যমুনা ব্যাংক লিমিটেড

যমুনা ব্যাংক লিমিটেড বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংক। এটি কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর অধীনে একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে ২ এপ্রিল ২০০১ তারিখে নিবন্ধিত হয়। ব্যাংকটি প্রতিটি ১০০ টাকা মূল্যের ৫ মিলিয়ন সাধারণ শেয়ারে বিভক্ত ১,৬০০ মিলিয়ন টাকা অনুমোদিত মূলধন নিয়ে ৩ জুন ২০০১ তারিখে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। শুরুতে এর অনুমোদিত মূলধন ছিল ৩৯০ মিলিয়ন টাকা এবং উদ্যোক্তা পরিচালকগণ কর্তক তা সম্পূর্ণভাবে পরিশোধিত। ২০২০ সালের শেষে যমুনা ব্যাংকের অনুমোদিত ও পরিশোধিত মুলধনের পরিমাণ দাঁড়ায় যথাক্রমে ১০,০০০ এবং ৭,৪৯২ মিলিয়ন টাকা।

আমানত গ্রহণ, ঋণদান, বৈদেশিক বাণিজ্য ও প্রকল্পে অর্থায়নসহ এ ব্যাংকটি সকল প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংকিং কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসায় ও বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে। ২০২০ সাল পর্যন্ত যমুনা ব্যাংক বিশ্বের ৮৪৫টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে করেসপন্ডেন্ট সম্পর্ক স্থাপন করেছে। বাসেল-২ এর মূলধন কাঠামো সংক্রাস্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য মূলধন কাঠামো যুক্তিযুক্ত রাখার লক্ষ্যে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি বাস্তবায়ন কমিটি গঠন যমুনা ব্যাংকের একটি উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম। ইতোমধ্যে ব্যাংক তার প্রধান কার্যালয় ও শাখা পর্যায়ে নির্বাহীদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত করে তুলেছে; যাতে মূলধন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্দেশিত পর্যায়ে রাখা সুনিশ্চিত করা যায় ।

যমুনা ব্যাংক লিমিটেড সম্পদের মান সংরক্ষণ, মূলধন পর্যাপ্ততা, সম্পদের গুণগত মান, দক্ষ ব্যবস্থাপনা, সন্তোষজনক উপার্জন ও তারল্যের মতো প্রধান প্রধান লক্ষ্য সামনে রেখে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গ্রাহক সেবা আরও দ্রুত ও স্বল্প সময়ে দেওয়ার জন্য ২০০৫ সাল থেকে যমুনা ব্যাংক অন-লাইন ব্যাংকিং সেবা কার্যক্রম শুরু করেছে। ব্যাংকটি ইতোমধ্যে ২৫২টি এটিএম বুথ স্থাপন, সরাসরি ডেবিট কার্ড, সীমিত পর্যায়ে ক্রেডিট কার্ড, টেলি ব্যাংকিং প্রবর্তন করেছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে ক্রেডিট কার্ড, টেলি ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ইমেইল ও এসএমএস ব্যাংকিং প্রবর্তনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে ব্যাংকটি। যমুনা ব্যাংক লিমিটেড আমদানি ও রপ্তানি অর্থায়ন সহ ব্যাবসা-বাণিজ্য, মাঝারি ও বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানে মেয়াদি ঋণ ও চলতি মূলধন খাতে অধিকাংশ ঋণ বিতরণ করে থাকে। তবে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ব্যাংকটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে থাকে।

যমুনা ব্যাংক কর্তৃক চালুকৃত ডিপোজিট স্কিমগুলির মধ্যে ম্যারেজ ডিপোজিট স্কিম, লাখপতি ডিপোজিট স্কিম, মিলিয়নিয়র ডিপোজিট স্কিম, কোটিপতি ডিপোজিট স্কিম, এডুকেশন সেভিংস্ স্কিম, মানথলি বেনিফিট স্কিম, মানথলি সেভিংস্ স্কিম এবং ডাবল গ্রোথ ডিপোজিট স্কিম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যমুনা ব্যাংক মানব কল্যাণ ও সামাজিক দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মেধাবি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পুরস্কৃত এবং তাদের লেখাপড়ার দায়-দায়িত্ব নিয়ে থাকে। বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা ও রক্তদান কর্মসূচি আয়োজন এবং গরিব-দুঃস্থদের নিয়মিত আর্থিক সাহায্য প্রদান ব্যাংকটির সামাজিক দায়িত্ব পালনের অপর উল্লেখযোগ্য কর্মধারা।

