রায়, বরুণ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''রায়, বরুণ''' (১৯২২-২০০৯)  বাম রাজনীতিক। পুরো নাম প্রসূন কান্তি রায়। ১৯২২ সালের ১০ নভেম্বর সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী গ্রামে এক জমিদার পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা করুণা সিন্ধু রায় ছিলেন রাজনীতিক এবং আসাম প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য। বরুণ রায় ১৯৪২ সালে কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়ীয়া মোগরা হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা এবং ১৯৪৭ সালে সুনামগঞ্জ কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন।  ১৯৪৮ সালে তিনি সিলেট মুরারী চাঁদ কলেজে বিএ ক্লাসে ভর্তি হন।
'''রায়, বরুণ''' (১৯২২-২০০৯)  বাম রাজনীতিক। পুরো নাম প্রসূন কান্তি রায়। ১৯২২ সালের ১০ নভেম্বর সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী গ্রামে এক জমিদার পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা করুণা সিন্ধু রায় ছিলেন রাজনীতিক এবং আসাম প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য। বরুণ রায় ১৯৪২ সালে কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়ীয়া মোগরা হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা এবং ১৯৪৭ সালে সুনামগঞ্জ কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন।  ১৯৪৮ সালে তিনি সিলেট মুরারী চাঁদ কলেজে বিএ ক্লাসে ভর্তি হন।


ছাত্রজীবনেই বরুণ রায় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ছাত্র ফেডারেশনের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন এবং ১৯৪২ সালে পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। অচিরেই তিনি পার্টি ও ফেডারেশনের একজন সার্বক্ষণিক কর্মী নিযুক্ত হন। ১৯৪৭ সালে নানকার আন্দোলনে''' '''বরুণ রায় সোচ্চার ভূমিকা রাখেন। ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলন শুরু হলে সিলেটের গোবিন্দচরণ পার্কে বাংলা ভাষার দাবীর স্বপক্ষে সভা আয়োজন করতে গিয়ে পুলিশী নির্যাতনের শিকার হন। ১৯৪৯ সালে তিনি  পাকিস্তান সরকারের নির্দেশে গ্রেফতার হন এবং পাঁচ বছর কারা অন্তরীণ থাকেন। এ সময় তিনি কমরেড মনি সিংহ, রবি ধাম সহ বিখ্যাত রাজনীতিবিদদের সংস্পর্শে আসেন। জেলে থাকা অবস্থায় ১৯৫০ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির জেলা প্রতিনিধি নির্বাচিত হন।
[[Image:RoyBarun.jpg|thumb|right|400px|বরুণ রায়]]
ছাত্রজীবনেই বরুণ রায় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ছাত্র ফেডারেশনের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন এবং ১৯৪২ সালে পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। অচিরেই তিনি পার্টি ও ফেডারেশনের একজন সার্বক্ষণিক কর্মী নিযুক্ত হন। ১৯৪৭ সালে নানকার আন্দোলনে বরুণ রায় সোচ্চার ভূমিকা রাখেন। ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলন শুরু হলে সিলেটের গোবিন্দচরণ পার্কে বাংলা ভাষার দাবীর স্বপক্ষে সভা আয়োজন করতে গিয়ে পুলিশী নির্যাতনের শিকার হন। ১৯৪৯ সালে তিনি  পাকিস্তান সরকারের নির্দেশে গ্রেফতার হন এবং পাঁচ বছর কারা অন্তরীণ থাকেন। এ সময় তিনি কমরেড মনি সিংহ, রবি ধাম সহ বিখ্যাত রাজনীতিবিদদের সংস্পর্শে আসেন। জেলে থাকা অবস্থায় ১৯৫০ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির জেলা প্রতিনিধি নির্বাচিত হন।


বরুণ রায় ১৯৫৩ সালে জেল থেকে মুক্ত হলেও তাঁকে নজরবন্দী রাখা হয়। এসময়ে তিনি নিজ গ্রাম বেহেলীতে কৃষকদের অধিকার আদায়ে জোতদার ও সামন্তবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে তিনি সুনামগঞ্জ আসন থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনের কিছুদিন পর সারা দেশে ৯২ (ক) ধারা জারী করা হলে তিনি গ্রেফতার হন। মুক্তিলাভের পর দীর্ঘদিন তিনি আত্মগোপনে থেকে দলের কর্মকান্ড পরিচালনা করেন।
বরুণ রায় ১৯৫৩ সালে জেল থেকে মুক্ত হলেও তাঁকে নজরবন্দী রাখা হয়। এসময়ে তিনি নিজ গ্রাম বেহেলীতে কৃষকদের অধিকার আদায়ে জোতদার ও সামন্তবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে তিনি সুনামগঞ্জ আসন থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনের কিছুদিন পর সারা দেশে ৯২ (ক) ধারা জারী করা হলে তিনি গ্রেফতার হন। মুক্তিলাভের পর দীর্ঘদিন তিনি আত্মগোপনে থেকে দলের কর্মকান্ড পরিচালনা করেন।


