লাখাই উপজেলা

লাখাই উপজেলা (হবিগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ১৯৬.৫৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°১৩´ থেকে ২৪°২৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°১০´ থেকে ৯১°২১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে অষ্টগ্রাম ও বানিয়াচং উপজেলা, দক্ষিণে নাসিরনগর উপজেলা, পূর্বে হবিগঞ্জ সদর, মাধবপুর ও নাসিরনগর উপজেলা, পশ্চিমে অষ্টগ্রাম উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৪৮৮১১; পুরুষ ৭০৭১৪, মহিলা ৭৮০৯৭। মুসলিম ১২৭৮৯৭, হিন্দু ২০৮৩২, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ২৩ এবং অন্যান্য ৫৮ ।

জলাশয় বরাক, কুলকুলিয়া ও সুতাং নদী এবং ঘাড়ভাঙ্গা বিল, জুলফা বিল, বরাক বিল, রবিয়ারগোনা বিল, দশকানিয়া বিল ও ঝুলজাহা খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন লাখাই থানা গঠিত হয় ১৯২২ সালে। বর্তমানে এটি উপজেলা।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৫২ ৬৫ ১৭২৩৫ ১৩১৫৭৬ ৭৫৭ ৩৪.১ ৩৩.৭
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৪.৬২ ১৭২৩৫ ১১৭৯ ৩৪.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
করাব ৪০ ৭০১১ ১০৯২০ ১১৩৫৬ ৩৩.৩
বামৈ ১৩ ৭০২২ ১২৯৯৭ ১৪৬০৫ ৩৬.৮
বুল্লা ২৭ ১১৮৭২ ১০৫৪৯ ১১২৫৯ ৩৫.৬
মুরাকরি ৬৭ ৪৩৭৮ ১১৫৫৪ ১৩০৯৮ ৩৩.৮
মুরিয়াউক ৮১ ৪৯৬৬ ১১৮৫৫ ১৪১৮৯ ৩৪.২
লাখাই ৫৪ ১১৭৫৭ ১২৮৩৯ ১৩৫৯০ ২৮.৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ লাখাইতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো সম্মুখযুদ্ধ সংঘটিত হয়নি। তবে তারা যাতে লাখাইয়ে প্রবেশ করতে না পারে মুক্তিযোদ্ধারা তার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং শান্তিবাহিনী ও রাজাকারদের তৎপরতার বিরুদ্ধে সজাগ থেকে স্থানীয় মানুষদের জানমাল রক্ষায় ভূমিকা রাখে। উপজেলা সদরে মুক্তিযুদ্ধের ১টি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন লাখাই উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ১১০, মাযার ৫, মন্দির ৫, তীর্থস্থান ২।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৩.৭%; পুরুষ ৩৪.৮%, মহিলা ৩২.৮%। কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫১, কিন্ডার গার্টেন ১, মাদ্রাসা ১৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: লাখাই এসিআরসি হাইস্কুল (১৯৪৫), বাড়িশাল করাব হাইস্কুল (১৯৪৭), বামৈ হাইস্কুল (১৯৬১), করাব রাহমানিয়া মাদ্রাসা, জিগুরা তোফায়েলিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, সাংস্কৃতিক সংগঠন ২, অডিটোরিয়াম ১, কমিউনিটি সেন্টার ১,  খেলার মাঠ ৩, ক্লাব ৯।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৭.৪১%, অকৃষি শ্রমিক ৪.২৭%, ব্যবসা ১৩.০৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ০.৬%, চাকরি ৩.২৪%, নির্মাণ ০.৪৩%, ধর্মীয় সেবা ০.২৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩৩% এবং অন্যান্য ১০.৩৮%।

কৃষিভূমির  মালিকানা  ভূমিমালিক ৫৮.৯৩%, ভূমিহীন ৪১.০৭%। শহরে ৫৪.০৭% এবং গ্রামে ৫৯.৫৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  তিল, তিসি, কাউন।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, পেঁপে, নারিকেল, জাম।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৮, গবাদিপশু ৪০, হাঁস-মুরগি ৮৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৩৬.৭৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৩৫.৭৮ কিমি; নৌপথ ৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ওয়েল্ডিং কারখানা ৩।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৬, মেলা ৪। লাখাই বাজার, বুল্লা বাজার ও বামৈ গরুর হাট এবং কালীবাড়ি মেলা ও বুল্লা মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, পাট, মাছ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৭.৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয় জলের উৎস নলকূপ ৯৪.০%, ট্যাপ ০.১% এবং অন্যান্য ৫.৯%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৮.৬% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫৬.২% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ৫.২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৬, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৩, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১, মাতৃসদন ১, দাতব্য চিকিৎসালয় ১, পশু চিকিৎসা কেন্দ্র ২।

এনজিও ব্র্যাক, আশা।  [জয়ন্ত সিংহ রায়]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; লাখাই উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।