রহিম, কাজী মোঃ ফজলুর
রহিম, কাজী মোঃ ফজলুর (১৯১৭-২০০৪) প্রাণিসম্পদ বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ। কাজী মোঃ ফজলুর রহিম ১৯২১ সালের ৩১শে ডিসেম্বর টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাজী মোঃ আব্দুর রউফ এবং মাতার নাম আমেনা বেগম। তিনি ময়মনসিংহের ফুলপুর হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা (১৯৩৩), আনন্দ মোহন কলেজ থেকে আই,এসসি (১৯৩৫), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩৭ সালে বি, এসসি ডিগ্রী অর্জন করেন। অত:পর ফুল-ব্রাইট স্কয়ার হিসেবে ১৯৫৫ সালে কোয়ানটিটেভ জেনেটিক্র এর উপর আমেরিকার ট্রেক্রাস এ এন্ড এম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ. ডি. ডিগ্রী অর্জন করেন।
ড. কাজী মোঃ ফজলুর রহিম সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে অবিভক্ত বাংলার নদিয়া জেলায় তাঁর চাকুরি জীবন শুরু করেন। তারপর ১৯৪৭ সালের দেশ বিভক্তির পর তেজগাঁও অবস্থিত ইষ্ট বেঙ্গল ভেটেরিনারি কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৫ সালে ট্রেক্রাস এ এন্ড এম থেকে পিএইচ, ডি ডিগ্রী অর্জনের পর ১৯৫৭ সালে ময়মনসিংহে ভেটেরিনারী কলেজের নতুন ক্যাম্পাসে তাঁর কর্মস্থল স্থানান্তরিত হয়। কিছুদিনের জন্য তাঁকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে ডেপুটি ডাইরেক্টর হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে নিয়ে আসা হয় কিন্তু পুনরায় ১৯৫৮ সালে তিনি ময়মনসিংহ ভেটেরিনারি কলেজে শিক্ষকতায় যোগদান করেন। পরবর্তীকালে ১৯৬২ সালে বাংলাদেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে প্রাণি প্রজনন ও কৌলি বিজ্ঞান বিভাগে যোগদান করেন। উক্ত বিভাগে যোগদান করার পর শিক্ষাদানসহ বিভাগীয় দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৬৪ সালে তিনি প্রফেসর পদে উন্নীত হন। ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বিভাগীয় দায়িত্ব এবং এর মধ্যবর্তী সময় ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত অনুষদীয় ডীনের দায়িত্ব পালন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরীকালীন সময় থেকেই ১৯৬৮ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে বিশ্ববিদ্যায়ে স্থায়ীভাবে শিক্ষকতা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরীকালীন সময়ে তিনি কো-অর্ডিনেটর, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দুই বার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে (জানুয়ারি ১৯৭১ থেকে জুলাই ১৯৭১ এবং জানুয়ারি ১৯৭২ থেকে নভেম্বর ১৯৭৩) দায়িত্ব পালন করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শারীরিক অসুস্থ্যতার জন্য উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, তবে তিনি প্রাণি প্রজনন ও কেীলিতত্ব বিভাগে চাকুরী হতে অবসর নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষাদান করে গেছেন। ১৯৮১ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী থেকে আবসর গ্রহণ করেন।
তিনি তাঁর শিক্ষাদান ও জাতীর উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ‘‘তামঘা-ই-কায়েদ-ই-আযম’’ (টিকিউএ) উপাধি লাভ করেন। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বঞ্চনার প্রতিবাদে ওই উপাধি তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এই বরেন্য শিক্ষাবিদ ও প্রাণিসম্পদ বিজ্ঞানী ২০০৪ সালের ২রা জুন, বার্ধক্যজনিত কারনে ঢাকার গুলশানস্থ সিকদার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বৎসর। [জাহাঙ্গীর আলম]