১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক শাসন জারির পর বরুণ রায় গ্রেফতার হন এবং ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত কারাভোগ করেন। তিনি ১৯৬৪ সালের শিক্ষা আন্দোলন, আইয়ূব বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৫ সালে আইয়ুব সরকার তাঁর উপর হুলিয়া জারী করে। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তিনি ১৯৬৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে তিনি কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ূব বিরোধী গণআন্দোলনের সময় তিনি প্রকাশ্য রাজনৈতিক তৎপরতা সীমিত করে আত্মগোপনে থেকে সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যান। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আত্মগোপন থেকে তিনি দিরাই শাল্লা এলাকায় কমিউনিস্ট পার্টির  প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালান।
১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক শাসন জারির পর বরুণ রায় গ্রেফতার হন এবং ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত কারাভোগ করেন। তিনি ১৯৬৪ সালের শিক্ষা আন্দোলন, আইয়ূব বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৫ সালে আইয়ুব সরকার তাঁর উপর হুলিয়া জারী করে। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তিনি ১৯৬৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে তিনি কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ূব বিরোধী গণআন্দোলনের সময় তিনি প্রকাশ্য রাজনৈতিক তৎপরতা সীমিত করে আত্মগোপনে থেকে সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যান। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আত্মগোপন থেকে তিনি দিরাই শাল্লা এলাকায় কমিউনিস্ট পার্টির  প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালান।
[[Image:RoyBarun.jpg|thumb|right|বরুণ রায়]]


১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ভারতে চলে যান এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার দায়িত্ব পালনের পাশাপশি সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের কর্মিদের সমন্বয়ে যৌথ গেরিলা বাহিনী গড়ে তোলার কাজে নেতৃত্ব দেন। তিনি মেঘালয়ের বালাট ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ সংগঠিত করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ভারতে চলে যান এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার দায়িত্ব পালনের পাশাপশি সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের কর্মিদের সমন্বয়ে যৌথ গেরিলা বাহিনী গড়ে তোলার কাজে নেতৃত্ব দেন। তিনি মেঘালয়ের বালাট ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ সংগঠিত করেন।
১৪ নং লাইন: ১৩ নং লাইন:
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর বরুণ রায় দেশে ফিরে আসেন। তিনি বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে সিলেট অঞ্চলসহ সারাদেশে সংগঠন গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রতিদ্বনিদ্ধতা করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি তাহিরপুর-জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার লোকদের সংগঠিত করে ‘ভাষানপানির’ আন্দোলন, ‘জাল যার জলা তার’ আন্দোলন এবং ভূমিহীনদের সংগঠিত করে ‘লাঙল যার জমি তার’ আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৮০ সালে ব্যাংক কর্মচারীদের আন্দোলন সংগঠনে জড়িত থাকার অপরাধে সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর বরুণ রায় দেশে ফিরে আসেন। তিনি বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে সিলেট অঞ্চলসহ সারাদেশে সংগঠন গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রতিদ্বনিদ্ধতা করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি তাহিরপুর-জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার লোকদের সংগঠিত করে ‘ভাষানপানির’ আন্দোলন, ‘জাল যার জলা তার’ আন্দোলন এবং ভূমিহীনদের সংগঠিত করে ‘লাঙল যার জমি তার’ আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৮০ সালে ব্যাংক কর্মচারীদের আন্দোলন সংগঠনে জড়িত থাকার অপরাধে সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে।


বরুণ রায়''' '''১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী  হিসেবে সুনামগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৭ সালে সরকার বিরোধী আন্দোলনে তিনি ভূমিকা রাখেন এবং এজন্য তাঁকে কারাভোগ করতে হয়।
বরুণ রায় ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী  হিসেবে সুনামগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৭ সালে সরকার বিরোধী আন্দোলনে তিনি ভূমিকা রাখেন এবং এজন্য তাঁকে কারাভোগ করতে হয়।


১৯৯০ সালে বরুণ রায় সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি মণি সিংহ-ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্টের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
১৯৯০ সালে বরুণ রায় সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি মণি সিংহ-ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্টের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।


২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জে তাঁর মৃত্যু হয়।
২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জে তাঁর মৃত্যু হয়। [ঊর্মি হোসেন]
 
