রায়, দেওয়ান কার্তিকেয়চন্দ্র
রায়, দেওয়ান কার্তিকেয়চন্দ্র (১৮২০-১৮৮৫) গীতিকার, উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিল্পী, গ্রন্থকার। জন্ম নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর, ১৮২০ সালের অক্টোবর।
প্রথমে ফারসি, পরে ইংরেজি শিক্ষা লাভ করে তিনি কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে গৃহশিক্ষক ও সঙ্গীতগুরু নিযুক্ত হন। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের (১৭১০-১৭৮২) অধস্তন পঞ্চম পুরুষ নদীয়ারাজ শ্রীশচন্দ্রের (১৮১৯-১৮৫৭) আমলে রাজবংশের সেক্রেটারি এবং পরে মহারাজার বিশ্বাসভাজন হলে ‘দেওয়ান’ বা প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার পদ লাভ করেন।
কার্তিকেয়চন্দ্র সঙ্গীতবিদ্যায় পারদর্শি ছিলেন। সঙ্গীত ও খেয়াল শিল্পী হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল। তিনি বাংলা ও হিন্দি দু-ভাষারই গান চর্চা করতেন। বাংলায় খেয়াল গানকে যাঁরা জনপ্রিয় করে তোলেন, তিনি ছিলেন তাঁদের অন্যতম। কৃষ্ণনগর রাজপরিবারের সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলে তিনি সঙ্গীত শিক্ষার বিশেষ সুযোগ লাভ করেন। এ পরিবারে প্রথমে মাধবচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও মহেশচন্দ্র খাজাঞ্চির এবং পরে হচ্চ খাঁ ওস্তাদের কাছে তিনি সঙ্গীতচর্চা করেন। গীতমঞ্জরী (১৮৭৫) তাঁর গানের সঙ্কলন। তাঁর এ সঙ্কলনে অনেক গান আছে যেগুলি তাঁকে নদীয়ার রাজসভার বাইরেও জনপ্রিয় করে তোলে।
কার্তিকেয়চন্দ্রের অপর দুটি গ্রন্থ—ক্ষিতীশ-বংশাবলি-চরিত অর্থাৎ নবদ্বীপের রাজবংশের বিবরণ (১৮৭৫) ও দেওয়ান কার্তিকেয়চন্দ্র রায়ের আত্মজীবন-চরিত। প্রথম গ্রন্থটিতে আলোচিত হয়েছে নদীয়ার রাজবংশের ইতিহাস; দ্বিতীয়টি তাঁর ‘আত্মজীবনী’ যা তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর পুত্র দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত হয়। এটি প্রথমে সুরেশচন্দ্র সমাজপতি সম্পাদিত সাহিত্য পত্রিকায় (বাংলা ১৩০৩) ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়; পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯০৪ সালের ২৯ এপ্রিল।
বাংলার ইতিহাসে কার্তিকেয়চন্দ্র রায়ের বিশেষ অবদান তাঁর আত্মজীবনী। এতে তিনি উনিশ শতকের বাঙলার সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত বিশ্বস্ততার সঙ্গে তুলে ধরেন। উনিশ শতকের বাঙলার সামাজিক ও সংস্কৃতিক ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে ইতিহাসবিদদের কাছে এটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসূত্র হিসেবে বিবেচিত।
উল্লেখ্য, কার্তিকেয়চন্দ্র রায়ের পুত্র দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ছিলেন কবি, গীতিকার ও নাট্যকার। পৌত্র দিলীপকুমার রায়ও ছিলেন কবি, সাহিত্যিক, গীতিকার, সঙ্গীতশিল্পী ও সঙ্গীতজ্ঞ। এঁদের জীবনগঠনে কার্তিকেয়চন্দ্র রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কার্তিকেয়চন্দ্র রায়ের মৃত্যু ১৮৮৫ সালের ২ অক্টোবর। [মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম]