শান্তি কমিটি
শান্তি কমিটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেশে বিরাজমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তান প্রশাসনকে সহযোগিতা করা এবং ঢাকা শহরের জনগণের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ১০ এপ্রিল ঢাকায় শান্তি কমিটি গঠিত হয়। এর আগে ৪ এপ্রিল পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির (পি.ডি.পি) প্রধান নূরুল আমীনের নেতৃত্বে দক্ষিণপন্থী ১২ জন রাজনৈতিক নেতার একটি প্রতিনিধিদল ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঢাকায় একটি নাগরিক কমিটি গঠনের প্রস্তাব পেশ করেন। প্রতিনিধিদলে ছিলেন গোলাম আযম, ফরিদ আহমদ, খাজা খয়েরউদ্দীন, নুরুজ্জামান প্রমুখ। ১০ এপ্রিল ১৪০ সদস্য বিশিষ্ট ‘ঢাকা নাগরিক কমিটি’ গঠিত হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান হন মুসলিম লীগ নেতা খাজা খয়েরউদ্দীন। নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দলের কারণে ফরিদ আহমদের নেতৃত্বে একটি অংশ মূল কমিটি থেকে বেরিয়ে এসে ‘স্টিয়ারিং কমিটি’ গঠন করে। এই স্টিয়ারিং কমিটি পরে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটির রূপ নেয় এবং এর নামকরণ হয় পূর্ব পাকিস্তান শান্তি ও কল্যাণ কাউন্সিল। এ কাউন্সিলের প্রধান হন ফরিদ আহমদ এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন পি.ডি.পি নেতা নূরুজ্জামান। সদস্যদের মধ্যে ছিলেন মওলানা আবদুল মান্নান, জুলমত আলী খান, গোলাম আযম, মাহমুদ আলী, ইউসুফ আলী চৌধুরী (মোহন মিয়া), সৈয়দ আজিজুল হক (নান্না মিয়া), পীর মোহসেন উদ্দিন (দুদু মিয়া), রাজা ত্রিদিব রায়, এ.এস.এম সোলায়মান।
শান্তি কমিটি গঠনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীকে সাহায্য করা এবং দেশকে বিচ্ছিন্নতা থেকে রক্ষা করে পাকিস্তানি হুকুমত্ বজায় রাখা। ক্রমান্বয়ে সারা দেশে শান্তি কমিটি গঠিত হয়। স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীরা এসব কমিটি গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্নভাবে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক-বাহিনীর আত্মসমর্পণের সঙ্গে সঙ্গে শান্তি কমিটির বিলুপ্তি ঘটে। [মুনতাসীর মামুন]