ল, জাঁ
ল, জাঁ পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পেছনে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলির অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী। জন্মসূত্রে (১৭২০) ব্রিটিশ নাগরিক এবং ফ্রান্সের স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি নিজেও পলাশী যুদ্ধের কিছু কিছু ঘটনায় প্রত্যক্ষ অথবা নেপথ্য পরামর্শক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। শতাব্দীর একজন সুচিহ্নিত ভাগ্যান্বেষী হিসেবে তিনি বরাবরই পরিস্থিতি স্বীয় অনুকূলে আনার কাজে তৎপর ছিলেন এবং বিজয়ী পক্ষকে সমর্থন করে পরিস্থিতি থেকে ফায়দা নেওয়ার জন্য সর্বদাই প্রস্ত্তত থাকতেন। নওয়াব সিরাজউদ্দৌলা যখন শওকত জং এর বিরুদ্ধে উত্তরাধিকার যুদ্ধে জয়লাভ করেন, তখন জাঁ ল বিদ্রোহীদের প্রতি তাঁর সমর্থন প্রত্যাহার করে নিজেকে নওয়াবের অনুগ্রহপ্রার্থী করে তোলেন। সিরাজউদ্দৌলার সিংহাসনারোহণকালে তিনি কাসিমবাজারের অদূরে সায়দাবাদে ফরাসি কুঠির কুঠিয়াল ছিলেন। সিরাজউদ্দৌলার নিকট উইলিয়ম ওয়াট্সের আত্মসমর্পণের অব্যবহিত পরে জাঁ ল কাসিমবাজারের ইংরেজ কুঠির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। যতদিন নওয়াব তাঁর নিরাপত্তা বিধান করেন ততদিনই জাঁ ল তাঁকে সমর্থন করেন। কিন্তু নওয়াবের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র দানা বেঁধে উঠলে তিনি তাঁর পৃষ্ঠপোষক সিরাজউদ্দৌলাকে ত্যাগ করেন এবং স্বীয় নিরাপত্তার জন্য কাসিমবাজার ছেড়ে পাটনায় চলে যান। অতঃপর তিনি সম্রাট শাহ আলমের সঙ্গে যোগ দেন এবং তাঁর সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে বাংলায় ব্যর্থ অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। এক পর্যায়ে ইংরেজরা তাঁকে বন্দি করে। মুক্তি পেয়ে তিনি ১৭৬২ সালে ভারত ত্যাগ করেন। ফরাসি সরকার তাঁকে ‘শেভালিয়্যা’ উপাধি দিয়ে পরপর কর্নেল, রাজার কমিস্যারি, পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে সামরিক এলাকার সেনাপতি এবং পন্ডিচেরির গভর্নর নিযুক্ত করেন। আঠারো শতকে বাংলার রাজনৈতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে জাঁ ল-এর পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে রচিত Memoire sur I’ Empire Mogul শীর্ষক গ্রন্থটি পন্ডিতদের নিকট বাংলার ক্রান্তিকালীন ঘটনাপ্রবাহের সমসাময়িক প্রামাণ্য দলিল হিসেবে পরিগণিত। [সিরাজুল ইসলাম]