লাঙল

লাঙল২  সাপ্তাহিক পত্রিকা। কাজী নজরুল ইসলামের সম্পাদনায় ১৯২৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর  কলকাতা থেকে এটি প্রকাশিত হয়। এর আগে  নবযুগ ও সেবক পত্রিকায় কাজ করার ফলে নজরুল সাংবাদিকতা বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তিনি  ধূমকেতু (১৯২২) নামক একটি পত্রিকাও প্রকাশ করেন।

লাঙল পত্রিকা

লাঙল ছিল ‘শ্রমিক-প্রজা-স্বরাজ-সম্প্রদায়’ নামে শ্রমিক শ্রেণীর একটি সংগঠনের মুখপত্র। নজরুল এর সম্পাদক হলেও পত্রিকার প্রচ্ছদে তাঁর নাম ছাপা হতো মুখ্য পরিচালক হিসেবে, আর সম্পাদক হিসেবে ছাপা হতো মণিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের নাম। এছাড়া পত্রিকার প্রচ্ছদে কাঁধে লাঙলবাহী একজন কৃষকের ছবিও থাকত। পত্রিকার প্রথম পাতায় মানুষের মহত্ত্ব প্রচারের উদ্দেশ্যে চন্ডীদাসের একটি উক্তি মুদ্রিত হতো।

লাঙলের  প্রথম সংখ্যার প্রধান আকর্ষণ ছিল ‘সাম্যবাদী’ শিরোনামে এগারোটি কবিতার সমাহার। কৃষক, নারী, দিনমজুর, কুলি প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর পীড়িত ও নির্যাতিত জীবন বর্ণনাত্মক এ কবিতাগুলি পরবর্তীকালে পুস্তক আকারে প্রকাশিত হয়। পত্রিকার এই বিশেষ সংখ্যার প্রায় পাঁচ হাজার কপি ছাপানো হয়েছিল, কিন্তু এর চাহিদা এতই ব্যাপক ছিল যে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সব কপিই বিক্রি হয়ে যায়। নজরুল ‘কৃষক-প্রজা-স্বরাজ-সম্প্রদায়ে’র আহবায়ক হিসেবে এ সংখ্যায়ই সংগঠনের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন।

নজরুল লাঙলের অন্যান্য সংখ্যায়ও নিজের কিছু বিখ্যাত কবিতা প্রকাশ করেন, যেমন ‘কৃষাণের গান’, ‘সব্যসাচী’ এবং ‘সর্বহারা’। লাঙ্গলে অন্যান্য লেখকের রচনাসমূহের বিষয়বস্ত্ত ছিল তৎকালীন সমাজতন্ত্রী নেতা কার্ল মার্কস, লেনিন বা সোভিয়েত রাশিয়ার রাজনৈতিক গতিধারা, চীনের পুনর্জাগরণ ইত্যাদি।

১৯২৬ সালের ২১ জানুয়ারি  সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে লাঙলের একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। তাতে তাঁর জীবনী এবং অপ্রকাশিত কয়েকটি চিঠি স্থান পায়। পত্রিকার লেখকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কমরেড মুজাফ্ফর আহমেদ ও  সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর। সৌম্যেন্দ্রনাথ হিন্দু-মুসলিম ঐক্য সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ লেখেন। নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়কৃত গোর্কির মা উপন্যাসের বাংলা অনুবাদ এ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। ১৯২৬ সালের ১৫ এপ্রিল লাঙলের পঞ্চদশ ও শেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এ বছরের ১২ আগস্ট মুজাফ্ফর আহমেদ গণবাণী নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন, যার সঙ্গে লাঙল একীভূত হয়ে যায়। গণবাণীও ছিল ‘বঙ্গীয় কৃষক ও শ্রমিক দলে’র মুখপত্র।

লাঙল একটি সংগঠনের মুখপত্র হলেও এর অবস্থান ছিল সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার, শান্তি ও সাম্প্রদায়িক ঐক্যের পক্ষে। এটি ছিল নজরুলের রাজনৈতিক সচেতনতার একটি প্রতীক।[মোহাম্মদ  আবদুল কাইউম]