শংকর, রবি

শংকর, রবি (১৯২০-২০১২) ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতজ্ঞ, সুরকার, কিংবদন্তী সেতারবাদক, যিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে পাশ্চাত্যে সুপরিচিত ও জনপ্রিয় করে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ভারতে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের সমর্থনে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ কনসাটর্’ আয়োজনের তিনি ছিলেন অন্যতম উদ্যোক্তা। তাঁকে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশিষ্ট ভূমিকা পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রদান করা হয়।

রবি শংকর

রবি শংকর ১৯২০ সালের ৭ই এপ্রিল ভারতের উত্তর প্রদেশের বারাণসী শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাঁদের পৈতৃক নিবাস ছিল বাংলাদেশের নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলায়। তাঁর পিতার নাম শ্যাম শংকর চৌধুরী এবং মাতার নাম হেমাঙ্গিনী। পিতা-মাতার চার পুত্র সন্তানের মধ্যে চতুর্থ রবি শংকরের পূর্ণ নাম রবীন্দ্র শংকর চৌধুরী। তবে সারা বিশ্বে তিনি পণ্ডিত রবি শংকর নামে সমধিক পরিচিত।

রবি শংকর ছিলেন বাংলাদেশের একজন অকৃতিম বন্ধু। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শরণার্থী শিবিরগুলোয় মানুষের মানবেতর জীবন যাপনের চিত্র তাঁর মনে গভীর দাগ কাটে। অনাহার-অর্ধাহারে থাকা শরণার্থীদের জন্য কিছু করার তাগিদ গভীরভাবে অনুভব করেন। তিনি তাঁর বন্ধু ও শিষ্য জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে বাংলাদেশে গণহত্যা ও ভারতের শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবন-যাপনরত নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের মানুষের সাহায্যার্থে হাত বাড়ানোর অনুরোধ করেন। এভাবে তাঁরা উভয় মিলে ১লা আগস্ট ১৯৭১ তারিখে নিউ ইয়র্কের মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি বেনিফিট কনসার্ট আয়োজন করেন। এই কনসার্ট থেকে প্রাপ্ত পুরো অর্থ তারা মুক্তিযুদ্ধ ও শরণার্থীদের কল্যাণের জন্য ইউনিসেফের হাতে তুলে দেন।

‘বাংলাদেশের দুর্গত শরণার্থীদের সাহায্যার্থে পাশে দাঁড়ানো এবং ও আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালের ২৭শে মার্চ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পণ্ডিত রবি শংকরকে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রদান করা হয়।

ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য রবি শংকর অসংখ্য পদক ও সম্মাননা লাভ করেন। ২০১২ সালের ১১ই ডিসেম্বর ৯২ বছর বয়সে পণ্ডিত রবি শংকর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়াগো শহরের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। [সাজাহান মিয়া]

নোট বিস্তারিত দ্রষ্টব্য, হারুন-অর-রশিদ (সম্পা.), বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, ৯ম খণ্ড, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ২০২০, পৃ. ৪৫-৪৮