লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা (লক্ষ্মীপুর জেলা)  আয়তন: ৪৮০.৩৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৪৯´ থেকে ২২°০৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৪৩´ থেকে ৯২°০০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে রায়পুর, রামগঞ্জ এবং চাটখিল উপজেলা, দক্ষিণে দৌলতখান, কমলনগর এবং নোয়াখালী সদর উপজেলা, পূর্বে বেগমগঞ্জ ও সোনাইমুড়ী উপজেলা, পশ্চিমে রায়পুর, মেহেন্দীগঞ্জ ও ভোলা সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ৬৮৪৪২৫; পুরুষ ৩২৫২৩৪, মহিলা ৩৫৯১৯১। মুসলিম ৬৫৮৭২৪, হিন্দু ২৫৫৪৪, বৌদ্ধ ১০২, খ্রিস্টান ৩৩ এবং অন্যান্য ২২।

জলাশয় মেঘনা, ভুলুয়া ও কোরালিয়া নদী এবং দেওপাড়া, মহেন্দ্র, মিঠানিয়া ও মুছার খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন লক্ষ্মীপুর থানা গঠিত হয় ১৮৬০ সালে। থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ২৪ মার্চ ১৯৮৪ সালে। লক্ষ্মীপুর পৌরসভা গঠিত হয় ১৯৭৬ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
২১ ২২৮ ২৫৮ ৮৬২৮৬ ৫৯৮১৩৯ ১৪২৫ ৫০.৮ (২০০১) ৫০.২
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৯.৪২ (২০০১) ১২ ২২ ৮৩১১২ ৩২৯৫ (২০০১) ৬৩.৯
পৌরসভার বাইরে উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
- ৩১৭৪ - ৬৩.৪
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
উত্তর জয়পুর ৯৫ ৩২৩৪ ৯৬৮৪ ১২০১২ ৬৫.৫
উত্তর হামছাদী ৭৫ ৫৫৬৪ ১৪৫৭০ ১৭৪৬০ ৬৯.৮
কুশাখালী ৫৫ ৮৩২৪ ১৫৫৬৪ ১৫৬৪৯ ২৭.৯
চন্দ্রগঞ্জ ২০ ৪৪১৩ ১৬৫২৫ ১৮৪৭৮ ৬৫.৭
চররমনী মোহন ২৩ ১৬৯০৬ ১৪৩৫৯ ১৩৫৮৬ ১৭.৯
চর রুহিতা ৩০ ৬৭৩৭ ১৭৭০৪ ১৯৬৫৮ ৩৩.১
চরশাহী ২৫ ৪৫২১ ১৩১০১ ১৫৮৮৬ ৫৩.৬
টুমচর ৮৯ ৩৩৯৬ ১০৫০৬ ১১২৯১ ৪২.০
তেয়ারীগঞ্জ ৮৭ ৭৯৪০ ১৩০৭৬ ১৩৮৩৫ ৩৬.১
দক্ষিণ হামছাদী ৯০ ৩৫৯৮ ১১৯৫৩ ১৪৩৯৮ ৬৫.৪
দত্তপাড়া ৪০ ৪৬৯১ ১৫১৫৬ ১৭১৯৭ ৬৩.১
দালাল বাজার ৩৫ ৩৪৮৩ ১৫৫৬৬ ১৮২৫৫ ৫৩.৩
দিঘলী ৪৫ ৪২৫৮ ১১৩৪৭ ১৩৪৯২ ৪৯.৭
পার্বতী নগর ৮০ ৩০২০ ৮১৮৯ ৯৮৭১ ৬৫.৬
বাঙ্গাখাঁ ১৩ ৪৩৩৬ ১৩৪৫৬ ১৪৬৮৪ ৫৫.১
বশিকপুর ১৪ ৪৫৫৪ ১২৭১০ ১৬০০৩ ৬৪.৪
ভবানীগঞ্জ ১৫ ৯৫৬০ ১৯৬৬৪ ২১০০২ ৩৩.৮
মান্দারী ৭০ ৫৩৬৭ ১৬৬৭১ ১৮১০৪ ৫০.৮
লাহারকান্দি ৬০ ৪২৫৪ ১৩৭৫৬ ১৫২৩০ ৪৫.১
শাকচর ৮৫ ২১৭৩ ৭৩৮৬ ৭৮৫৩ ৩৩.৫
হাজীরপাড়া ৫০ ৩৫৮০ ১২১২৯ ১৪২৯৭ ৬৪.১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ তিতা খাঁ জামে মসজিদ, মিতা খাঁ মসজিদ, মজুপুর মটকা মসজিদ, মধুবানু মসজিদ, দায়েম শাহ মসজিদ, আবদুল্লাহপুর জামে মসজিদ, নীল কুঠিবাড়ি, দালাল বাজার জমিদার বাড়ি, খোয়াসাগর দীঘি।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯২৭ সালে কাজী নজরুল ইসলামকে লক্ষ্মীপুর টাউন ক্লাবের উদ্যোগে এক সংবর্ধনা দেয়া হয়।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে লক্ষ্মীপুরের মুক্তিবাহিনী ৭ জুন রামগঞ্জ সড়কে পাকবাহিনীর একটি ট্রাক ও একটি জীপ ধ্বংস করে, ৬ জুলাই লক্ষ্মীপুর শহরের প্রবেশমুখে রহমতখালী সেতুর কাছে অতকির্তে হামলা চালিয়ে ৭২ জন পাকসেনা এবং ২৫ অক্টোবর মীরগঞ্জ সম্মুখযুদ্ধে পাকবাহিনীর মেজর সহ ৭০ জন সৈন্য ও ৪১ জন রেঞ্জারকে হত্যা করে। ১৪ ডিসেম্বর এই অঞ্চল শত্রুমুক্ত হয়। উপজেলার বাগবাড়িতে ১টি গণকবর রয়েছে; কোর্ট বিল্ডিং সংলগ্ন বিজয় সরণি চত্বরে ১টি স্মৃতিস্তম্ভ এবং শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালায় মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে ১টি স্মৃতিফলক স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৭৩১, মন্দির ৩, গির্জা ১, দরগাহ ১, মাযার ৩। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: মজুপুর মটকা মসজিদ, তিতাখাঁ মসজিদ, সৈয়দপুর জামে মসজিদ, মধুবানু মসজিদ, শ্রী শ্রী গোবিন্দ মহাপ্রভু জিউ আখড়া, জোসেফ চার্চ, লক্ষ্মীনারায়ণ বৈষ্ণব মঠ।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫১.৯%; পুরুষ ৫১.২%, মহিলা ৫২.৫%। কলেজ ৮, পিটিআই ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬৯, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৬৭, স্যাটেলাইট বিদ্যালয় ১০, কমিউনিটি বিদ্যালয় ১৭, মাদ্রাসা ৮৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ (১৯৬৪), লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৬), লক্ষ্মীপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৮), গোপালপুর দ্বারিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০১), চৌপল­ী কে.ডি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৫), দত্তপাড়া রামরতন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১২), মরপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), দালাল বাজার এন.কে উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), চৌপল­ী জয়তারা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৮), গোপীনাথপুর চম্পকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৯), প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (১৯৫৩), লক্ষ্মীপুর আলীয়া মাদ্রাসা (১৮৭২)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: লক্ষ্মীপুর কণ্ঠ (১৯৯৫), আল-চিশত (১৯৯৫), মালঞ্চ; সাপ্তাহিক: নতুন সমাজ, নতুন দেশ (১৯৭৩), এলান (১৯৮২), নতুন পথ (১৯৮৭), দামামা (১৯৯২); মাসিক: লক্ষ্মীপুর বার্তা (১৯৮৯); অবলুপ্ত সাপ্তাহিক ও সাময়িকী: মুক্তিবাণী (১৯২৮), সাপ্তাহিক গণমুখ (১৯৭৩), চেতনা (১৯৬৯), সাপ্তাহিক আনন্দ আকাশ (১৯৯৫), প্রচ্ছদ (১৯৮৪), ছায়াপথ, কবিতা বার্তা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৬, নাট্যদল ৩, সিনেমা হল ৩, সাংস্কৃতিক সংগঠন ১৫, মহিলা সংগঠন ৩৫, ক্লাব ২১।

