লালপুর উপজেলা

লালপুর উপজেলা (নাটোর জেলা)  আয়তন: ৩২৭.৯২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°০৭´ থেকে ২৪°১৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৫২´ থেকে ৮৯°০৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বাগাতিপাড়া ও বরাইগ্রাম উপজেলা, দক্ষিণে ঈশ্বরদী, ভেড়ামারা এবং দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) উপজেলা, পূর্বে বরাইগ্রাম ও ভেড়ামারা উপজেলা, পশ্চিমে বাঘা উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৭৪৪০৫; পুরুষ ১৩৮৪৫৭, মহিলা ১৩৫৯৪৮। মুসলিম ২৫৯৪০২, হিন্দু ১৩৮১৩, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ৩৩৭ এবং অন্যান্য ৮৫২।

জলাশয় প্রধান নদী: মরা বড়াল, নন্দনকুজা, খালসাডিঙ্গি। বোয়ালিয়া ও বসন্তপুর বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ১৮৬৯ সালে লালপুর থানা গঠিত হয় এবং থানাকে ১৯৮৩ সালের ১৫ এপ্রিল উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১০ ২০০ ২১৭ ২১০৪২ ২৫৩৩৬৩ ৮৩৭ ৬০.৩ ৪৯.৮
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার(%)
১৪.৯৮ ১৬ ২১০৪২ ১৪০৫ ৬০.৩
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
অর্জুনপুর-বরমহাটি ৫৭ ৫২৬২ ৬৬৭৫ ৬৫৭০ ৫০.২
আড়বাব ১৭ ১১২০৩ ১৪২৫৮ ১৩৮৭৫ ৪৮.৭
ঈশ্বরদী ৬৬ ৫৮২৭ ১৩৬৫৭ ১৩৭০২ ৪৮.৭
ওয়ালিয়া ৯৫ ৬৮৪০ ১৫০৫৫ ১৫০৯৭ ৬১.৫
কদিমচিলান ৭৬ ৫৭৪৯ ১০৩৩৫ ১০২৫৫ ৫২.৭
চংধুপইল ২৮ ৮৫০০ ১৫৫২২ ১৫৩০৩ ৪৮.৮
দুড়দুরিয়া ৪৭ ৬৯৩৫ ১৩৮১০ ১৩৩১১ ৪৭.৬
দুয়ারিয়া ৩৮ ৭৫৮৪ ১২১৯২ ১২২১২ ৪৮.২
বিলমাড়িয়া ১৯ ৬৮৯২ ১০১৫৩ ৯৭৯৬ ৪২.৪
লালপুর ৮৫ ১২৪৯০ ১৬১৪০ ১৫৪৪৫ ৪৭.২

