রিসালাত-উস-শুহাদা

রিসালাত-উস-শুহাদা  ১৬৩৩ খ্রিস্টাব্দে পীর মুহম্মদ সত্তারী কর্তৃক ফারসি ভাষায় রচিত একটি গ্রন্থ। এই গ্রন্থে শাহ ইসমাইল গাজী (রঃ) এবং তাঁর কয়েকজন সহযোদ্ধার শাহাদাত বরণের কথা বিবৃত হয়েছে। রংপুর জেলার কান্তদুয়ারে শাহ ইসমাইল গাজীর একটি মাযার আছে। জি.এইচ দামান সেখান থেকে পুস্তিকাখানি সংগ্রহ করেন। তিনি এটি অনুবাদ করে ১৮৭৪ সালে কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটির জার্নালে প্রকাশ করেন। গ্রন্থটি ফারসি ভাষায় লেখা হলেও এতে কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও মহানবী (স.)-এর হাদিস উদ্ধৃত হয়েছে। স্বভাবতই উদ্ধৃত হাদিসগুলি আরবি ভাষায় লেখা।

মক্কাশরীফে শাহ ইসমাইল গাজীর জন্ম হওয়া থেকে শুরু করে বাংলায় তাঁর শাহাদাত বরণ পর্যন্ত ঘটনাবলি রিসালাত-উস-শুহাদায় বর্ণিত হয়েছে। রুকনুদ্দীন বারবক শাহর (১৪৫৯-১৪৭৪ খ্রি) আদেশে তাঁর শিরশ্ছেদ করা হয়। তবে ১৬০৯ খ্রিস্টাব্দে লিখিত আবদুল লতীফের ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সুলতান শামসুদ্দীন মুজাফফর শাহের শাসনামলে (১৪৯১-১৪৯৩) শাহ ইসমাইল গাজী (রঃ) জীবিত ছিলেন। এই গ্রন্থে ঘোড়াঘাটে অবস্থিত শাহ ইসমাইল গাজীর মাযারেরও উল্লেখ আছে। সুতরাং আবদুল লতীফের সাক্ষ্যের সাথে রিসালাত প্রদত্ত তথ্যের মিল নেই। আবদুল লতীফের ডায়েরির ২৪ বছর পর রিসালাত লেখা হয়। এমন কোনা তথ্যপ্রমাণ নেই যে, আবদুল লতীফ ও পীর মুহম্মদ সত্তারী পরস্পরকে চিনতেন কিংবা একে অপরের গ্রন্থ পড়েছেন। শাহ ইসমাইল গাজীর মৃত্যুর যে তারিখ রিসালাত-উস-শুহাদা থেকে জানা যায় (৮৭৮ হি/১৪৭৪ খ্রি) তার প্রায় ১০০ বছরেরও অধিক সময়ের পর দুটি পুস্তকই লেখা হয়। যেহেতু দুটি পুস্তকে উল্লিখিত তারিখের মিল নেই, সেহেতু কোন তারিখই নির্ভরযোগ্য নয় বলে মনে হয়।

বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল শাহ ইসমাইল গাজীর মরদেহ ধারণ করে আছে বলে জনশ্রুতি আছে। কিংবদন্তি অনুসারে দরবেশের মাথা রংপুরের কান্তদুয়ারে এবং তার দেহ হুগলি জেলার মান্দারন-এ সমাহিত আছে। শুধু রংপুরেই দরবেশের ৪টি মাযার নির্দেশ করা হয়। আবদুল লতীফের ডায়েরি অনুসারে দরবেশ ঘোড়াঘাটের পুরানো দুর্গের উত্তর কোণে সমাহিত আছেন। আবদুল লতীফের সময় দরবেশের মাযারের ছোট আচ্ছাদনটি জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। কিন্তু বর্তমানে মাযারটি পাকা দালানে সংরক্ষিত।  [আবদুল করিম]