লাকসাম উপজেলা

লাকসাম উপজেলা (কুমিল্লা জেলা)  আয়তন: ১২৪.৭৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°১০´ থেকে ২৩°১৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°০১´ থেকে ৯১°১১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ও বরুড়া উপজেলা, দক্ষিণে নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে নাঙ্গলকোট ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, পশ্চিমে বরুড়া ও শাহরাস্তি উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৫৩৬৫০; পুরুষ ১২১৪৮৮, মহিলা ১৩২১৬২। মুসলিম ২৪১৫৪৮, হিন্দু ১১৬০৯, বৌদ্ধ ৪৬৪, খ্রিস্টান ২৬ এবং অন্যান্য ৩।

জলাশয় প্রধান নদী: ডাকাতিয়া, ছোট ফেনী। কার্জন খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন লাকসাম থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে। বাংলাদেশের বৃহৎ পাঁচটি রেলওয়ে জংশনের একটি এখানে অবস্থিত।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১০৪ ১৩৯ ৭০৬৩২ ১৮৩০১৮ ২০৩৩ ৬০.৩ ৫০.০
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৯.৮৬ ৩১ ৭০৬৩২ ৩৫৫৬ ৬০.৩
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আজগরা ৮৪ ৩৬৯১ ১৪৫৩৬ ১৫১২১ ৪৯.১
উত্তরদাহ ৮৭ ৩৫৮০ ১১৮৪৩ ১৩১২৭ ৫৪.০
কান্দিরপাড় ৭৭ ৫২০৭ ১৮১২২ ২০২৯৯ ৪৫.৭
গোবিন্দপুর ৩৫ ৪৭৯৯ ১২৫১৫ ১৪৬৬৮ ৪৬.১
মোদাফফরগঞ্জ ৬৩ ৫৯১৭ ১৮৯৮৯ ২১৬৬৩ ৫৪.২
লাকসাম ৫২ ২৭৩৫ ১০৪২০ ১১৭১৫ ৫১.৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ তিন গম্বুজ বিশিষ্ট কাজীর মসজিদ, দশ গম্বুজ বিশিষ্ট নবাব বাড়ি মসজিদ, তিন গম্বুজ বিশিষ্ট আরফাননেসা মসজিদ (১৮৮০), পশ্চিমগাঁও নবাব বাড়ি (পশ্চিমগাঁও), তিন গম্বুজ বিশিষ্ট আফরাননেসা মসজিদ (১৮৬৯), অতুলচন্দ্র জমিদার বাড়ি, শ্রী শ্রী জগন্নাথবাড়ি দেবালয় ও জগন্নাথ দিঘি।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ৬ এপ্রিল উপজেলার আজগরা বাজারে পাকবাহিনীর বোমা হামলায় প্রায় ২০০ জন মানুষ মারা যায়। তাছাড়াও মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে একাধিক লড়াইয়ে বেশ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয় এবং ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা কুমিল্লা এয়ারপোর্ট প্রতিরোধ যুদ্ধ এবং চুনাতি, চিতোষী, হাড়াতলী, আলীশ্বর প্রভৃতি স্থানে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও অপারেশন পরিচালনা করে। ১২ ডিসেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে উপজেলায় ৪টি স্থানে (বেলতলা, লাকসাম রেলওয়ে জংশন, পশ্চিমগাঁও, লাকসাম বিড়ি ফ্যাক্টরি) গণকবর রয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন লাকসাম উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৮।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৯৬২, মন্দির ১৮, মাযার ৭, মঠ ১, বৌদ্ধবিহার ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: আরফাননেসা মসজিদ, নবাব বাড়ি মসজিদ, গাজী সাহেবের মাযার, পানুয়া দরবার শরীফ, কালিয়াপুর পীর সাহেবের মাযার, রাজাপুর সৈয়দ শাহ্ ওলিউল্লাহ রাজাপুরী পীর সাহেবের মাযার, বরইগাঁও বৌদ্ধ বিহার।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫১.৫%; পুরুষ ৫১.১%, মহিলা ৫১.৮%। কলেজ ৪, পালি কলেজ ১, কারিগরি কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৭০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫০৪, কমিউনিটি স্কুল ১, মাদ্রাসা ৬০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ, লাকসাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, লাকসাম গার্লস উচ্চ বিদ্যালয়, হরিশ্চর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, বিএন উচ্চ বিদ্যালয়, দৌলতগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাজীমুড়া আলীয়া মাদ্রাসা।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: নয়া রবি; সাপ্তাহিক: লাকসাম বার্তা, জয়কণ্ঠ, সাপ্তাহিক লাকসাম, আলোর দিশারী; পাক্ষিক: নতুন আলো’ (অবলুপ্ত); সাপ্তাহিক:  গ্রাম বাংলা, মাসিক: দিলদার (অবলুপ্ত)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৮, ক্লাব ২, নাট্যমঞ্চ ১, নাট্যদল ১, সিনেমা হল ২।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪১.৪০%, অকৃষি শ্রমিক ৩.২৮%, শিল্প ১.১৭%, ব্যবসা ১৭.৭৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৫.১১%, চাকরি ১৪.৮৫%, নির্মাণ ১.৮২%, ধর্মীয় সেবা ০.৪৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৪.৬৫% এবং অন্যান্য ৯.৪৮%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৬.৬৭%, ভূমিহীন ৪৩.৩৩%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, গম, সরিষা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  পাট।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, পেঁপে, লিচু, কামরাঙা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৪০২, হাঁস-মুরগি ২৮, কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র ৪, হ্যাচারি ৬।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৯৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৮ কিমি, কাঁচারাস্তা ২০৬ কিমি; রেলপথ ২৯.৫৭ কিমি; নৌপথ ২৪ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি, মটরলঞ্চ।

শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, তেলকল, সিগারেট ফ্যাক্টরি, বিড়ি ফ্যাক্টরি।

হাটবাজার ও  মেলা  হাটবাজার ৫, মেলা ২। চন্দনা বাজার, হরিশ্চর বাজার, আজগরা বাজার, নরপাটি বাজার, লাকসাম জংশন বাজার এবং কেমতলী বৈশাখী মেলা ও নূরপুর মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  বিড়ি, সিগারেট, তেল।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৭৭.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৯.৩%, ট্যাপ ৪.৪% এবং অন্যান্য ৬.৩%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৫.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২১.৩% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩.২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, হাসপাতাল ৮, মা ও শিশুস্বাস্থ্য-কেন্দ্র ১, ক্লিনিক ৪, পরিবার-পরিকল্পনা কেন্দ্র ১৪, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৮।

এনজিও ব্র্যাক, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, ইউএনডিপি, আশা, প্রশিকা।  [মুহম্মদ নূর এ আলম সিদ্দিকী]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; লাকসাম উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।