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মোমিনপুর, মাধবপুর, নাবিরপাড়া, সালামপুর ও বাউড়া শাহী মসজিদ, ভেল্লাবাড়িয়া শাহ বাগু দেওয়ানের (র:) মাযার ও মসজিদ (মুগল আমল), বুধপাড়া কালী মন্দির ও জমিদার বাড়ি, পানসিপাড়া শ্রী ফকির চাঁদ গোসাই আশ্রম (১২১৭ বাংলা), আড়বাব সরাইখানা ও মসজিদ (শেরশাহ আমল), অর্জুনপাড়া পুকুর ও দালানকোঠা, গড়ের ভিটার দুর্গ ও সেনা ছাউনী, লালপুর ও বিলমাড়িয়ার নীলকুঠি।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ এ উপজেলার ময়নায় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকিস্তানি ২৫ নং রেজিমেন্টের মুখোমুখি লড়াইয়ে ৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ৩২ জন আহত হন। একই দিনে চামটিয়া গ্রামে আরও ৩ জন নিহত হন। ১২ এপ্রিল ধানাইদহে পাকসেনাদের সাথে সংঘর্ষে ১০/১২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৫ মে পাকবাহিনী নর্থবেঙ্গল সুগার মিলের প্রায় ৫০ জন এবং লালপুর রাস্তায় ৫ জনকে হত্যা করে। ২৯ মে পাকবাহিনী চংধুপইলের পয়তারপাড়া গ্রামের অর্ধশতাধিক লোককে গুলি করে হত্যা করে। ১৮ জুলাই পাকবাহিনী ২২ জনকে লালপুর নীলকুঠির নিকট হত্যা করে এবং ১৯ জুলাই একই স্থানে ৪ জনকে জীবন্ত কবর দেয়। ২০ জুলাই পাকবাহিনী রামকৃষ্ণপুর গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে ও ৫ জনকে হত্যা করে। ২৭ জুলাই পাকসেনারা বিলমাড়িয়া হাটে অর্ধশতাধিক লোককে হত্যা করে। ৩ ডিসেম্বর পাকসেনারা মহেশপুর গ্রামে ৩৬ জনকে হত্যা করে। উপজেলায় একটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। ১টি স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন লালপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ২৬৭, মন্দির ৩৮, গির্জা ২, মাযার ৪। উলে­খযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: মোমিনপুর শাহী মসজিদ, মাধবপুর শাহী মসজিদ, নাবিরপাড়া শাহী মসজিদ, সালামপুর শাহী মসজিদ, বাউড়া শাহী মসজিদ, ভেল­াবাড়িয়া শাহ বাগু দেওয়ানের (র:) মাযার ও মসজিদ, বুধপাড়া হযরত ইমাম শাহ আলম (র.) মাযার, গোপালপুরের হযরত শাহ সুফি বোরহান উদ্দিন বাগদাদীর (র:) মাযার, সোনাপীরের মাযার, পাঁচপীরের মাযার, বুধপাড়া কালী মন্দির, পানসিপাড়া শ্রী ফকির চাঁদ গোসাই আশ্রম।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫০.৬%; পুরুষ ৫০.৯%, মহিলা ৫০.৩%। কলেজ ১৩, কারিগরি কলেজ ৪, এসএসসি ভোকেশনাল ২, এসটিসি ভোকেশনাল ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৯, কমিউনিটি স্কুল ২, ব্র্যাক স্কুল ১২২, মাদ্রাসা ৬৩। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: গোপালপুর ডিগ্রি কলেজ, আব্দুলপুর সরকারি কলেজ, মঞ্জিলপুকুর কৃষি কলেজ, কারিগরি ও বাণিজ্যিক মহাবিদ্যালয় (২০০০), মাযার শরীফ টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট উইমেন্স কলেজ (২০০১), গোপালপুর পৌর টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ (২০০২), চকনাজিরপুর ভোকেশনাল এন্ড বিএম ইনস্টিটিউট (২০০২), লালপুর শ্রীসুন্দরী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড বিএম কলেজ (১৯১১), লালপুর মহাবিদ্যালয়, চকনাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫), বালিতিতা ইসলামপুর আশরাফুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, ক্লাব ২৩, ফোকলোর চর্চা কেন্দ্র ১, স্টেডিয়াম ১, সিনেমা হল ৩, খেলার মাঠ ২৮।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬২%, অকৃষি শ্রমিক ৫.২৭%, শিল্প ০.৮৬%, ব্যবসা ১৩.৩৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.০১%, চাকরি ৬.৬২%, নির্মাণ ১.১%, ধর্মীয় সেবা ০.১৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৭% এবং অন্যান্য ৭.৩৭%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৪.০৫%, ভূমিহীন ৪৫.৯৫%। শহরে ৪৫.০৫% এবং গ্রামে ৫৫.১৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আখ, তুলা, তৈলবীজ, ডাল, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  যব, কাউন, অড়হর, তুঁত।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, জাম।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৯, গবাদিপশু ৩০৪, হাঁস-মুরগি ৯৩।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৬৫.২৪ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৮.২১ কিমি, কাঁচারাস্তা ৬০৫.৫৫ কিমি; রেলপথ ২৪ কিমি। রেলস্টেশন ৪।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ধানকল ২৫, চিনিকল ১, কড়াই ফ্যাক্টরি ২, স’মিল ৮, স্টিল ওয়ার্কস ২, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, গুড়শিল্প, পাটশিল্প, কাসাশিল্প, খয়েরশিল্প, দারুশিল্প, কাগজ ও ফুল শিল্প, মাদুরশিল্প, নকশী কাঁথা, হাতপাখা, খেলনা, বাঁশ ও বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩৫, মেলা ৬। লালপুর হাট, গোপালপুর হাট, ওয়ালিয়া হাট, বিলমাড়িয়া হাট, দুরদুরিয়া হাট, আব্দুলপুর হাট এবং বুধপাড়া মন্দিরের কালীপূজা মেলা, গোপালপুর মন্দিরের দুর্গাপূজা ও মেলা, স্বাধীনতা মেলা, বিজয় মেলা, বই মেলা এবং বৃক্ষ মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  চিনি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৮.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.৪%, ট্যাপ ০.৮% এবং অন্যান্য ২.৮%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬০.৬% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩২.৭% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৬.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

এনজিও ব্র্যাক, আশা।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১০, প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতাল ৩, পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক ১০, মাতৃসদন ২, পশু হাসপাতাল ৫, কমিউনিটি ক্লিনিক ৩২।  [মো. মনিরুজ্জামান]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; লালপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।