মৌল তথ্য ও পরিসংখ্যান (মিলিয়ন টাকায়)

বিবরণ ২০১৮ ২০১৯ ২০২০
অনুমোদিত মূলধন ১০০০০ ১০০০০ ১০০০০
পরিশোধিত মূলধন ৭৪৯২ ৭৪৯২ ৭৪৯২
রিজার্ভ ১০৫৮১ ৯৬৬৮ ১৬৬৫২
আমানত ১৮৮০৩৪ ২০২৫১০ ১৯১১০৪
ক) তলবি আমানত ৩৯৯৭৭ ৪১৪৯৩ ৪৩৬৫৩
খ) মেয়াদি আমানত ১৪৮০৫৭ ১৬১০১৭ ১৪৭৪৫১
ঋণ ও অগ্রিম ১৬৫৪০৩ ১৭৭২৭৯ ১৬২৬৫৮
বিনিয়োগ ৩১৬৪৯ ৩৯২০১ ৫০৯৭০
মোট পরিসম্পদ ২২৫০১৮ ২৪২৯২৯ ২৪১৫৩৪
মোট আয় ৯৮১৮ ১১৪৪০ ১০৮৬১
মোট ব্যয় ৫১৮৯ ৫৫৯৮ ৫৭৭২
বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসা পরিচালনা ২৫১৩১৬ ২৪৭৩৯২ ২২১৫৪৩
ক) রপ্তানি ১০৬০৭১ ১০৩৯৫১ ৯২৩২৬
খ) আমদানি ১৩০২৪২ ১২৫২৬৫ ১১১০৯৭
গ) রেমিট্যান্স ১৫০০৩ ১৮১৭৬ ১৮১২০
মোট জনশক্তি (সংখ্যায়) ২৮২৪ ৩০৪৬ ৩০৯৬
ক) কর্মকর্তা ২২৫৩ ২৪৩২ ২৪৯৭
খ) কর্মচারি ৫৭১ ৬১৪ ৫৯৯
বিদেশি প্রতিসংগী ব্যাংক (সংখ্যায়) ৮৭৫ ৮৫০ ৮৪৫
শাখা (সংখ্যায়) ১৩২ ১৪১ ১৪৯
ক) দেশে ১৩২ ১৪১ ১৪৯
খ) বিদেশে
কৃষি খাতে
ক) ঋণ বিতরণ ২১১৭ ২৪১৩ ১৩১১
খ) আদায় ১৮৪৯ ১৫১৪ ২২৩৩
শিল্প খাতে
ক) ঋণ বিতরণ ৬৬৩৭২ ৭০৬৮৩ ৪৮৫৭২
খ) আদায় ৫৪২৬৮ ৬১০০৫ ৫১৮৫২
খাত ভিত্তিক ঋণের স্থিতি
ক) কৃষি ও মৎস্য ১৮৬০ ২৭৫৫ ১৯৯১
খ) শিল্প ৩০৫৭৯ ৩৪৬৬২ ৩৬৪৫৯
গ) ব্যবসা বাণিজ্য ৬০৮৮৬ ৫০১৩৮ ৫০৫৩৩
ঘ) দারিদ্র্য বিমোচন
সি.এস.আর ১৪০ ১১০ ৩৪৪

উৎস  আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার, বার্ষিক প্রতিবেদন, ২০১৯-২০২০ ও ২০২০-২১

২০ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালক পর্ষদের ওপর ব্যাংকটির সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও নীতিকৌশল অনুমোদনের কর্তৃত্ব ন্যস্ত। ব্যবস্থাপনা পরিচালক এর প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় যমুনা ব্যাংক টাওয়ার, প্লট ১৪, বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড়, ব্লক সি, গুলশান ১, ঢাকা ১২১২ এ অবস্থিত।

২০১৯ সালে ব্যাংকের আমানত ও ঋণ অগ্রিমের স্থিতির অংশ ছিল ব্যাংকিং খাতের মোট আমানত ও ঋণ অগ্রিমের স্থিতির যথাক্রমে ১.৬ এবং ১.৬ শতাংশ এবং আমানত ও ঋণ অগ্রিমের গড় সুদহার ব্যবধান দাঁড়ায় ৪.৭ শতাংশ। [মো. আশিক ইকবাল এবং মোহাম্মদ আবদুল মজিদ]