রঘুনাথ শিরোমণি
রঘুনাথ শিরোমণি (১৫শ-১৬শ শতক) সংস্কৃত পন্ডিত, নৈয়ায়িক। ন্যায়শাস্ত্রে বাঙালি মনীষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ পন্ডিত রঘুনাথ শ্রীহট্ট জেলার পঞ্চখন্ড গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অল্প বয়সে তিনি নবদ্বীপ আগমন করেন এবং বাসুদেব সার্বভৌমের নিকট শাস্ত্রাধ্যয়ন করেন। রঘুনাথ মিথিলার বিখ্যাত নৈয়ায়িক পক্ষধর মিশ্রের নিকটও ন্যায়দর্শন চর্চা করেন। শিক্ষাশেষে তিনি নব্যন্যায়ে অধ্যাপনা করেন এবং ক্রমে এ বিষয়ের অদ্বিতীয় পন্ডিতরূপে খ্যাত হন। নব্যন্যায়ের শ্রেষ্ঠ কেন্দ্ররূপে নবদ্বীপের স্বীকৃতির প্রধান কারণই রঘুনাথ। প্রসিদ্ধি আছে যে, রঘুনাথ গুরু পক্ষধর মিশ্রকে ন্যায়দর্শন সংক্রান্ত একটি বিচারে পরাস্ত করে ন্যায়শান্ত্রে নবদ্বীপের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত করেন। তখন থেকেই ন্যায়চর্চার ক্ষেত্রে মিথিলার একাধিপত্য হ্রাস পায় এবং নবদ্বীপ পরিগণিত হয় শ্রেষ্ঠ কেন্দ্ররূপে।
রঘুনাথকে কেন্দ্র করে নব্যন্যায়শাস্ত্রকে তিনটি যুগে ভাগ করা হয়: ১. প্রাক্শিরোমণি যুগ, ২. শিরোমণিযুগ এবং ৩. শিরোমণি-উত্তর যুগ। রঘুনাথের রচিত গ্রন্থের সংখ্যা চল্লিশ। সেগুলির মধ্যে অনুমানদীধিতি তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা। এটি প্রায় ৪০০ বছর যাবৎ সমগ্র ভারতে ন্যায়দর্শন চর্চার শাস্ত্র হিসেবে সমাদরের সঙ্গে ব্যবহূত হয়েছে। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো: প্রত্যক্ষমণিদীধিতি, তত্ত্বচিন্তামণিদীধিতিটীকা, শব্দমণিদীধিতি, আখ্যাতবাদ, নঞ্বাদ, পদার্থখন্ডন, দ্রব্যকিরণাবলীপ্রকাশদীধিতি, গুণকিরণাবলীদীধিতি, আত্মতত্ত্ববিবেকদীধিতি, ন্যায়লীলাবতীপ্রকাশদীধিতি, বাজপেয়বাদ প্রভৃতি। তিনি স্মৃতিশাস্ত্রেও দক্ষ ছিলেন। মলিম্লুচবিবেক প্রভৃতি তাঁর স্মৃতিশাস্ত্রের গ্রন্থ। [কানাই লাল রায়]