রায়, বিধানচন্দ্র: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''রায়, বিধানচন্দ্র '''(১৮৮২-১৯৬২)'''  '''চিকিৎসক ও রাজনীতিবিদ। প্রকাশচন্দ্র রায় ও অঘোরকামিনী দেবীর পুত্র বিধানচন্দ্র রায় পাটনার বাঁকীপুরে ১ জুলাই ১৮৮২ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে ১৮৯৭ সালে পাটনা কলিজিয়েট স্কুল থেকে এনট্র্যান্স পরীক্ষায় কৃতকার্য হন। ১৮৯৯ সালে পাটনা কলেজ থেকে তিনি এফ.এ পাস করেন। গণিতে সম্মান সহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯০১ সালে তিনি ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজে যোগ দেন। ১৯০৬ সালে [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়|কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে তিনি এম.এস.এস ডিগ্রি এবং ১৯১১ সালে ইংল্যান্ড থেকে এম.আর.সি.পি ও এফ.আর.সি.এস ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশে প্রত্যাবর্তনের পর খুব শীঘ্রই তিনি চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
'''রায়, বিধানচন্দ্র '''(১৮৮২-১৯৬২) চিকিৎসক ও রাজনীতিবিদ। প্রকাশচন্দ্র রায় ও অঘোরকামিনী দেবীর পুত্র বিধানচন্দ্র রায় পাটনার বাঁকীপুরে ১ জুলাই ১৮৮২ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে ১৮৯৭ সালে পাটনা কলিজিয়েট স্কুল থেকে এনট্র্যান্স পরীক্ষায় কৃতকার্য হন। ১৮৯৯ সালে পাটনা কলেজ থেকে তিনি এফ.এ পাস করেন। গণিতে সম্মান সহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯০১ সালে তিনি ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজে যোগ দেন। ১৯০৬ সালে [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়|কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে তিনি এম.এস.এস ডিগ্রি এবং ১৯১১ সালে ইংল্যান্ড থেকে এম.আর.সি.পি ও এফ.আর.সি.এস ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশে প্রত্যাবর্তনের পর খুব শীঘ্রই তিনি চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।


[[Image:BidhanChndra.jpg|thumb|right|বিধানচন্দ্র রায়]]
চিওরঞ্জন দাশের উৎসাহেই তিনি ১৯২০-এর দশকের প্রথম ভাগে বাংলার রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯২৩ সালের নির্বাচনে ব্যারাকপুর মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনী এলাকা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীকে পরাজিত করেন। ১৯২৫ সালে তিনি স্বরাজ পার্টিতে যোগ দেন এবং সি.আর দাশের মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে গঠিত ট্রাস্ট ফান্ডের ট্রাস্টি নিযুক্ত হন। এর পর থেকেই ডাক্তার রায় নিজেকে জাতীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে ফেলেন। তিনি মহাত্মা গান্ধীর মাঝে তাঁর দ্বিতীয় গুরু খুঁজে পান। ১৯২৯ সালে তিনি এ.আই.সি.সি-এর সদস্য নির্বাচিত হন এবং এর ৪৪তম লাহোর অধিবেশনে যোগ দেন। লাহোর অধিবেশনে জওহরলাল নেহরু পূর্ণ স্বরাজ-এর প্রস্তাব উপস্থাপন করলে কলকাতার যুব নেতাগণ এই প্রস্তাব সমর্থন করেন। তাঁদের মধ্যে [[বসু, সুভাষচন্দ্র|সুভাষচন্দ্র বসু]], [[বসু, শরৎচন্দ্র|শরৎচন্দ্র বসু]] এবং বিধানচন্দ্রও ছিলেন।
চিওরঞ্জন দাশের উৎসাহেই তিনি ১৯২০-এর দশকের প্রথম ভাগে বাংলার রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯২৩ সালের নির্বাচনে ব্যারাকপুর মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনী এলাকা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীকে পরাজিত করেন। ১৯২৫ সালে তিনি স্বরাজ পার্টিতে যোগ দেন এবং সি.আর দাশের মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে গঠিত ট্রাস্ট ফান্ডের ট্রাস্টি নিযুক্ত হন। এর পর থেকেই ডাক্তার রায় নিজেকে জাতীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে ফেলেন। তিনি মহাত্মা গান্ধীর মাঝে তাঁর দ্বিতীয় গুরু খুঁজে পান। ১৯২৯ সালে তিনি এ.আই.সি.সি-এর সদস্য নির্বাচিত হন এবং এর ৪৪তম লাহোর অধিবেশনে যোগ দেন। লাহোর অধিবেশনে জওহরলাল নেহরু পূর্ণ স্বরাজ-এর প্রস্তাব উপস্থাপন করলে কলকাতার যুব নেতাগণ এই প্রস্তাব সমর্থন করেন। তাঁদের মধ্যে [[বসু, সুভাষচন্দ্র|সুভাষচন্দ্র বসু]], [[বসু, শরৎচন্দ্র|শরৎচন্দ্র বসু]] এবং বিধানচন্দ্রও ছিলেন।


