদপুর থানা গঠিত হয় ১৮৪৫ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮২ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৩ ১৭২ ২৯১ ৭১৩৬৭ ৪৮৯৭০৯ ১৭৩১ ৪৭.৪ (২০০১) ৩৬.২
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১১.০০ (২০০১) ৩১ ৬৪৫০৭ ৪৬০৯ (২০০১) ৫৬.১
পৌরসভার বাইরে উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৩.৪৩ (২০০১) ৬৮৬০ ২১২৬ (২০০১) ২২.২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কায়েমপুর ৪৩ ৯০১২ ২২৫৪৪ ২২৬৯১ ৩৮.৫
কৈজুরী ৩৬ ৭১১৪ ২৪১৯৭ ২৩২০৭ ৩২.৯
খুকনি ৫১ ৩৫৫৯ ৩১২৬১ ২৯১৭৭ ৪৩.৯
গড়দহ ২১ ৪১২১ ১৪৮৪২ ১৪৬৪০ ৪১.৯
গালা ১৪ ৭৩৮১ ১৬৩৪১ ১৬৯৪৫ ২২.২
জালালপুর ২৯ ৪০১০ ৯৫৮২ ৯২৪৯ ২৭.৬
নরিনা ৫৮ ৩৫৬২ ১১৭০৪ ১১৮৯৯ ৪৩.৫
পোতাজিয়া ৭৩ ৮০৮৪ ১৯২১৪ ১৮৮৪২ ৪৩.১
পোরজনা ৬৫ ৬৯৪৫ ৩১৩৯০ ৩০৭৪৪ ৩১.৪
বেলতৈল ১২ ৫৬৯৮ ২০৬৯৭ ২০৫৪৭ ৩৭.৬
রূপবতী ৮০ ৭১২৯ ১৭৯৭৯ ১৮০৯৯ ৩৯.৯
হাবিবুল্লাহনগর ৮৭ ২৯২২ ১৮৫৯৬ ১৭৯৫১ ৩৮.২
সোনাতনী ৯৪ ৭৮৪৭ ১২০৬০ ১২১৭১ ১৫.১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মখদুম শাহদৌলার মাযার ও মসজিদ (ত্রয়োদশ শতাব্দী), বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাচারি বাড়ি, নবরত্ন মন্দির (পোতাজিয়া গ্রাম)।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৮৭৩ সালের প্রজা বিদ্রোহের সূতিকাগার শাহজাদপুর উপজেলা। বিপ্লবী নেতা ঈশানচন্দ্র রায় নিজ গ্রাম দৌলতপুর থেকে সিরাজগঞ্জের কৃষক বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন (১৮৭৩-১৮৭৬)। এছাড়া ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে এ উপজেলার অধিবাসীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

মুক্তিযুদ্ধ শাহজাদপুর উপজেলার ধীতপুর এবং বাঘাবাড়িতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের দুইটি বড় যুদ্ধ সংঘটিত হয়। উপজেলার অনেক মুক্তিযোদ্ধা রংপুর, যশোর, সিলেট পাবনা ও অন্যান্য স্থানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। শাহজাদপুর উপজেলা সদরে ১টি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন শাহজাদপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৫৮, মন্দির ৫৩, মাযার ২৩, তীর্থস্থান ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: শাহজাদপুর জামে মসজিদ, বদরউদ্দিনের মসজিদ, পোতাজিয়া নবরতœ মন্দির উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৮.৪%; পুরুষ ৪১.৬%, মহিলা ৩৫.১%। কলেজ ১৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৮, ভোকেশনাল ইনস্টিটিউশন ১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২১৫, কমিউনিটি বিদ্যালয় ২, মাদ্রাসা ৫৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শাহজাদপুর সরকারি কলেজ, পোরজনা মুকন্দনাথ উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮০), শাহজাদপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮২), পোতাজিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৪), সোনাতনী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৫), স্থল পাকগাশী ইন্সটিটিউশন (১৮৬৪), খাসসাতবাড়ীয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৪), জামিরতা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০০)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী মাসিক: বিবর্তন, সাহিত্য দর্পণ; অবলুপ্ত: সাপ্তাহিক গণবাংলা, সাপ্তাহিক মৌসুমী।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৫, জাদুঘর ১, সিনেমা হল ৫, নাট্যদল ১১, থিয়েটার ১, যাত্রাপার্টি ৩, মুক্তমঞ্চ ১, মহিলা সংগঠন ১১, ক্লাব ১২৭।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪২.৭৩%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৯০%, শিল্প ১৭.৪৯%, ব্যবসা ১৬.০৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৪৪%, চাকরি ৪.৭৭%, নির্মাণ ০.৯৯%, ধর্মীয় সেবা ০.২০%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৯% এবং অন্যান্য ৯.১৬%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫১.৭৮%, ভূমিহীন ৪৮.২২%। শহরে ৩৪.৩১% এবং গ্রামে ৫৪.১১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, সরিষা, ডাল, গম, পাট, আখ, মরিচ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  চীনা, কাউন, মসুর ডাল, ছোলা, তিল, তিসি, যব, মিষ্টি আলু।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, পেঁপে, পেয়ারা, নারিকেল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২৩, গবাদিপশু ৪৭৮৮, হাঁস-মুরগি ১৮৫, কৃত্রিম প্রজনন উপকেন্দ্র ১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৯৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২২ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৩৬ কিমি। বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, ডাইং ফ্যাক্টরি, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, ফ্লাওয়ার এন্ড রাইস মিল, অয়েলমিল, টেক্সটাইল মিল, বরফকল, ওয়েল্ডিং কারখানা, হিমাগার।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ, সেলাই কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৬৩, মেলা ৭। শাহজাদপুর, কৈজুরী, মুলকান্দি, শিবরামপুর, বেতকান্দি, কাশিনাথপুর বাজার ও তালগাছী গরু-ছাগলের হাট এবং বাসন্তী মেলা, দোলের মেলা ও বারুণী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  তাঁতের কাপড়।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৩.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ ঝিনুক, মুক্তা।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৪%, ট্যাপ ১.০% এবং অন্যান্য ৩.৬%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪৫.৯% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫১.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২.৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮৯৭ ও ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে এ উপজেলায় বহু লোকের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া ১৮৮৫ ও ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে এ উপজেলার ঘরবাড়ি ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৬, শিশু হাসপাতাল ১, চক্ষু হাসপাতাল ১।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, টিএমএসএস, উজ্জীবন, ব্রাস, পিপিডি।  [এ.আর সিদ্দিকী]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; শাহজাদপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।