শান্তরক্ষিত

শান্তরক্ষিত (আনু. ৭০৫-৭৬৫)  বৌদ্ধ পন্ডিত। তিনি ‘শান্তি রক্ষিত’ নামেও পরিচিত। ঢাকা জেলার জাহোরে/সাহোরে (সম্ভবত বর্তমান সাভারে), মতান্তরে গৌড়বঙ্গে এক রাজপরিবারে তাঁর জন্ম। তিনি ছিলেন বজ্রযানী বৌদ্ধাচার্যদের অন্যতম। পালবংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপালের রাজত্বকালে তাঁর জন্ম এবং দ্বিতীয় নৃপতি ধর্মপালের রাজত্বকালে তাঁর মৃত্যু হয় বলে মনে করা হয়। তিববতি ঐতিহ্য অনুসারে তাঁর প্রণীত গ্রন্থসংখ্যা এগারো। সেগুলির মধ্যে অষ্ট তথাগত স্তোত্র, বজ্রধর সংগীত ভগবতস্তোত্র টীকা, তত্ত্বসংগ্রহ কারিকা, হেবজ্র উদ্ভব কুরকুলাহ পঞ্চ মহোপদেশ, তথাসিদ্ধি নাম প্রকরণ, বিভংগ পঞ্জিকা, মধ্যমক অলংকার কারিকা, ভাদন্যায় ভিত্তি, দন্ড হস্তলেখা প্রভৃতি প্রধান। এগুলির মধ্যে একত্রিশটি অধ্যায়ে রচিত তত্ত্বসংগ্রহ কারিকায় তিনি  উপনিষদ প্রভৃতি ধর্মগ্রন্থের আলোচনা ও মতামত খন্ডন করে বৌদ্ধধর্মের অনাত্মবাদ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর গ্রন্থগুলি তিববতি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

শান্তরক্ষিত ধীশক্তি, পান্ডিত্য ও নিষ্ঠার গুণে নালন্দার অধ্যাপকদের মধ্যে যথেষ্ট সম্মান অর্জন করেন। তিনি সমসাময়িক বৌদ্ধ ধর্মানুরাগী তিববতরাজ খ্রিং সং লদে বৎসান কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে তিববতে যান এবং পদ্মসম্ভারের সহায়তায় সেখানে বৌদ্ধধর্মের সংস্কারসহ লামা সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন। এজন্য তিববতীয়রা তাঁকে ‘আচার্য বোধিসত্ত্ব’ নামে সম্বোধন করত। তিনি রাজধানী লাসায় নব প্রতিষ্ঠিত বস্ময়া বিহারের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই বিহারে থেকে ধর্মপ্রচার করেন।  [ভিক্ষু সুনীথানন্দ]