বিধানচন্দ্র রায় ১৯৩০ সালে এ.আই.সি.সি-র দিল্লির অধিবেশনে যোগ দেন। কিন্তু সরকার এ অধিবেশনকে অবৈধ ঘোষণা করলে অন্যদের সাথে তিনিও কারারুদ্ধ হন। বন্দি থাকা অবস্থায় জেল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে আলিপুর জেল হাসপাতালের দায়িত্ব গ্রহণ ও বন্দিদের চিকিৎসা করেন। ১৯৩০-এর দশকে তিনি কলকাতা করপোরেশনের রাজনীতিতে যোগ দেন এবং ১৯৩১ ও ১৯৩২-এ দুবার মেয়র নির্বাচিত হন। চার্লস টেগার্ত অভিযোগ করেন যে, [[কলকাতা কর্পোরেশন|কলকাতা করপোরেশন]] বাঙালি বিপ্লবীদের নিয়ন্ত্রণে। রায় এই অভিযোগের নিন্দা করেন এবং এর ফলে তিনি জাতীয়তাবাদীদের আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন।
বিধানচন্দ্র রায় ১৯৩০ সালে এ.আই.সি.সি-র দিল্লির অধিবেশনে যোগ দেন। কিন্তু সরকার এ অধিবেশনকে অবৈধ ঘোষণা করলে অন্যদের সাথে তিনিও কারারুদ্ধ হন। বন্দি থাকা অবস্থায় জেল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে আলিপুর জেল হাসপাতালের দায়িত্ব গ্রহণ ও বন্দিদের চিকিৎসা করেন। ১৯৩০-এর দশকে তিনি কলকাতা করপোরেশনের রাজনীতিতে যোগ দেন এবং ১৯৩১ ও ১৯৩২-এ দুবার মেয়র নির্বাচিত হন। চার্লস টেগার্ত অভিযোগ করেন যে, [[কলকাতা কর্পোরেশন|কলকাতা করপোরেশন]] বাঙালি বিপ্লবীদের নিয়ন্ত্রণে। রায় এই অভিযোগের নিন্দা করেন এবং এর ফলে তিনি জাতীয়তাবাদীদের আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন।


মহাত্মা গান্ধীর অনুপ্রেরণা থেকে তিনি বাংলায় একটি আঞ্চলিক অস্পৃশ্যতা বিরোধী ফোরাম গঠন করেন।
মহাত্মা গান্ধীর অনুপ্রেরণা থেকে তিনি বাংলায় একটি আঞ্চলিক অস্পৃশ্যতা বিরোধী ফোরাম গঠন করেন। ১৯৩২ সালের ২৫ জুন কলকাতা টাউন হলে সর্ব ভারতীয় অস্পৃশ্যতা বিরোধী দিবসের অধিবেশনে তিনি সভাপতিত্ব করেন। ১৯৩৩-৩৪ সালে ড. আনসারীর সহযোগিতায় তিনি স্বরাজ র্পাটির পুনরুত্থানে স্বচেষ্ট হন। তাঁর এই প্রচেষ্টায় গান্ধীর সম্মতি ছিল।
 
[[Image:BidhanChndra.jpg|thumb|right|বিধানচন্দ্র রায়]]
 
 
১৯৩২ সালের ২৫ জুন কলকাতা টাউন হলে সর্ব ভারতীয় অস্পৃশ্যতা বিরোধী দিবসের অধিবেশনে তিনি সভাপতিত্ব করেন। ১৯৩৩-৩৪ সালে ড. আনসারীর সহযোগিতায় তিনি স্বরাজ র্পাটির পুনরুত্থানে স্বচেষ্ট হন। তাঁর এই প্রচেষ্টায় গান্ধীর সম্মতি ছিল।


