রংপুর সদর উপজেলা

রংপুর সদর উপজেলা (রংপুর জেলা)  আয়তন: ৩৫৯.৪৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৩৯´ থেকে ২৫°৫০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০৫´ থেকে ৮৯°২০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে গঙ্গাচড়া উপজেলা, দক্ষিণে মিঠাপুকুর উপজেলা, পূর্বে কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলা, পশ্চিমে তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলা।

জনসংখ্যা ৭১৮২০৩; পুরুষ ৩৬৬৭৮৮, মহিলা ৩৫১৪১৫। মুসলিম ৬৫০৪৩৭, হিন্দু ৬৬৬৪২, বৌদ্ধ ১৪৭, খ্রিস্টান ২৭৪ এবং অন্যান্য ৭০৩। এ উপজেলায় সাঁওতাল ও ওরাওঁ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় বুল্লাই ও ঘাঘট নদী এবং গানাকানাই ও মারিগা বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন রংপুর সদর থানা গঠিত হয় ১৮৭৭ সালে। থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১১ ১৩৯ ৩০৮ ৩০০৬৫৯ ৪১৭৫৪৪ ১৯৯৮ ৭২.১ ৫২.৭
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৫০.৬৯ ১৫ ১০৭ ৩০০৬৫৯ ৫৯৩১ ৭২.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
উত্তম ৯৪ ৫৩১৮ ২০৪৭৬ ১৯৯৫২ ৫৫.৭
চন্দনপাট ১৭ ৯৬৪১ ১৭১৪১ ১৭০৬৩ ৪৭.১
তপোধন ৮৭ ৬৮১৭ ২৬৬২৩ ২৫৮৬৪ ৫৩.২
তামফাট ৭৯ ৭২২৬ ২০৩৪৪ ১৯৭৩১ ৫৯.৬
দর্শনা ১৯ ৫৭৬৭ ১২৩৬৭ ১২০৫৬ ৫৯.৫
পশুরাম ৩৯ ৬৮০০ ২০৭৫০ ২০০৩৮ ৬২.১
মোমিনপুর ৩১ ৬৭২৩ ১৫৬৯৯ ১৫৪৭৮ ৩৯.৩
রাজেন্দ্রপুর ৪৭ ৬৩৮৭ ১৭৬০০ ১৭১৫৩ ৫৩.৪
সদ্যপুস্করণী ৬৩ ৯৩০৪ ২১৭৩৭ ২১৬৫১ ৪২.৯
সাতগাড়া৭১ ৫১১২ ১৭৩১৯ ১৭২৫৩ ৫৮.৬
হরিদেবপুর ২৩ ৭২০৯ ২০৬২২ ২০৬২৭ ৪৭.৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মাহিগঞ্জ প্রাচীন মসজিদ, কেরামতিয়া মসজিদ, মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরীর মাযার, মাহিগঞ্জ শাহ জালাল বোখারীর মাযার, তাজহাট রাজবাড়ি (রংপুর জাদুঘর), পায়রাবন্দে বেগম রোকেয়ার বাড়ি, জেলা পরিষদ ভবন, শ্রী শ্রী করুণাময়ী কালীমন্দির, ডিমলারাজ কালীমন্দির, বিশ্বেশ্বর শিবমন্দির, গোসাইবাড়ী নন্দীমন্দির, মাহিগঞ্জ পরেশনাথ মন্দির, টেপা জমিদারবাড়ী, খাসবাগ প্রত্নদির্শন, দেওয়ানবাড়ী সিংহদ্বার, মন্থনা জমিদার বাড়ী, রংপুর টাউন হল।

