লালমনিরহাট জেলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Robot: Automated text replacement (-'''''তথ্যসূত্র''''' +'''তথ্যসূত্র'''))
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''লালমনিরহাট জেলা''' (রংপুর বিভাগ)  আয়তন: ১২৪১.৪৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৪৬´ থেকে ২৬°৩৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০১´ থেকে ৮৯°৩৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, দক্ষিণে রংপুর জেলা, পূর্বে কুড়িগ্রাম ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, পশ্চিমে নীলফামারী ও রংপুর জেলা। লালমনিরহাটকে ছিটমহলবেষ্টিত জেলা বলা যায়। এ জেলায় ৩৩ টি ছিটমহল রয়েছে। এ জেলার বৃহত্তম ছিটমহল দুটি হচ্ছে দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা। তিন বিঘা করিডরের মাধ্যমে এই দুই ছিটমহলকে মূল ভূখন্ডের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
'''লালমনিরহাট জেলা''' ([[রংপুর বিভাগ|রংপুর বিভাগ]])  আয়তন: ১২৪১.৪৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৪৬´ থেকে ২৬°৩৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০১´ থেকে ৮৯°৩৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, দক্ষিণে রংপুর জেলা, পূর্বে কুড়িগ্রাম ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, পশ্চিমে নীলফামারী ও রংপুর জেলা। লালমনিরহাটকে ছিটমহলবেষ্টিত জেলা বলা যায়। এ জেলায় ৩৩ টি ছিটমহল রয়েছে। এ জেলার বৃহত্তম ছিটমহল দুটি হচ্ছে দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা। তিন বিঘা করিডরের মাধ্যমে এই দুই ছিটমহলকে মূল ভূখন্ডের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে।


''জনসংখ্যা'' ১১০৯৩৪৩; পুরুষ ৫৬৬৩৪৪, মহিলা ৫৪২৯৯৯। মুসলিম ৯৪১১৮৬, হিন্দু ১৬৬৭২০, বৌদ্ধ ৬৬১, খ্রিস্টান ৫৯ এবং অন্যান্য ৭১৯।
''জনসংখ্যা'' ১১০৯৩৪৩; পুরুষ ৫৬৬৩৪৪, মহিলা ৫৪২৯৯৯। মুসলিম ৯৪১১৮৬, হিন্দু ১৬৬৭২০, বৌদ্ধ ৬৬১, খ্রিস্টান ৫৯ এবং অন্যান্য ৭১৯।
১০ নং লাইন: ১০ নং লাইন:
{| class="table table-bordered table-hover"
{| class="table table-bordered table-hover"
|-
|-
! colspan= "10" | জেলা
| colspan= "10" | জেলা
|-
|-
| rowspan= "2" | আয়তন(বর্গ কিমি)  || rowspan= "2" | উপজেলা  || rowspan= "2" | পৌরসভা  || rowspan= "2" | ইউনিয়ন  || rowspan= "2" | মৌজা  || rowspan= "2" | গ্রাম  || colspan= "2" | জনসংখ্যা || rowspan= "2" | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি)  || rowspan= "2" | শিক্ষার হার (%)
| rowspan= "2" | আয়তন (বর্গ কিমি)  || rowspan= "2" | উপজেলা  || rowspan= "2" | পৌরসভা  || rowspan= "2" | ইউনিয়ন  || rowspan= "2" | মৌজা  || rowspan= "2" | গ্রাম  || colspan= "2" | জনসংখ্যা || rowspan= "2" | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || rowspan= "2" | শিক্ষার হার (%)
|-
|-
| শহর  || গ্রাম  
| শহর  || গ্রাম  
|-
|-
| ১২৪১.৪৬  || ৫  || ২  || ৪২  || ৩৮২  || ৪৭৬  || ১৪১৩৬১  || ৩৬৭৯৮২  || ৮৯৪  || ৪২.৩
| ১২৪১.৪৬  || ৫  || ২  || ৪২  || ৩৮২  || ৪৭৬  || ১৪১৩৬১  || ৩৬৭৯৮২  || ৮৯৪  || ৪২.৩
|}
|}
{| class="table table-bordered table-hover"
{| class="table table-bordered table-hover"
|-
|-
| জেলার অন্যান্য তথ্য
| colspan= "10" | জেলার অন্যান্য তথ্য
 