দর্শনীয় স্থান মজু চৌধুরীর হাট স্ল্যুইস গেইট-মেঘনা পাড়, সাহাপুরের সাহেব বাড়ী, দালাল বাজার জমিদার বাড়ী, কামান খোলা জমিদার বাড়ী, খোয়াসাগর দীঘি।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪২.৯২%, অকৃষি শ্রমিক ৩.১২%, শিল্প ১.০৪% ব্যবসা ১৪.৩৪%, চাকরি ১৩.৪৬%, যোগাযোগ ও পরিবহণ ৪.৫০%, নির্মাণ ২.৪৯%, ধর্মীয় সেবা ০.৪৬%, রেন্ট এন্ড রেমিটেন্স ৪.৯৮% এবং অন্যান্য ১২.৬৯%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬২.০০%, ভূমিহীন ৩৮%। শহরে ৫৫.৯৯%  এবং গ্রামে ৬২.৭৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, সরিষা, আলু, চীনাবাদাম, সয়াবিন, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  পাট, তিল, তিসি, খেসারি, মসুর, অড়হর, মটর, ছোলা, পিঁয়াজ, রসুন।

প্রধান ফল-ফলাদি নারিকেল, সুপারি, কলা, আম।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ৪০, হাঁস-মুরগি ৭৪, হ্যাচারি ১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৭৪১ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩২ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৯৮৪ কিমি; নৌপথ ৪.৮৬ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা চালকল, আটাকল, বরফকল, স’মিল, তেলকল, এ্যালুমিনিয়াম ফ্যাক্টরি, বেকারি, বিড়ি কারখানা, ছাপাখানা।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ, শীতল পাটি, নকশি কাঁথা।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৫৭, মেলা ৩। লক্ষ্মীপুর বাজার, চন্দ্রগঞ্জ বাজার, দালাল বাজার, মান্দারী বাজার, ভবানীগঞ্জ বাজার, ফরাশগঞ্জ বাজার, জকসীন হাট, পোদ্দার হাট, দাসের হাট এবং দালালপুর ঝুলনযাত্রা মেলা, দেওয়ান শাহ মেলা ও শ্যামপুর মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য সুপারি, নারিকেল, ইলিশ মাছ, বিড়ি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৩.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৭.৫%, ট্যাপ ৫.৯% এবং অন্যান্য ৬.৬%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে ।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৮.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৮.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ২.৯% পরিবারের কোনো স্যানিটেশন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র সদর হাসপাতাল ১, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র ৭, মাতৃসদন কেন্দ্র ২, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১৪, ক্লিনিক ১৩৫।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৭২৬ সালের ভূমিকম্প, ১৮৭৬ সালের টর্নেডো, ১৮৭৬ ও ১৯৫৪ সালের মহামারী কলেরা, ১৯৭০ সালের প্লাবন ও ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে এ উপজেলার মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কেয়ার, হাঙ্গার প্রজেক্ট। [নাজিমউদ্দিন মাহমুদ]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।