[ঊর্মি হোসেন]


[[en:Roy, Barun]]
[[en:Roy, Barun]]

০৬:৫৮, ৯ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

রায়, বরুণ (১৯২২-২০০৯)  বাম রাজনীতিক। পুরো নাম প্রসূন কান্তি রায়। ১৯২২ সালের ১০ নভেম্বর সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী গ্রামে এক জমিদার পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা করুণা সিন্ধু রায় ছিলেন রাজনীতিক এবং আসাম প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য। বরুণ রায় ১৯৪২ সালে কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়ীয়া মোগরা হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা এবং ১৯৪৭ সালে সুনামগঞ্জ কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন।  ১৯৪৮ সালে তিনি সিলেট মুরারী চাঁদ কলেজে বিএ ক্লাসে ভর্তি হন।

বরুণ রায়

ছাত্রজীবনেই বরুণ রায় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ছাত্র ফেডারেশনের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন এবং ১৯৪২ সালে পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। অচিরেই তিনি পার্টি ও ফেডারেশনের একজন সার্বক্ষণিক কর্মী নিযুক্ত হন। ১৯৪৭ সালে নানকার আন্দোলনে বরুণ রায় সোচ্চার ভূমিকা রাখেন। ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলন শুরু হলে সিলেটের গোবিন্দচরণ পার্কে বাংলা ভাষার দাবীর স্বপক্ষে সভা আয়োজন করতে গিয়ে পুলিশী নির্যাতনের শিকার হন। ১৯৪৯ সালে তিনি  পাকিস্তান সরকারের নির্দেশে গ্রেফতার হন এবং পাঁচ বছর কারা অন্তরীণ থাকেন। এ সময় তিনি কমরেড মনি সিংহ, রবি ধাম সহ বিখ্যাত রাজনীতিবিদদের সংস্পর্শে আসেন। জেলে থাকা অবস্থায় ১৯৫০ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির জেলা প্রতিনিধি নির্বাচিত হন।

বরুণ রায় ১৯৫৩ সালে জেল থেকে মুক্ত হলেও তাঁকে নজরবন্দী রাখা হয়। এসময়ে তিনি নিজ গ্রাম বেহেলীতে কৃষকদের অধিকার আদায়ে জোতদার ও সামন্তবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে তিনি সুনামগঞ্জ আসন থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনের কিছুদিন পর সারা দেশে ৯২ (ক) ধারা জারী করা হলে তিনি গ্রেফতার হন। মুক্তিলাভের পর দীর্ঘদিন তিনি আত্মগোপনে থেকে দলের কর্মকান্ড পরিচালনা করেন।

১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক শাসন জারির পর বরুণ রায় গ্রেফতার হন এবং ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত কারাভোগ করেন। তিনি ১৯৬৪ সালের শিক্ষা আন্দোলন, আইয়ূব বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৫ সালে আইয়ুব সরকার তাঁর উপর হুলিয়া জারী করে। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তিনি ১৯৬৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে তিনি কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ূব বিরোধী গণআন্দোলনের সময় তিনি প্রকাশ্য রাজনৈতিক তৎপরতা সীমিত করে আত্মগোপনে থেকে সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যান। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আত্মগোপন থেকে তিনি দিরাই শাল্লা এলাকায় কমিউনিস্ট পার্টির  প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালান।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ভারতে চলে যান এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার দায়িত্ব পালনের পাশাপশি সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের কর্মিদের সমন্বয়ে যৌথ গেরিলা বাহিনী গড়ে তোলার কাজে নেতৃত্ব দেন। তিনি মেঘালয়ের বালাট ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ সংগঠিত করেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর বরুণ রায় দেশে ফিরে আসেন। তিনি বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে সিলেট অঞ্চলসহ সারাদেশে সংগঠন গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রতিদ্বনিদ্ধতা করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি তাহিরপুর-জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার লোকদের সংগঠিত করে ‘ভাষানপানির’ আন্দোলন, ‘জাল যার জলা তার’ আন্দোলন এবং ভূমিহীনদের সংগঠিত করে ‘লাঙল যার জমি তার’ আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৮০ সালে ব্যাংক কর্মচারীদের আন্দোলন সংগঠনে জড়িত থাকার অপরাধে সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে।

বরুণ রায় ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী  হিসেবে সুনামগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৭ সালে সরকার বিরোধী আন্দোলনে তিনি ভূমিকা রাখেন এবং এজন্য তাঁকে কারাভোগ করতে হয়।

১৯৯০ সালে বরুণ রায় সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি মণি সিংহ-ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্টের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জে তাঁর মৃত্যু হয়। [ঊর্মি হোসেন]