লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৫৮, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজ  নারী শিক্ষার প্রসার এবং তাদের সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ভারতের প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির অন্যতম। কলেজটি কলকতার সোহরোওয়ার্দী এভিনিউতে অবস্থিত। অবিভক্ত ভারতে মুসলিম মেয়েদের আধুনিক শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে বিশ শতকের ত্রিশের দশকের শেষে এ কলেজটি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এমনকি বিশ শতকের ত্রিশের দশকের মাঝামাঝি সময়েও নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে মুসলমান ছাত্রীদের স্বল্পতা ছিল, যদিও প্রাথমিক পর্যায়ে অবস্থা ছিল অনেকটা ভিন্নতর। সে সময়ের মধ্যে মুসলমানগণ ধীরে ধীরে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রতি তাদের তীব্র বিরূপ মনোভাব পরিহার করেছিল এবং মেয়েদের আধুনিক শিক্ষা গ্রহণের বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছিল। ফলে বিশ শতকের সূচনালগ্ন থেকেই বাংলার সরকার মুসলিম মেয়েদের শিক্ষার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তখন ‘পর্দা কলেজ’ বলে অভিহিত মুসলমান মেয়েদের জন্য একটি পৃথক কলেজের দাবি বেশ জোরদার হয়ে ওঠে। ১৯৩৮-৩৯ সালে মুসলমান মেয়েদের জন্য একটি নতুন কলেজ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা সরকার অনুমোদন করে এবং ১৯৩৯-৪০ সালের সরকারি বাজেটে এর বাস্তবায়নের জন্য একাত্তর হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। বাংলার গভর্নর লর্ড ব্র্যাবোর্নের প্রয়াত স্ত্রী লেডি ব্র্যাবোর্নের নামে প্রস্তাবিত কলেজের নামকরণ হয়। ১৯৩৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি লেডি ব্র্যাবোর্নের মৃত্যু হয়।

১৯৩৯ সালের জুলাই মাসে পার্ক সার্কাসের একটি ভাড়া বাড়িতে বাংলার গভর্নর জেনারেল কলেজ উদ্বোধন করলে প্রথম বর্ষ কলা শ্রেণিতে পঁয়ত্রিশ জন মুসলিম ছাত্রী নিয়ে কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৩৯ সালের ২৬ আগস্ট বাংলার তৎকালীন গভর্নর স্যার উডহেড একটি ছাত্রীনিবাস ও অধ্যক্ষের বাসভবনসহ কলেজটির বর্তমান স্থানে (সোহরাওয়ার্দী এভিনিউ) ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এ কাজের জন্য সরকার দুই লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। ১৯৪১ সালের জুলাই মাসে কলেজটি নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হয়।

বিগত ষাট বছরে কলেজটির ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এলাকার ঘিঞ্জি বস্তি ও জলাভূমি অদৃশ্য হয়েছে, সেখানে নির্মিত হয়েছে সব ধরনের যানবাহন চলাচল ও পথচারীদের জন্য সড়কপথ, গড়ে উঠেছে বহু বিক্ষিপ্ত আবাসিক ইমারত এবং বিশাল পার্ক সার্কাস ময়দান। দ্রুত কলেজটির সম্প্রসারণ ঘটেছে। মূল ভবনের উপরে দ্বিতীয় তলা সংযোজন, এতদ্সন্নিহিত সুদৃশ্য বিজ্ঞান ভবন নির্মাণ এবং সুপ্রশস্ত বহিরাঙ্গণ কলেজের সামগ্রিক পরিবেশকে আরও সুন্দর করেছে। ভর্তিচ্ছু মুসলিম মেয়েদের অভাব হেতু ইতোমধ্যে কলেজ কর্তৃপক্ষ অমুসলিম মেয়েদের ভর্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় দ্রুত কলেজের শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়তে থাকে।

লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজ, কলকাতা


বিশ শতকের সত্তরের দশকের মধ্যভাগ থেকে কলেজের শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল এক হাজারেরও অধিক। ১৯৩৯ সালে অধ্যক্ষা মিস এফ.ই গ্রস, এম.এ (ক্যান্টাব) ছাড়া শিক্ষক ছিলেন মাত্র নয় জন। বর্তমানে কলেজটিতে বিজ্ঞান ও কলা বিভাগে মোট ২০টি বিষয়ে সম্মান পাঠক্রম চালু রয়েছে। উলে­খযোগ্য বিষয়সমূহ হল- বাংলা, অর্থনীতি, ইংরেজি, ভূগোল, ইতিহাস, ফারসি, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সংস্কৃত, উর্দু, সমাজবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিদ্যা, রসায়ন, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও প্রাণিবিজ্ঞান। বিজ্ঞান বিভাগগুলিতে আধুনিক পরীক্ষাগার রয়েছে এবং কলেজের সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারে রয়েছে প্রায় এক লক্ষ গ্রন্থ।  তাছাড়াও কলেজে রয়েছে ৫টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স। বিজ্ঞান বিষয়ে ৪টি এবং কলা বিষয়ে কেবলমাত্র ইংরেজি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স রয়েছে। বিজ্ঞানের ৪টি বিভাগে পিএইচ.ডি ডিগ্রি কোর্স চালু আছে।

পাঠক্রম ও পাঠক্রম-বহির্ভূত কার্যক্রমে কলেজের শিক্ষার্থীদের সাফল্য বরাবরই কৃতিত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয় ও বোর্ডের পরীক্ষায় বিভিন্ন বছরে তারা অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করেছে। ফলে কলেজটি পশ্চিমবঙ্গের শ্রেষ্ঠ কলেজগুলির একটিতে পরিণত হয়েছে। ১৯৯৯ সালে কলেজের হীরক জয়ন্তী উদযাপন করা হয়।  [হেনা মুখার্জী]