ম্যাকেঞ্জি, স্যার আলেকজান্ডার
ম্যাকেঞ্জি, স্যার আলেকজান্ডার (১৮৪২-১৯০২) একজন অসামরিক সরকারি কর্মকর্তা এবং ১৮৯৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৮৯৮ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর। তিনি বার্মিংহামের গ্রামার স্কুল এবং কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে শিক্ষালাভ করেন। ১৮৬২ সালের ডিসেম্বরে তিনি একজন সিভিলিয়ান বা আই.সি.এস হিসেবে কলকাতায় আসেন। বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর হওয়ার পূর্বে আলেকজান্ডার ম্যাকেঞ্জি ১৮৮২ সালে ভারতীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র সচিব, ১৮৮৭ সালে মধ্যপ্রদেশের চিফ কমিশনার, ১৮৯০ সালে বার্মার চিফ কমিশনার এবং ১৮৯৫ সালে সুপ্রিম কাউন্সিলের সদস্যসহ প্রশাসনের অনেক উচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
স্যার আলেকজান্ডার ম্যাকেঞ্জি সব মিলিয়ে মাত্র ২৮ মাস বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর ছিলেন। এ সময়ের মধ্যে ছুটিতে তিনি ছয় মাস ইংল্যান্ডে ছিলেন। তাঁর প্রশাসনের দুবছরে কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল না। কিন্তু ওই সময়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিয়েছিল, যা ছিল তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ১৮৯৬-৯৭ সালের দুর্ভিক্ষ ছিল তাঁর শাসনামলের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সে মৌসুমে নিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে ফসল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এর ফলে বাংলায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ১৮৯৭ সালের ১২ জুন ভূমিকম্পে সারা বাংলা, বিশেষ করে পূর্ব বাংলা ভীষণভাবে কেঁপে ওঠে। ভূ-পৃষ্ঠে অনেক বড় বড় ফাটল ধরে এবং সেসব ফাটল থেকে উত্তপ্ত পানি ও বালি উদ্গিরণ হতে থাকে। কাঁচা ও পাকা বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। রাস্তাঘাট, সেতু ও কালভার্টেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। রেল লাইন এবং সংশ্লিষ্ট স্থাপনাসমূহের ক্ষতি হওয়ায় দীর্ঘ সময় পূর্ব বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এতে মোট ১৩৫ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল। ১৮৯৮ সালের এপ্রিলে কলকাতাসহ বিভিন্ন শহরে মহামারী আকারে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে। জনৈক হিন্দু জমিদার কর্তৃক একটি মসজিদ ভেঙে ফেলার অভিযোগকে কেন্দ্র করে কলকাতায় ছড়িয়ে পড়া হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা (৩০ জুন ও ১ জুলাই ১৮৯৭) ম্যাকেঞ্জির প্রশাসনের সময়ে আরেকটি দুঃখজনক ঘটনা।
ম্যাকেঞ্জি এসব দুর্যোগ মোকাবিলায় অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে কখনই কোন কাজে অবহেলার অভিযোগ ছিল না। তবে কলকাতার মাড়োয়ারি সম্প্রদায়ের মধ্যে তিনি জনপ্রিয়তা হারিয়েছিলেন। এর কারণ তিনি তাদের মধ্যে প্রচলিত প্রথা অনুসারে বৃষ্টির উপর বাজি ধরার খেলা নিষিদ্ধ করেছিলেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বৃষ্টি হবে কিনা তা নিয়ে বাজি ধরা হতো। এমন নয় যে, নৈতিক কারণে ম্যাকেঞ্জি এ জুয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কেননা ব্রিটিশদের মধ্যে লটারি এবং জুয়া খেলা জনপ্রিয় ছিল। তবে এ প্রথা আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় কলকাতার পুলিশের জন্য প্রায়শই ঝামেলা সৃষ্টি করত। অসুস্থতার কারণে ম্যাকেঞ্জি অবসর গ্রহণ করেন এবং ১৮৯৮ সালে দেশে ফিরে যান। লন্ডনে তিনি ইন্ডিয়া ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। ১৯০২ সালের ১০ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। [সিরাজুল ইসলাম]