ঐতিহাসিক ঘটনা রংপুরে ভাষা আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল কারমাইকেল কলেজ। কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ একজন অবাঙালী হওয়ায় অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ এর ৩ মার্চ পাকবাহিনীরা গুপ্তপাড়ায় শংকু সমাদ্দার এবং রংপুরে আবুল কালাম আজাদ, মকবুল হোসেন ও ওমর আলীকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কারমাইকেল কলেজ প্রাঙ্গনে পাকবাহিনীর হাতে অধ্যাপক কাঁলা চাদ রায় (রসায়ন), চিত্তরঞ্জন রায় (গণিত), সুনীল চন্দ্র চক্রবর্তী (বাংলা), ব্যোম কৃষ্ণ অধিকারী (দর্শন), অধ্যাপক মো: আব্দুল রহমান, অধ্যাপক শাহ সোলায়মান আলী সহ অনেক ছাত্র-শিক্ষক শহীদ হন। রংপুর সদর উপজেলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যেসব যুদ্ধ সংঘটিত হয় সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে দুঃসাহসিক যুদ্ধ ছিল রংপুর সেনানিবাস আক্রমণ। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধারা রংপুর বেতার সম্প্রচার ভবন ও ওরিয়েন্টাল সিনেমা হলের সামনে গ্রেনেড হামলা চালান। উপজেলার ৪টি স্থানে (দহিগঞ্জ শ্মশান, বালার ঘাট, ঘাঘট নদীর ব্রিজের পাড়, লাহিড়ীর হাট) বধ্যভূমি এবং নব্দীগঞ্জে ১টি গণকবর রয়েছে; ‘অর্জন’ নামে ১টি ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন রংপুর সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৩৮০, মন্দির ৩৫, গির্জা ২, তীর্থস্থান ১, মাযার ৫। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: মাহিগঞ্জ প্রাচীন মসজিদ, কেরামতিয়া মসজিদ, বিশ্বেশ্বর শিবমন্দির, গোসাইবাড়ী নন্দীমন্দির, মাহিগঞ্জ পরেশনাথ মন্দির, শ্রী শ্রী করুণাময়ী কালীমন্দির, ডিমলারাজ কালীমন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬১.০%; পুরুষ ৬৩.৬%, মহিলা ৫৮.৩%। বিশ্ববিদ্যালয় ১, কলেজ ১৭, মেডিক্যাল কলেজ ২, ক্যাডেট কলেজ ১, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ ১, কারিগরি কলেজ ১,  পিটিআই ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৩০, কিন্ডার গার্টেন ১৮, কমিউনিটি স্কুল ১৫, স্যাটেলাইট স্কুল ১৮, এনজিও স্কুল ১২০, মাদ্রাসা ৭২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৮), কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (১৯১৬), রংপুর মেডিকেল কলেজ (১৯৬৬), সরকারি বেগম রোকেয়া মহিলা কলেজ (১৯৬৪), সরকারি রংপুর কলেজ (১৯৬৪), রংপুর ক্যাডেট কলেজ (১৯৭৭), রংপুর শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয় (১৮৫৮), রংপুর পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট (১৯৬২), রংপুর ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট (১৮৬৫), রংপুর টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ (১৮৬৫), রংপুর জিলা স্কুল (১৮৩২), রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৭৬), তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৪), কৈলাশ রঞ্জন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৪), আফান উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৮)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: দাবানল (১৯৮০), যুগের আলো (১৯৯২), পরিবেশ (১৯৯৪), রংপুর (১৯৯৭); সাপ্তাহিক: অটল (১৯৯১), রংপুর বার্তা (১৯৯৬); অবলুপ্ত: রঙ্গপুর বার্তাবহ (১৮৪৭), রঙ্গপুর দর্পণ (১৯০৭), উত্তর বাংলা (১৯৬০), প্রভাতী (১৯৫৫)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৫, জাদুঘর ১, নাট্যদল ৫, নাট্যমঞ্চ ১, সিনেমা হল ৭, ক্লাব ১৮১।

দর্শনীয় স্থান শিরিন পার্ক (গঙ্গাচড়া রোড), তাজহাট রাজবাড়ী, রংপুর চিড়িয়াখানা, রংপুর জাদুঘর, কারমাইকেল কলেজ।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৬.৭৪%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৭৭%, শিল্প ১.৯৪%, ব্যবসা ২১.২৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৭.৩০%, চাকরি ১৫.৩৫%, নির্মাণ ২.৮%, ধর্মীয় সেবা ০.২৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৪৬% এবং অন্যান্য ৯.১২%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪১.৩৯%, ভূমিহীন ৫৮.৬১%। শহরে ৫২.১৭% এবং গ্রামে ৪৭.৮৩% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, পিঁয়াজ, রসুন, আদা, আলু, আখ, তামাক, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  তিল, তিসি, কাউন, আউশ ধান।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, জাম, কলা ও পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২০, হাঁস-মুরগি ৪০, হ্যাচারি ৯।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৪০০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩৭ কিমি, কাঁচারাস্তা ৮৫৪ কিমি; রেলপথ ১৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, তেলকল, আটাকল, ময়দাকল, বরফকল, ছাপাখানা, স’মিল, ওয়েল্ডিং কারখানা, বিড়ি ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৮, মেলা ৪। লালবাগ বাজার, বাস টার্মিনাল বাজার, বুড়ীর হাট, নব্দীগঞ্জ হাট ও পাগলাপীর হাট এবং মাহিগঞ্জ রথের মেলা, বড় দরগা মেলা ও তাজহাট মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, আখ, তামাক, গম, আদা, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬৩.২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯১.৩%, ট্যাপ ৭.১% এবং অন্যান্য ১.৬%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫৯.১% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৫.৩% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ১৫.৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ৮, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১০, পৌরসভা পরিচালিত চিকিৎসা কেন্দ্র ১, দাতব্য চিকিৎসালয় ২, ক্লিনিক ২০।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কেয়ার, আরডিআরএস।  [আবদুস সাত্তার]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; রংপুর সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।