শনিবারের চিঠি

শনিবারের চিঠি  স্যাটায়ার ধর্মী সাহিত্যিক পত্রিকা। প্রথম দিকে এটি সাপ্তাহিক পরে মাসিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল হাস্য কৌতুকের মাধ্যমে সমসাময়িক সাহিত্য-চর্চাকে আক্রমণ করা। প্রথম প্রকাশ ১০ শ্রাবণ ১৩৩১ সন। আকার ডবল ক্রাউন, চবিবশ পৃষ্ঠা এবং অনুরূপ আকারের খামে মোড়া। খামে চাবুক প্রহাররত এক বীর পুরুষের মূর্তি, সবুজ কালিতে ছাপা। যোগানন্দ দাস ছিলেন একাধারে উক্ত পত্রিকার প্রথম সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর। মূল্য প্রতি সংখ্যা এক আনা, বার্ষিক ডাকমাশুলসহ তিন টাকা।

শনিবারের চিঠির প্রায় সব রচনা বেনামে প্রকাশিত হয়েছে। লেখকদের মধ্যে উলে­খযোগ্য ছিলেন,  অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রামানন্দ চট্টপাধ্যায়,  সুনীতিকুমার চট্টপাধ্যায়, অশোক চট্টপাধ্যায়, সুবিমল রায়,  মোহিতলাল মজুমদার, সজনীকান্ত দাস, যোগানন্দ দাস, নীরদচন্দ্র চৌধুরী প্রমুখ।

সাপ্তাহিক শানিবারের চিঠির ২৭তম সংখ্যা ১৩৩১ সনের ৯ ফাল্গুনে বের হওয়ার পর পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। ১৩৩৩ সনে পত্রিকার তিনটি বিশেষ সংখ্যা বের হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসে ‘জুবিলী সংখ্যা’, আষাঢ় মাসে ‘বিরহ সংখ্যা’ ও কার্তিক মাসে ‘ভোট সংখ্যা’ প্রকাশিত হয়। পরে পত্রিকাটি আবার বন্ধ হয়ে যায়। দশ মাস পর ১৩৩৪ সনের ভাদ্র মাসে পত্রিকাটি মাসিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হয়। কিছুদিন পর পত্রিকাটির সম্পাদক হন নীরদচন্দ্র চৌধুরী। কিন্তু নতুন প্রকাশক সজনীকান্তর সঙ্গে নীরদচন্দ্র চৌধুরির মতানৈক্য হওয়ায় তিনি পদত্যাগ করলে সজনীকান্ত নিজেই সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহন করেন। ১৩৩৬ সনের কার্তিক মাসে পত্রিকাটি তৃতীয়বারের মতো বন্ধ হয়ে যায়। পরে ১৩৩৮ সনের আশ্বিন থেকে শুরু করে সজনীকান্তর মৃত্যু অবধি এটি প্রকাশিত হয়েছে।

হাস্য-কৌতুক ও তীর্যক মন্তব্যের মাধ্যমে শনিবারের চিঠি ত্রিশ ও চল্লিশের দশকের বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাসে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে। এরূপ মন্তব্য থেকে  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকাজী নজরুল ইসলামপ্রমথ চৌধুরী, কল্লোল গোষ্ঠীর কবিরা কেউই রেহাই পাননি। সমকালীন পত্র-পত্রিকায় এসব লেখকদের যে লেখাই প্রকাশ পেত, শনিবারের চিঠি গোষ্ঠীর মনোপুত না হলে প্যারোডি ও কার্টুনের মাধ্যমে তাদের লেখা নিয়ে রসিকতা করা হতো। এ রসিকতার সবচেয়ে বেশি শিকার হন কাজী নজরুল ইসলাম। এ পত্রিকার প্রথম সংখ্যাতেই ‘বিদ্রাহী’ কবিতার প্যারোডি প্রকাশিত হয় এবং প্রায় প্রতিটি সংখ্যাতেই তাঁর কোনো-না-কোনো কবিতা নিয়ে ব্যঙ্গ করা হতো।

শনিবারের চিঠিতে কয়েকটি বিভাগ ছিল। ‘সংবাদ সাহিত্য’-এ বিভাগে সমকালীন সাহিত্য সংবাদ প্রকাশ করা হতো, ‘মণিমুক্তা’ এভাবে সমকালীন সাহিত্য নিয়ে তীর্যক, বিদ্রূপ মন্তব্য ও টিপ্পনি থাকত। ‘প্রসঙ্গ কথা’ নামক আরেকটি নিয়মিত বিভাগ ছিল, যাতে নীরদচন্দ্র চৌধুরী সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে লিখতেন। কার্টুন এ পত্রিকায় নিয়মিত ছাপা হতো। প্যারোডি কবিতা, গল্প ও নাটিকা ছাড়াও স্যাটায়ার ধর্মী ছড়া, গল্প, নাটক ও উপন্যাস প্রকাশ হতো।

১৩৩৯ সনের শেষ দিকে এ পত্রিকার বৈশিষ্ট্য বদলে যায়। সাহিত্য-সৃষ্টির ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বিতর্ক হওয়ার পরে সজনীকান্ত দাসের বোধোদয় হয়। পত্রিকাটি ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ থেকে সৃজনশীল সাহিত্য রচনায় ব্যাপৃত হয়। এ নবজন্মের পর  তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়বলাইচাঁদ মুখ্যোপাধ্যায় নিয়মিত লেখক ছিলেন।  [মামুনূর রশীদ]