১৯৩৫-১৯৪০ সময় তাঁর জন্য ঘটনাবহুল ছিল। শরৎ বসুর সাথে মতবিরোধের কারণে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে তিনি ইস্তফা দেন এবং কিছু সময়ের জন্য রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন। অবশ্য গান্ধীর মধ্যস্থতায় কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি পুনরায় যোগ দেন। তিনি ভারতীয় মেডিক্যাল কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো মনোনীত করা হয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সূত্রপাতে এ.আই.সি.সি তাদের নীতি পরিবর্তন করে আইন পরিষদ বর্জন করলে তিনি ওয়ার্কিং কমিটি থেকে ইস্তফা দেন। তিনি বাংলায় ফিরে আসেন এবং কলকাতা করপোরেশনের অল্ডারম্যান (Alderman) নির্বাচিত হন।
১৯৩৫-১৯৪০ সময় তাঁর জন্য ঘটনাবহুল ছিল। শরৎ বসুর সাথে মতবিরোধের কারণে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে তিনি ইস্তফা দেন এবং কিছু সময়ের জন্য রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন। অবশ্য গান্ধীর মধ্যস্থতায় কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি পুনরায় যোগ দেন। তিনি ভারতীয় মেডিক্যাল কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো মনোনীত করা হয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সূত্রপাতে এ.আই.সি.সি তাদের নীতি পরিবর্তন করে আইন পরিষদ বর্জন করলে তিনি ওয়ার্কিং কমিটি থেকে ইস্তফা দেন। তিনি বাংলায় ফিরে আসেন এবং কলকাতা করপোরেশনের অল্ডারম্যান (Alderman) নির্বাচিত হন।

০৭:০১, ৯ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

রায়, বিধানচন্দ্র (১৮৮২-১৯৬২) চিকিৎসক ও রাজনীতিবিদ। প্রকাশচন্দ্র রায় ও অঘোরকামিনী দেবীর পুত্র বিধানচন্দ্র রায় পাটনার বাঁকীপুরে ১ জুলাই ১৮৮২ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে ১৮৯৭ সালে পাটনা কলিজিয়েট স্কুল থেকে এনট্র্যান্স পরীক্ষায় কৃতকার্য হন। ১৮৯৯ সালে পাটনা কলেজ থেকে তিনি এফ.এ পাস করেন। গণিতে সম্মান সহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯০১ সালে তিনি ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজে যোগ দেন। ১৯০৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এম.এস.এস ডিগ্রি এবং ১৯১১ সালে ইংল্যান্ড থেকে এম.আর.সি.পি ও এফ.আর.সি.এস ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশে প্রত্যাবর্তনের পর খুব শীঘ্রই তিনি চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।

বিধানচন্দ্র রায়

চিওরঞ্জন দাশের উৎসাহেই তিনি ১৯২০-এর দশকের প্রথম ভাগে বাংলার রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯২৩ সালের নির্বাচনে ব্যারাকপুর মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনী এলাকা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীকে পরাজিত করেন। ১৯২৫ সালে তিনি স্বরাজ পার্টিতে যোগ দেন এবং সি.আর দাশের মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে গঠিত ট্রাস্ট ফান্ডের ট্রাস্টি নিযুক্ত হন। এর পর থেকেই ডাক্তার রায় নিজেকে জাতীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে ফেলেন। তিনি মহাত্মা গান্ধীর মাঝে তাঁর দ্বিতীয় গুরু খুঁজে পান। ১৯২৯ সালে তিনি এ.আই.সি.সি-এর সদস্য নির্বাচিত হন এবং এর ৪৪তম লাহোর অধিবেশনে যোগ দেন। লাহোর অধিবেশনে জওহরলাল নেহরু পূর্ণ স্বরাজ-এর প্রস্তাব উপস্থাপন করলে কলকাতার যুব নেতাগণ এই প্রস্তাব সমর্থন করেন। তাঁদের মধ্যে সুভাষচন্দ্র বসু, শরৎচন্দ্র বসু এবং বিধানচন্দ্রও ছিলেন।

বিধানচন্দ্র রায় ১৯৩০ সালে এ.আই.সি.সি-র দিল্লির অধিবেশনে যোগ দেন। কিন্তু সরকার এ অধিবেশনকে অবৈধ ঘোষণা করলে অন্যদের সাথে তিনিও কারারুদ্ধ হন। বন্দি থাকা অবস্থায় জেল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে আলিপুর জেল হাসপাতালের দায়িত্ব গ্রহণ ও বন্দিদের চিকিৎসা করেন। ১৯৩০-এর দশকে তিনি কলকাতা করপোরেশনের রাজনীতিতে যোগ দেন এবং ১৯৩১ ও ১৯৩২-এ দুবার মেয়র নির্বাচিত হন। চার্লস টেগার্ত অভিযোগ করেন যে, কলকাতা করপোরেশন বাঙালি বিপ্লবীদের নিয়ন্ত্রণে। রায় এই অভিযোগের নিন্দা করেন এবং এর ফলে তিনি জাতীয়তাবাদীদের আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন।

