রাজনগর উপজেলা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৬:৩০, ৬ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Robot: Automated text replacement (-'''''তথ্যসূত্র''''' +'''তথ্যসূত্র'''))

রাজনগর উপজেলা (মৌলভীবাজার জেলা)  আয়তন: ৩৩৮.১৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°২৬´ থেকে ২৪°৩৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৪৪´ থেকে ৯১°৫৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে কমলগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে কুলাউড়া উপজেলা, পশ্চিমে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৯৩৩০৩; পুরুষ ৯৭৯২৯, মহিলা ৯৫৩৭৪। মুসলিম ১৪৭৩০৯, হিন্দু ৪৫৬০৫, বৌদ্ধ ১৬৭, খ্রিস্টান ৩০ এবং অন্যান্য ১৯২। এ উপজেলায় খাসিয়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: মনু, ধলাই, কুশিয়ারা; কাওয়াদিঘি হাওড় এবং ফারাক্কা বিল ও পুখুরি বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯২২ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১৪২ ২৫৯ ১১৫৬৭ ১৮১৭৩৬ ৫৭২ ৪১.৯ ৩৫.৮


উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৮.১৫ ১১৫৬৭ ১৪১৯ ৪১.৯
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
উত্তরভাগ ৮৪ ১৯৮১১ ১৫৮৪১ ১৪৯১৪ ৩৫.৫৫
কামার চক ২১ ৯০৫২ ১০৫৭৭ ১০৮৭৩ ৩৩.০৮
টেংরা ৭৩ ৯৩৩৭ ১২০৮৭ ১১৬৯১ ৩১.৬৩
পাঁচগাঁও ৫২ ৭১৭৮ ৯৭৯৮ ৯৬১৯ ৩৫.৪৬
ফতেহপুর ১০ ১১৪২৬ ১২৪২৩ ১২২৮৮ ৩৫.৭০
মনসুর নগর ৩১ ৪৯৭৪ ১১২০৯ ১১১২৩ ৩৯.২৭
মুন্সিবাজার ৪২ ৮৫৩৫ ১৩৭৮১ ১৩০৬২ ৩৫.৩০
রাজনগর ৬৩ ৫৮৮২ ১২২১৩ ১১৮০৪ ৪৩.১৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ পশ্চিমভাগ গ্রামে আনুমানিক ৯৩০ সালে মুদ্রিত তাম্রফলক, জনার্দন কর্মকারের তৈরি বিখ্যাত কামান জাহানকোষা, বিবি মরিয়ম, কালে জমজম, টেংরা বাজার মন্দির।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী এ উপজেলায় ব্যাপক গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। ৭ মে পাঁচগাঁও গ্রামে পাকবাহিনী ৫৯ জনকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করে। পাকবাহিনী মুন্সিবাজারের ধরবাড়ি ও শাহাজীবাড়ির ১৫ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। ১৪ মে পাকবাহিনী উত্তর ভাগ, চাটুরা, মহলাল, পঞ্চেশ্বর ও রাজনগরে গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগ করে। পাকবাহিনীর সঙ্গে এক মুখোমুখি সংঘর্ষে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৪ ডিসেম্বর ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা উদনা চা বাগানে অবস্থিত পাকবাহিনী ক্যাম্প দখল করে। ৬ ডিসেম্বর রাজনগর অঞ্চল শত্রুমুক্ত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ২ (পাঁচগাঁও, মুন্সিবাজার); স্মৃতিস্তম্ভ ১ (মুন্সিবাজার)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৩১০, মন্দির ৫১, মাযার ১০, তীর্থস্থান ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: পাঁচগাঁও দুর্গা মন্দির, দুর্গাপ্রাসাদ মাধুর আখড়া, পানিশাইল আখড়া ও মন্দির, টেংরা রাজার মন্দির।

রাজনগর উপজেলা


শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৬.২%; পুরুষ ৩৮.২%, মহিলা ৩৪.১%। কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৪২, স্যাটেলাইট স্কুল ১৫, মাদ্রাসা ১৮। উলে­খযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: রাজনগর ডিগ্রি কলেজ (১৯৭৩), মৌলানা মুফাজ্জল হোসেন মহিলা কলেজ (১৯৯৪), রাজনগর পোর্টিয়াস উচ্চবিদ্যালয় (১৮৯৩), মেহেরুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৫), পাঁচগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়, কান্দিগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়, জনতা উচ্চ বিদ্যালয়, একাসন্তোষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮০), ঘড়গাঁও হেদায়েতুল ইসলাম টাইটেল মাদ্রাসা (১৯২৬), রাজনগর ডি এস ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৭৩)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: রাজকণ্ঠ; অনিয়মিত ও অবলুপ্ত: শিল্পতরী, মুক্তিসংগ্রাম, মনুকুলের কাগজ, দীপ শিখা, রাজনগর বার্তা, মরাল।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, ক্লাব ৫০, যাত্রাপার্টি ৪, খেলার মাঠ ৬।

দর্শনীয় স্থান পর্বতপুর চা বাগান, করিমপুর চা বাগান, লোহাইউনী চা বাগান, ইটা চা বাগান এবং কমলা রানীর দীঘি, দেওয়ান দীঘি উল্লেখযোগ্য।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫১.৬১%, অকৃষি শ্রমিক ১৪.০৭%, ব্যবসা ৮.১৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৫৫%, চাকরি ৩.৫৫%, নির্মাণ ১.২৩%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৫.৪৭% এবং অন্যান্য ১৪.০২%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৫.৬২%, ভূমিহীন ৫৪.৩৮%। শহরে ৪৪.০৪% এবং গ্রামে ৪৫.৭২% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, চা, আলু, সরিষা, আদা, হলুদ, পান, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, মিষ্টি আলু, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, আনারস, জাম, কলা, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১১, গবাদিপশু ২৫, হাঁস-মুরগি ৩২।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১১৭.৬৮ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩০৮.৬৮ কিমি; নৌপথ ১১ নটিক্যাল মাইল।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা চালকল, ডালকল, চা ফ্যাক্টরি, রাবার ফ্যাক্টরি, আতর কারখানা, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বুননশিল্প, শীতলপাটি, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩২, মেলা ৫। টেংরা বাজার, মুন্সি বাজার, রাজনগর বাজার, হরিপাশা বাজার, সরকার বাজার, আজাদবাজার, রাজকৃষ্ণপুর বাজার, ভাঙ্গার হাট এবং বাগের মেলা, বারুনী মেলা ও নয়াটিলার মহররম মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   চা, আনারস, পাটি, আতর।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৩.৫৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৬৬.১১%, ট্যাপ ০.৮০%, পুকুর ১৯.৭১% এবং অন্যান্য ১৩.৩৮%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২৭.৬৫% (শহরে ৪২.৬১% এবং গ্রামে ২৬.৬৯%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫৩.৬৯% (শহরে ৪৭.৩৬% এবং গ্রামে ৫৪.১০%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৮.৬৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, পল্লি-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ২, ব্র্যাক পরিচালিত হাসপাতাল ২।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, বিইউপি, হীড বাংলাদেশ।

[শাহ্ মো. মুইজুর রহমান]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; রাজনগর উপজলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।