লালমাই পাহাড়শ্রেণি

লালমাই পাহাড়শ্রেণি  কুমিল­া শহর থেকে ৮ কিমি পশ্চিমে প্রায় ১৭ কিমি লম্বা ও ১ থেকে ২.৪ কিমি চওড়া নিচু পাহাড়শ্রেণি। এটি লালমাই-ময়নামতি পাহাড়শ্রেণী নামেও পরিচিত। পাহাড়শ্রেণিটি উত্তর-দক্ষিণে সম্প্রসারিত এবং কুমিল­া শহরের প্রায় মাঝ বরাবর চলে গিয়েছে। এটির উত্তরপ্রান্ত রাণীর বাংলো এবং দক্ষিণপ্রান্ত চান্দিমুড়া পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে স্থানীয়ভাবে উত্তর প্রান্তকে ময়নামতি এবং দক্ষিণ প্রান্তকে লালমাই বলা হয়। লালমাই নামটি সম্ভবত লালমাটি থেকে অথবা লালাম্বি জঙ্গল (ভেষজ গুল্ম) থেকে উদ্ভূত। লালাম্বি জঙ্গলটি ময়নামতি পাহাড়ের কোন স্থানে সমতটের দেবদের রাজধানী দেব পর্বতের নিকটে ছিল।

লালমাই পাহাড়শ্রেণিটি ২৩°২০´ থেকে ২৩°৩০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°০৫´ থেকে ৯১°১০´ পূর্ব  দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এটি ৩৩ বর্গকিমি এলাকাব্যাপী বিস্তৃত। গড় উচ্চতা ১৫ মিটার, কিন্ত কোন কোন চূড়া ৪৫ মিটার বা তারও বেশি উঁচু। অধিকাংশ পাহাড়ের চূড়াই লাল-বাদামি মৃত্তিকা দ্বারা আবৃত। এই মৃত্তিকাকেই প­াইসটোসিন সময়ের মধুপুর স্তরসমষ্টি বলা হয়। এই স্তরসমষ্টির নিচে প­ায়ো-প­াইসটোসিন সময়ের ডুপি টিলা স্তরসমষ্টির অবস্থান। মধুপুর ও ডুপি টিলা স্তরসমষ্টিদ্বয় কোয়ার্টজ-ক্যালসিডনি নুড়িপাথর স্তর দ্বারা বিচ্ছিন্ন। রাণীর বাংলোতে এই স্তরটি দেখতে পাওয়া যায়। লালমাই পাহাড়শ্রেণির বিভিন্ন স্থানে নবীন ডুপি টিলা স্তরসমষ্টিতে শিলায়িত কাঠ পাওয়া যায়। কোনো কোনো পাহাড়ের চূড়া সমমালভূমি বা অধিত্যকার (tableland) মতো এবং গভীরভাবে খোদিত উপত্যকাসমূহ অধিত্যকা-সমূহকে একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। সম্ভবত লালমাই পাহাড়শ্রেণি আরাকান ইয়োমা পাহাড়শ্রেণিরই অনুবর্তন (continuation)। লালমাই পাহাড়শ্রেণী প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের জন্যও পরিচিত। অধিকাংশ বৌদ্ধমঠ লালমাই পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত হয়েছিল। বস্ত্তত ময়নামতি থেকে শুরু করে শালবন বিহার হয়ে দক্ষিনে লালমাই পাহাড়শ্রেণী পর্যন্ত পুরো অঞ্চলটিই প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের কারণে বিখ্যাত।  [মোঃ হোসেন মনসুর]