লংগদু উপজেলা
লংগদু উপজেলা (রাঙ্গামাটি জেলা) আয়তন: ৩৮৮.৪৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৪৮´ থেকে ২৩°০৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°০৫´ থেকে ৯২°১৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বাঘাইছড়ি ও দীঘিনালা উপজেলা (খাগড়াছড়ি), দক্ষিণ ও পূর্বে বরকল উপজেলা, পশ্চিমে রাঙ্গামাটি সদর, নানিয়ারচর, মহালছড়ি ও খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা।
জনসংখ্যা ৮১৫৪৮; পুরুষ ৪২২২৬, মহিলা ৩৯৩২২। মুসলিম ৫৯৫১১, হিন্দু ১০৪৫, বৌদ্ধ ২০৭০৮, খ্রিস্টান ২৪৪ এবং অন্যান্য ৪০। এ উপজেলায় চাকমা, ত্রিপুরা, পাংখোয়া প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠির বসবাস রয়েছে।
জলাশয় প্রধান নদী: মাইনি; কাসালং খাল, হাজাছড়া বিল উল্লেখযোগ্য। উপজেলার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকা জুড়ে কাপ্তাই লেক অবস্থিত।
প্রশাসন লংগদু থানা গঠিত হয় ১৯০৯ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮২ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ৭ | ২৫ | ১৩৮ | ১১৩৯১ | ৭০১৫৭ | ২১০ | ৫২.১ | ৪২.৯ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
৭৯.৩৩ | ১ | ১১৩৯১ | ১৪৪ | ৫২.১ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
আদ্রকছড়া ১৩ | ১৬৩১৫ | ৫৯৬৩ | ৫৫৬৩ | ৪০.৩ | ||||
কলাপাকুজ্যা ৬০ | ৩০০১ | ৩৭৬৬ | ৩৮৬৪ | ৪১.৯ | ||||
গুলশাখালী ৫৪ | ২৮৪১০ | ৪৯৫৮ | ৪৫৮২ | ৪২.৪ | ||||
বগাচতর ৪০ | ১৭০৪৩ | ৬৮৭৯ | ৬৩২২ | ৩৮.০ | ||||
ভাসাইন্যা আদম ২৭ | ২২৮৮৭ | ৪০৮৩ | ৩৭৪৭ | ৩৭.৪ | ||||
মাইনিমুখ ৮১ | ৫৪৮৩ | ৮৮০০ | ৭৯৩৩ | ৫০.৭ | ||||
লংগদু ৬৭ | ৩৫৪৪৭ | ৭৭৭৭ | ৭৩১১ | ৫০.৭ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী এ উপজেলায় ব্যাপক গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। বগাচতর ইউনিয়নের আমবাগান ও রাঙ্গীপাড়ায় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ৬ ডিসেম্বর লংগদু শত্রুমুক্ত হয়। উপজেলায় ১টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন লংগদু উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৫৮, মন্দির ৭, গির্জা ৪, প্যাগোডা ৭। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: মাইনিমুখ কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ, রাবেতা হাসপাতাল জামে মসজিদ, আটরকছড়া গির্জা।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৪.২%; পুরুষ ৪৯.২ %, মহিলা ৩৮.৮%। কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭২, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৪, মাদ্রাসা ১০, এতিমখানা ৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: রাবেতা মডেল কলেজ (১৯৯৫), লংগদু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, লংগদু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রাবেতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, কাট্টলি উচ্চ বিদ্যালয়, গুলশাখালী উচ্চ বিদ্যালয়, মাইনিমুখ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রসা।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৪৮, লাইব্রেরি ৩, প্রেসক্লাব ১, সিনেমা হল ১, শিল্পকলা একাডেমী ১, মহিলা সংগঠন ১০, খেলার মাঠ ১২।
দর্শনীয় স্থান বনশ্রী রেষ্ট হাউজ (১৯০০), লংগদু বন বিহার, তিন টিলা বন বিহার (১৯৭০), ডুলছড়ি জেত বনবিহার (২০০০), গাথাঁছড়া বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স, রাবেতা হাসপাতালের রেস্ট হাউজ।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৯%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৩৫%, ব্যবসা ৯.২৭%, চাকরি ৫.৯৫%, নির্মাণ ০.৬০%, ধর্মীয় সেবা ০.৩০%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.১৮% এবং অন্যান্য ৮.৩৫%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৮.৮৭%, ভুমিহীন ৩১.১৩%। শহরে ৭৫.৪৬% এবং গ্রামে ৪৩.১২% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, ভুট্টা, ডাল, তুলা, তামাক, আলু।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি সরিষা, কাউন।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, নারিকেল, আনারস, পেঁপে।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১১৫, গবাদিপশু ১০, হাঁস-মুরগি ১৬।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫২ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৯৬ কিমি; নদীপথ ৫২ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা চালকল, আটাকল, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত কারখানা, বস্ত্র কারখানা, ইটভাটা, ওয়েল্ডিং কারখানা।
কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প ১৬৩২, লৌহশিল্প ১২, স্বর্ণশিল্প ১৬, কাঠের কাজ ১১৭, বাঁশ ও বেতের কাজ ৭৫।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১২। বড় মাইনিমুখ বাজার, করল্যাছড়ি বাজার, বৈরাগী বাজার, কাট্টলী এবং ভাই বোন ছড়া হাট উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য কাঠ, কাঁঠাল, আনারস, তামাক।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৬.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ২৬.৯%, ট্যাপ ০.৫% এবং অন্যান্য ৭২.৬%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ১৯.২% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৭৬.৪% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৪.৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৯১ সালের ২৯ শে এপ্রিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে এ উপজেলার বহু লোকের প্রাণহানিসহ মৎস্য, গবাদিপশু, ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ৩, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৬, কমিউনিটি ক্লিনিক ৭, পশু হাসপাতাল ১।
এনজিও আশা, ব্র্যাক, সি সি আর ডি বি। [গৌতম চন্দ্র মোদক]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রির্পোট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; লংগদু উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।