রাণী ভবানী

রাণী ভবানী (১৭১৬-১৭৯৫)  রাজশাহীর জমিদার। সামাজিক ও জনহিতকর কাজ এবং দানশীলতার জন্য তিনি সুপরিচিত। বগুড়া জেলার ব্রাক্ষ্মণ পরিবারে  রাণী ভবানী জম্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আত্মারাম চৌধুরী। ১৭৪৮ খ্রিস্টাব্দে স্বামী রামকান্তের মৃত্যুর পর তিনি আইনত রাজশাহীর জমিদার হন। তিনি বাংলার নওয়াবদের সাথে সুম্পর্ক বজায় রেখে অত্যন্ত দক্ষতা ও যোগ্যতার সাথে প্রায় চার দশক রাজশাহীর জমিদারি রক্ষা করতে সক্ষম হন। এক্ষেত্রে তাঁর সৎ ও অভিজ্ঞ দীউয়ান দয়ারাম ব্যাপক সহায়তা করেন। হলওয়েল (১৭১১-১৭৯৮) এর রাজশাহী রাজ সম্পর্কে বর্ণনায় দেখা যায় যে, রাণী ভবানীর নওয়াবের কোষাগারে বার্ষিক প্রায় ৭০ লক্ষ সিক্কা রূপি রাজস্ব হিসেবে জমা দিতেন। যেখানে প্রকৃত রাজস্ব ছিল প্রায় দেড় কোটি সিক্কা রূপি। ১৭৬৫ সালে দীউয়ানি লাভের সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রাণী ভবানীকে উক্ত জমিদারিতে বহাল রাখে। তিনি জমিদারির বিশাল অংশ ব্রাক্ষ্মণদেরকে লাখেরাজ সম্পত্তি হিসেবে দান করেন। ও’ম্যালি (O'Malley) রাজশাহী গেজেটে উল্লেখ করেন যে, রাণী প্রায় ৩৮০ টি প্রার্থনালয়, অতিথিশালা এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির নির্মাণ করেন। তিনি এসকল জনকল্যাণকর এবং ধর্মীয়কাজের জন্য ভূমি ও অর্থ প্রদান করতেন।

রাণী ভবানী নাটোর হতে বগুড়ার ভাওয়ানিপুর পর্যন্ত ‘রাণী ভবানীর জাঙ্গাল’ নামক একটি সড়ক নির্মানে সার্বিক সহায়তা প্রদান করেন। এছাড়া তিনি নিজ খরচে সুবিশাল পুকুর ও সড়াইখানা স্থাপন করেন। গ্রামে দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা ও পশু-পাখিদের পরিচর্যার জন্যও তিনি মুক্ত হস্তে দান করেন। তিনি হিন্দু শিক্ষা ও শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে একজন পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে বড়নগরে ৭৯ বৎসর বয়সে রাণী ভবানীর মৃত্যু হয়।  [এ.বি.এম মাহমুদ]