|-
|-
| উপজেলা নাম  || আয়তন(বর্গ কিমি)  || পৌরসভা  || ইউনিয়ন  || মৌজা  || গ্রাম  || জনসংখ্যা || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || শিক্ষার হার (%)
| উপজেলা নাম  || আয়তন(বর্গ কিমি)  || পৌরসভা  || ইউনিয়ন  || মৌজা  || গ্রাম  || জনসংখ্যা || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || শিক্ষার হার (%)
|-
|-
| আদিতমারী  || ১৯৫.০৩  || -  || ৮  || ৫৮  || ১০২  || ২০৩৭৪২  || ১০৪৫  || ৩৯.৮
| আদিতমারী  || ১৯৫.০৩  || -  || ৮  || ৫৮  || ১০২  || ২০৩৭৪২  || ১০৪৫  || ৩৯.৮
|-
|-
| কালীগঞ্জ  || ২৩৬.৯৬  || -  || ৮  || ৬৪  || ৯২  || ২১৬৮৬৮  || ৯১৫  || ৪১.১
| কালীগঞ্জ  || ২৩৬.৯৬  || -  || ৮  || ৬৪  || ৯২  || ২১৬৮৬৮  || ৯১৫  || ৪১.১
|-
|-
| পাটগ্রাম  || ২৬১.৫১  || ১  || ৭  || ৭৪  || ৬৯  || ১৯৩১৮৫  || ৭৩৯  || ৪৪.৭
| পাটগ্রাম  || ২৬১.৫১  || ১  || ৭  || ৭৪  || ৬৯  || ১৯৩১৮৫  || ৭৩৯  || ৪৪.৭
|-
|-
| লালমনিরহাট সদর  || ২৫৯.৫৪  || ১  || ৯  || ১২৩  || ১৪৮  || ২৮৯২৭২  || ১১১৪  || ৪৫.৫
| লালমনিরহাট সদর  || ২৫৯.৫৪  || ১  || ৯  || ১২৩  || ১৪৮  || ২৮৯২৭২  || ১১১৪  || ৪৫.৫
|-
|-
| হাতীবান্ধা  || ২৮৮.৪২  || -  || ১০  || ৬৩  || ৬৫  || ২০৬২৭৬  || ৭১৫  || ৩৯.৩
| হাতীবান্ধা  || ২৮৮.৪২  || -  || ১০  || ৬৩  || ৬৫  || ২০৬২৭৬  || ৭১৫  || ৩৯.৩
৪৫ নং লাইন: ৩৬ নং লাইন:
''সূত্র'' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
''সূত্র'' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।


''মুক্তিযুদ্ধ'' ১৯৭১ সালে লালমনিরহাট জেলা ছিল ৬ নং সেক্টরের অধীন। পাকবাহিনী ৪ এপ্রিল লালমনিরহাট সদর ও আদিতমারী উপজেলা এবং ৮ এপ্রিল হাতীবান্ধা উপজেলায় প্রবেশ করে বেশসংখ্যক লোককে হত্যা করে। এছাড়াও তারা ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ৩০ নভেম্বর পাকবাহিনী হাতীবান্ধা ত্যাগ করে কালীগঞ্জে আশ্রয় নেয়। ৪ ও ৫ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর প্রবল আক্রমণে পাকবাহিনী লালমনিরহাট জেলা ত্যাগ করে। ৬ ডিসেম্বর এ জেলা শত্রুমুক্ত হয়।
[[Image:LalmonirhatDistrict.jpg|thumb|right|400px]]
''মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি'' ১৯৭১ সালে লালমনিরহাট জেলা ছিল ৬ নং সেক্টরের অধীন। পাকবাহিনী ৪ এপ্রিল লালমনিরহাট সদর ও আদিতমারী উপজেলা এবং ৮ এপ্রিল হাতীবান্ধা উপজেলায় প্রবেশ করে বেশসংখ্যক লোককে হত্যা করে। এছাড়াও তারা ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ৩০ নভেম্বর পাকবাহিনী হাতীবান্ধা ত্যাগ করে কালীগঞ্জে আশ্রয় নেয়। ৪ ও ৫ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর প্রবল আক্রমণে পাকবাহিনী লালমনিরহাট জেলা ত্যাগ করে। ৬ ডিসেম্বর এ জেলা শত্রুমুক্ত হয়।


''মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন'' গণকবর ১০ (বটেশ্বর, দোলাপাড়া); বধ্যভূমি ১; স্মৃতিস্তম্ভ ৮।
''মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন'' গণকবর ১০ (বটেশ্বর, দোলাপাড়া); বধ্যভূমি ১; স্মৃতিস্তম্ভ ৮।
[[Image:LalmonirhatDistrict.jpg|thumb|right|লালমনিরহাট জেলা]]


''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান'' গড় হার ৪২.৩%; পুরুষ ৪৮.২%, মহিলা ৩৬.২%। কলেজ ২৭, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২০০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৯৭, মাদ্রাসা ২৬৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: আদিতমারী ডিগ্রি কলেজ (১৯৯১), সাপ্টীবাড়ি ডিগ্রি কলেজ (১৯৯২), পাটগ্রাম মহিলা ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৭), লালমনিরহাট সরকারি কলেজ (১৯৬৪), হাতীবান্ধা মহিলা কলেজ (১৯৯৫), তুষভান্ডার মহিলা মহাবিদ্যালয় (১৯৯৮), কাকিনা মহিমারঞ্জন স্মৃতি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০১), দলগ্রাম দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৬), লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), আদিতমারী ভাদাই গিরিজা শঙ্কর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪২), পাটগ্রাম তারকনাথ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫), বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫২), সাপ্টীবাড়ি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৭), রেলওয়ে চিলড্রেন পার্ক সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬০), মির্জার কোট এইচএম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭২), হাতীবান্ধা এসএস স্কুল (১৯৪৬), তুষভান্ডার নছর উদ্দিন সরকারি বালিকা বিদ্যালয় (১৯৬৮), কবি শেখ ফজলল করিম বালিকা বিদ্যালয় (১৯৮৬), মদনপুর বৈরাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৬৫), পাটগ্রাম এনপি সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৬২)।
''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান'' গড় হার ৪২.৩%; পুরুষ ৪৮.২%, মহিলা ৩৬.২%। কলেজ ২৭, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২০০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৯৭, মাদ্রাসা ২৬৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: আদিতমারী ডিগ্রি কলেজ (১৯৯১), সাপ্টীবাড়ি ডিগ্রি কলেজ (১৯৯২), পাটগ্রাম মহিলা ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৭), লালমনিরহাট সরকারি কলেজ (১৯৬৪), হাতীবান্ধা মহিলা কলেজ (১৯৯৫), তুষভান্ডার মহিলা মহাবিদ্যালয় (১৯৯৮), কাকিনা মহিমারঞ্জন স্মৃতি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০১), দলগ্রাম দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৬), লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), আদিতমারী ভাদাই গিরিজা শঙ্কর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪২), পাটগ্রাম তারকনাথ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫), বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫২), সাপ্টীবাড়ি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৭), রেলওয়ে চিলড্রেন পার্ক সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬০), মির্জার কোট এইচএম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭২), হাতীবান্ধা এসএস স্কুল (১৯৪৬), তুষভান্ডার নছর উদ্দিন সরকারি বালিকা বিদ্যালয় (১৯৬৮), কবি শেখ ফজলল করিম বালিকা বিদ্যালয় (১৯৮৬), মদনপুর বৈরাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৬৫), পাটগ্রাম এনপি সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৬২)।
৬৩ নং লাইন: ৫১ নং লাইন:
''দর্শনীয় স্থান'' বিমান ঘাঁটি, মোগলহাট জিরো পয়েন্ট, তিস্তা রেলওয়ে সেতু, বিরল প্রজাতির বৃক্ষ ‘নাগ লিঙ্গম’, কুতুব খানা, সিন্দুর মতি, লালমনিরহাট জেলা জাদুঘর (লালমনিরহাট সদর), খেতু মুহাম্মদ সরকারের সেতু ও কুয়া (আদিতমারী), তিন বিঘা করিডোর, বুড়িমারী স্থল বন্দর (পাটগ্রাম), কাকিনা জমিদার বাড়ির হাওয়া খানা, জমিদার মহিমারঞ্জনের জাদুঘর, শেখ ফজলল করিমের বাড়ি, তুষভান্ডার জমিদার বাড়ি (কালীগঞ্জ), তিস্তা ব্যারেজ, শালবন (হাতীবান্ধা)।  [তানজিমুল নয়ন]
''দর্শনীয় স্থান'' বিমান ঘাঁটি, মোগলহাট জিরো পয়েন্ট, তিস্তা রেলওয়ে সেতু, বিরল প্রজাতির বৃক্ষ ‘নাগ লিঙ্গম’, কুতুব খানা, সিন্দুর মতি, লালমনিরহাট জেলা জাদুঘর (লালমনিরহাট সদর), খেতু মুহাম্মদ সরকারের সেতু ও কুয়া (আদিতমারী), তিন বিঘা করিডোর, বুড়িমারী স্থল বন্দর (পাটগ্রাম), কাকিনা জমিদার বাড়ির হাওয়া খানা, জমিদার মহিমারঞ্জনের জাদুঘর, শেখ ফজলল করিমের বাড়ি, তুষভান্ডার জমিদার বাড়ি (কালীগঞ্জ), তিস্তা ব্যারেজ, শালবন (হাতীবান্ধা)।  [তানজিমুল নয়ন]


