রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৫৩, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট)  প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। রাজশাহী শহর থেকে পাঁচ কিমি পূর্বদিকে কাজলা নামক স্থানে রাজশাহী-নাটোর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে ১৫০ একর জমির উপর এটি প্রতিষ্ঠিত। ১৯৬৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের আওতায় সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স এবং মেকানিক্যাল বিষয়ে চার বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি কোর্স চালু হয়। কিন্তু জটিল ব্যবস্থাপনার কারণে এই অনুষদের উদ্দেশ্য অর্জিত হচ্ছিল না। প্রশাসন ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে, একাডেমিক কারিকুলাম ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন নির্ধারিত হতো পাবলিক ওয়ার্কস বিভাগ থেকে। এই সমন্বয়হীনতা নিরসনে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন কমিশন এবং কমিটি গঠিত হয়েছে। এসব কমিশন এবং কমিটির সুপারিশ এবং প্রায়োগিক দিক চিন্তা করে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের চারটি প্রকৌশল কলেজকে প্রযুক্তির উৎকর্ষতার জন্য কিছু স্বাধীনতা দেয়া হয় এবং অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে ১৫ সদস্যের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সিদ্ধান্তে ১৯৮৬ সালের জুলাই মাসে চারটি প্রকৌশল কলেজকে বাংলাদেশ ইনস্টিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি)-তে রূপান্তর করা হয়। কিন্তু সীমিত স্বায়ত্তশাসন এবং বিআইটির অধ্যাদেশের সাংবিধানিক অপর্যাপ্ততার কারণে এই প্রতিষ্ঠানগুলি কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করতে পারে নি। এই প্রয়োজনীয়তার জন্য ইনিস্টিউটগুলিকে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা করা হয়। প্রকৌশল ও প্রযুক্তির বিভিন্নক্ষেত্রে অগ্রসরমান বিশ্বের সাথে সঙ্গতি রক্ষা ও সমতা অর্জন, জাতীয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা, আধুনিক জ্ঞানচর্চা ও পঠন-পাঠনের সুযোগ সৃষ্টি এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০০৩ সালের জাতীয় সংসদের ৩২ নং আইন-এর অধীনে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সি.এস.ই ভবন


বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩টি অনুষদ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অধীনে ১০টি বিভাগ রয়েছে। বিভাগগুলি হলো: সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং (সি.ই), ম্যাথমেটিকস, ফিজিকস, ক্যামেস্ট্রি, কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সি.এস.ই), ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ই.ই.ই), ইলেকট্রনিক অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ই.টি.ই), মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (এম.ই), ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আ.ই.পি) এবং মানবিক। বিভাগগুলিতে বি.এসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং এম.এসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু আছে। স্নাতকোত্তর শেষে ৫টি বিভাগ ক্যামেস্ট্রি, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ই.ই.ই), ম্যাথমেটিকস এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (এম.ই)-এ শিক্ষার্থীদের এম.ফিল ও পিএইচ.ডি গবেষণার সুযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয়ভাবে এবং অনুষদভিত্তিক বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে।

একাডেমিক কাউন্সিল শিক্ষা সংক্রান্ত সামগ্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা ৩৪, এবং এর সভাপতি হন উপাচার্য। একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য সচিব হন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় কম্পিউটার সেন্টার। যেখানে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। ক্যাম্পাসের বাইরের শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ার জন্য রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস সার্ভিস। ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য রয়েছে একটি হাসপাতাল। অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য রয়েছে ৭০০ আসন বিশিষ্ট একটি আধুনিক অডিটোরিয়াম।

শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে রয়েছে একটি স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার। ৪ জন পরিচালকের সমন্বয়ে গঠিত এ ওয়েলফেয়ার সেন্টার আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের শারীরিক শিক্ষা, খেলাধুলা, সহশিক্ষা কার্যক্রম তত্বাবধায়ন করে। এছাড়া রয়েছে সেন্ট্রাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন; যারা নবাগত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা নিরসন এবং শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ন্যায়সঙ্গত দাবি নিয়ে কাজ করে। সেন্ট্রাল স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সকল সদস্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত হয়। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে শিক্ষক-শির্ক্ষীদের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে ‘আই.ই.ই.ই রুয়েট স্টুডেন্ট ব্রান্স’-নামক একটি সংগঠন। এ সংগঠনটি শিক্ষর্থীদের জন্য বিভিন্ন সেমিনার ও কোর্সের আয়োজন করে।

বর্তমানে (২০১০) বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১৮৪২, শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ১৩২ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ২৪১। ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসনের জন্য রয়েছে ৬টি আবাসিক হল। হলগুলি হলো: শহীদ লেফটেন্যান্ট সেলিম হল, শহীদ শহীদুল ইসলাম হল, শহীদ আব্দুল হামিদ হল, লেডিজ হল, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হল এবং টিনশেড হল। এসব হলে ১৫৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীর আবাসিকের ব্যবস্থা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার রয়েছে। এ গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা ২৬,৮৮০।  [মো. আশিক ইকবাল]