মহাত্মা গান্ধীর অনুপ্রেরণা থেকে তিনি বাংলায় একটি আঞ্চলিক অস্পৃশ্যতা বিরোধী ফোরাম গঠন করেন। ১৯৩২ সালের ২৫ জুন কলকাতা টাউন হলে সর্ব ভারতীয় অস্পৃশ্যতা বিরোধী দিবসের অধিবেশনে তিনি সভাপতিত্ব করেন। ১৯৩৩-৩৪ সালে ড. আনসারীর সহযোগিতায় তিনি স্বরাজ র্পাটির পুনরুত্থানে স্বচেষ্ট হন। তাঁর এই প্রচেষ্টায় গান্ধীর সম্মতি ছিল।

১৯৩৫-১৯৪০ সময় তাঁর জন্য ঘটনাবহুল ছিল। শরৎ বসুর সাথে মতবিরোধের কারণে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে তিনি ইস্তফা দেন এবং কিছু সময়ের জন্য রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন। অবশ্য গান্ধীর মধ্যস্থতায় কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি পুনরায় যোগ দেন। তিনি ভারতীয় মেডিক্যাল কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো মনোনীত করা হয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সূত্রপাতে এ.আই.সি.সি তাদের নীতি পরিবর্তন করে আইন পরিষদ বর্জন করলে তিনি ওয়ার্কিং কমিটি থেকে ইস্তফা দেন। তিনি বাংলায় ফিরে আসেন এবং কলকাতা করপোরেশনের অল্ডারম্যান (Alderman) নির্বাচিত হন।

যুদ্ধচলাকালে ভারতীয় সরকার আর্মি মেডিক্যাল কোর গঠনের জন্য বিধানচন্দ্রের সহযোগিতা প্রার্থনা করলে ১৯৪২ সালে গান্ধীর সম্মতি নিয়ে তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ঐ একই বছর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর পদে নিযুক্ত হন। ১৯৪৩ সালে গান্ধী তাঁর অনশন শুরু করলে তিনি স্বেচ্ছায় এই নেতার শারীরিক অবস্থা তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নেন। পরর্বতী বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় রায়কে 'Doctor of Science' সম্মানে ভূষিত করে।

১৯৪৬ সালে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির অনুরোধে মালয়ে হতাশাগ্রস্ত ভারতীয়দের দুর্দশা থেকে উদ্ধারের জন্য তিনি মেডিক্যাল মিশনের নেতৃত্ব দেন। কলকাতা দাঙ্গায় (১৯৪৬) ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিও তিনি তাঁর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।

স্বাধীন ভারতে তিনি যুক্তপ্রদেশের গভর্নর মনোনীত হন। কিন্তু স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কারণে তিনি এ পদ থেকে ইস্তফা দেন। ১৯৪৮ সালে পশ্চিম বাংলায় প্রফুল্ল ঘোষের মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে গেলে তিনি প্রাদেশিক কংগ্রেসের প্রধান নির্বাচিত হন এবং তাঁকে পশ্চিম বাংলা সরকারের দায়িত্ব নিতে হয়। ১৯৫২ সালে তিনি দ্বিতীয় বারের মতো মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৫৭ সালের নির্বাচনে তিনি তৃতীয় বারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হন। তাঁরই উদ্যোগে ভারত সরকার ‘দন্ডকারণ্য’-এ শরণার্থী পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়। ড. রায় সল্টলেক, কল্যাণী এবং দুর্গাপুর উপশহর কর্ম-পরিকল্পনার উদ্যোগ নেন এবং দিঘায় একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি বর্ধমান, কল্যাণী ও উওর-বাংলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন।

১৯৬১ সালে তাঁকে ‘ভারতরত্ন’ উপাধি প্রদান করা হয়। ১৯৬২ সালের নির্বাচনের পর তিনি চতুর্থ বারের মতো পশ্চিম বাংলার মন্ত্রিসভা গঠন করেন, কিন্তু অল্প কয়েক মাস পর ঐ বছরের ১ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়।  [রঞ্জিত রায়]