আরও দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা।
''আরও দেখুন'' সংশ্লিষ্ট উপজেলা।


'''তথ্যসূত্র'''   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; লালমনিরহাট জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; লালমনিরহাট জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।
'''তথ্যসূত্র'''   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; লালমনিরহাট জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; লালমনিরহাট জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।

০৫:৪৩, ১১ মার্চ ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

লালমনিরহাট জেলা (রংপুর বিভাগ)  আয়তন: ১২৪১.৪৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৪৬´ থেকে ২৬°৩৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০১´ থেকে ৮৯°৩৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, দক্ষিণে রংপুর জেলা, পূর্বে কুড়িগ্রাম ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, পশ্চিমে নীলফামারী ও রংপুর জেলা। লালমনিরহাটকে ছিটমহলবেষ্টিত জেলা বলা যায়। এ জেলায় ৩৩ টি ছিটমহল রয়েছে। এ জেলার বৃহত্তম ছিটমহল দুটি হচ্ছে দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা। তিন বিঘা করিডরের মাধ্যমে এই দুই ছিটমহলকে মূল ভূখন্ডের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জনসংখ্যা ১১০৯৩৪৩; পুরুষ ৫৬৬৩৪৪, মহিলা ৫৪২৯৯৯। মুসলিম ৯৪১১৮৬, হিন্দু ১৬৬৭২০, বৌদ্ধ ৬৬১, খ্রিস্টান ৫৯ এবং অন্যান্য ৭১৯।

জলাশয় প্রধান নদী: তিস্তা, ধরলা।

প্রশাসন লালমনিরহাট জেলা গঠিত হয় ১৯৮৪ সালে। এ জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে হাতীবান্ধা উপজেলা সর্ববৃহৎ (২৮৮.৪২ বর্গ কিমি) এবং জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা আদিতমারী (১৯৫.০৩ বর্গ কিমি)।

