লামা উপজেলা

লামা উপজেলা (বান্দরবান জেলা)  আয়তন: ৬৭১.৮৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২১°৩৬´ থেকে ২১°৫৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°০৪´ থেকে ৯২°২৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বান্দরবান সদর এবং লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) উপজেলা, দক্ষিণে নাইক্ষ্যংছড়ি ও আলিকদম উপজেলা, পূর্বে রুমা, থানচি এবং আলিকদম উপজেলা, পশ্চিমে চকোরিয়া উপজেলা। এ উপজেলার লাকপাং ডং পাহাড় ও মুরাংজা তাং পাহাড় উল্লেখযোগ্য।

জনসংখ্যা ১০৮৯৯৫; পুরুষ ৫৬৬১০, মহিলা ৫২৩৮৫। মুসলিম ৭৭৪৯০, হিন্দু ৩০১৮, বৌদ্ধ ২০৩৯৫, খ্রিস্টান ৬৬২৮ এবং অন্যান্য ১৪৬৪।

জলাশয় প্রধান নদী: মাতামুহুরী।

প্রশাসন লামা থানা গঠিত হয় ১৯২৩ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৫ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৮ ৩৪৩ ১৯০১৪ ৮৯৯৮১ ১৬২ ৫০.৩ ৩০.৩
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৩.৮৭ ৩৪ ১৯০১৪ ১৩৭১ ৫০.৩
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আজিজনগর ১৫ ২৩৬৮০ ৫৪২০ ৫১৫৪ ৪৬.৪
গজালিয়া ৪৭ ৩০৭২০ ৬৩১৪ ৫৫৮০ ২২.৩
ফাষিয়াখালী ৩১ ৪৭৩৬০ ১২৭০৮ ১২২২৮ ২৮.৫
রূপসীপাড়া ৬৮ ২২৪০০ ৫৯৭৪ ৫৫৯১ ২৫.৮
লামা ৬৩ ১৮৫৬০ ৪২৫৫ ৪২৩৬ ২৮.৫
সরই ৭৯ ২৩০৪০ ৫৯৭০ ৫২৬১ ৩১.৩
ফাইতং ২৭ ১৬০০০ ৬১১৯ ৫১৭১ ৩২.৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের সময় লামা উপজেলা ১ নং সেক্টরের অধীনে ছিল। এ সময় এ এলাকায় পাকবাহিনী ব্যাপক গণহত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। লামায় পাকবানিহীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি যুদ্ধ হয়। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল লামা থানা যুদ্ধ, ত্রিশডোবা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প যুদ্ধ এবং পরিখ্যা ক্যাম্প যুদ্ধ।

বিস্তারিত দেখুন লামা উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৫, মন্দির ৫, গির্জা ১৫, কেয়াং ১৮।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৪.০%; পুরুষ ৩৬.৬%, মহিলা ৩১.১%। কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭৪, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৫, মাদ্রাসা ৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: লামা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চাম্বি উচ্চ বিদ্যালয়, লামা আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়, রামথুই পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লাইনঝিড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, সংগীত একাডেমি ১, অডিটোরিয়াম ১, সিনেমা হল ১, খেলার মাঠ ৩।

দর্শনীয় স্থান মেরেঞ্জা, মেমোরিয়াল খ্রিস্টান মিশন।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬২.১৮% অকৃষি শ্রমিক ৭.৪%, শিল্প ০.৪৬%, ব্যবসা ১০.৮২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ০.৬১%, চাকরি ৭.৫২%, নির্মাণ ০.৬%, ধর্মীয় সেবা ০.২৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩১% এবং অন্যান্য ৯.৮৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫০.০৯%, ভূমিহীন ৪৯.৯১%। শহরে ৩৭.১২% এবং গ্রামে ৫২.৭৪% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, তামাক, আলু, আদা, বাদাম, হলুদ, তিল, তুলা, শাকসবজি।

প্রধান ফল-ফলাদি কলা, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার হাঁস-মুরগি ১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৫২ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৬০ কিমি।

শিল্প ও কলকারখানা চালকল, ম্যাচ ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, দারুশিল্প, করাত কল, বাঁশ ও বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৫। লামা বাজার, গজালিয়া বাজার, কিয়াজু পাড়া বাজার, রূপসী বাজার ও আজিজনগর বাজার উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য কলা, কাঁঠাল, বাঁশ, তুলা, তিল, আদা, সুতা, হলুদ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২২.৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৬২.৬%, ট্যাপ ১.৩% এবং অন্যান্য ৩৬.১%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২৩.২% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪১.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩৪.৯% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র ৩, পশু চিকিৎসা কেন্দ্র ১।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা।  [আতিকুর রহমান]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; লামা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।