জেলা
আয়তন (বর্গ কিমি) উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম
১২৪১.৪৬ ৪২ ৩৮২ ৪৭৬ ১৪১৩৬১ ৩৬৭৯৮২ ৮৯৪ ৪২.৩
জেলার অন্যান্য তথ্য
উপজেলা নাম আয়তন(বর্গ কিমি) পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
আদিতমারী ১৯৫.০৩ - ৫৮ ১০২ ২০৩৭৪২ ১০৪৫ ৩৯.৮
কালীগঞ্জ ২৩৬.৯৬ - ৬৪ ৯২ ২১৬৮৬৮ ৯১৫ ৪১.১
পাটগ্রাম ২৬১.৫১ ৭৪ ৬৯ ১৯৩১৮৫ ৭৩৯ ৪৪.৭
লালমনিরহাট সদর ২৫৯.৫৪ ১২৩ ১৪৮ ২৮৯২৭২ ১১১৪ ৪৫.৫
হাতীবান্ধা ২৮৮.৪২ - ১০ ৬৩ ৬৫ ২০৬২৭৬ ৭১৫ ৩৯.৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে লালমনিরহাট জেলা ছিল ৬ নং সেক্টরের অধীন। পাকবাহিনী ৪ এপ্রিল লালমনিরহাট সদর ও আদিতমারী উপজেলা এবং ৮ এপ্রিল হাতীবান্ধা উপজেলায় প্রবেশ করে বেশসংখ্যক লোককে হত্যা করে। এছাড়াও তারা ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ৩০ নভেম্বর পাকবাহিনী হাতীবান্ধা ত্যাগ করে কালীগঞ্জে আশ্রয় নেয়। ৪ ও ৫ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর প্রবল আক্রমণে পাকবাহিনী লালমনিরহাট জেলা ত্যাগ করে। ৬ ডিসেম্বর এ জেলা শত্রুমুক্ত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ১০ (বটেশ্বর, দোলাপাড়া); বধ্যভূমি ১; স্মৃতিস্তম্ভ ৮।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪২.৩%; পুরুষ ৪৮.২%, মহিলা ৩৬.২%। কলেজ ২৭, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২০০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৯৭, মাদ্রাসা ২৬৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: আদিতমারী ডিগ্রি কলেজ (১৯৯১), সাপ্টীবাড়ি ডিগ্রি কলেজ (১৯৯২), পাটগ্রাম মহিলা ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৭), লালমনিরহাট সরকারি কলেজ (১৯৬৪), হাতীবান্ধা মহিলা কলেজ (১৯৯৫), তুষভান্ডার মহিলা মহাবিদ্যালয় (১৯৯৮), কাকিনা মহিমারঞ্জন স্মৃতি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০১), দলগ্রাম দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৬), লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), আদিতমারী ভাদাই গিরিজা শঙ্কর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪২), পাটগ্রাম তারকনাথ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫), বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫২), সাপ্টীবাড়ি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৭), রেলওয়ে চিলড্রেন পার্ক সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬০), মির্জার কোট এইচএম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭২), হাতীবান্ধা এসএস স্কুল (১৯৪৬), তুষভান্ডার নছর উদ্দিন সরকারি বালিকা বিদ্যালয় (১৯৬৮), কবি শেখ ফজলল করিম বালিকা বিদ্যালয় (১৯৮৬), মদনপুর বৈরাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৬৫), পাটগ্রাম এনপি সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৬২)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭২.৭৮%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৪৬%, শিল্প ০.৫%, ব্যবসা ১০.৪৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৩৮%, নির্মাণ ০.৬৯%, ধর্মীয় সেবা ০.১৯%, চাকরি ৪.৪৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২% এবং অন্যান্য ৪.৮৬%।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: লালপ্রভাত (২০০০); সাপ্তাহিক: লালমনিরহাট বার্তা (১৯৯১), জানাজানি (১৯৮৪); সাহিত্য পত্রিকা: রক্তসুর্য (১৯৭৭), অস্বীকার (১৯৭৮), ত্রৈমাসিক চলমান (১৯৮৪), বিকাশ (১৯৮৬), সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা (১৯৯০), লালপোস্টার (১৯৯৫), মাসিক রোদ্দুর (২০০১), সম্প্রীতি (২০০৫), প্রচ্ছদ ও প্রত্যাশা; অবলুপ্ত: মাসিক বাসনা, রঙ্গপুর, দিকপ্রকাশ, চলমান, একতা, দারুচিনি ছাড়পত্র, ইদানিং, অরণ্যে রোদন।

লোকসংস্কৃতি ছড়া, ধাঁধাঁ, প্রবাদ-প্রবচন, মেয়েলি গীত, মন্ত্র, লোকসঙ্গীত, পল্লিগীতি, বাউলসঙ্গীত উল্লেখযোগ্য।

দর্শনীয় স্থান বিমান ঘাঁটি, মোগলহাট জিরো পয়েন্ট, তিস্তা রেলওয়ে সেতু, বিরল প্রজাতির বৃক্ষ ‘নাগ লিঙ্গম’, কুতুব খানা, সিন্দুর মতি, লালমনিরহাট জেলা জাদুঘর (লালমনিরহাট সদর), খেতু মুহাম্মদ সরকারের সেতু ও কুয়া (আদিতমারী), তিন বিঘা করিডোর, বুড়িমারী স্থল বন্দর (পাটগ্রাম), কাকিনা জমিদার বাড়ির হাওয়া খানা, জমিদার মহিমারঞ্জনের জাদুঘর, শেখ ফজলল করিমের বাড়ি, তুষভান্ডার জমিদার বাড়ি (কালীগঞ্জ), তিস্তা ব্যারেজ, শালবন (হাতীবান্ধা)।  [তানজিমুল নয়ন]

আরও দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা।

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; লালমনিরহাট জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; লালমনিরহাট জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।