মৌমাছির পছন্দসই গাছপালা
মৌমাছির পছন্দসই গাছপালা (Bee forage plant) পরাগ ও মধু সংগ্রহের জন্য যেসব গাছগাছড়ার দিকে মৌমাছিরা আকৃষ্ট হয়। সপুষ্পক প্রজাতিগুলিই মৌমাছির জীবনের মূল আশ্রয়। পরাগ ও মধু সংগ্রহে উদ্ভিদ প্রজাতির অগ্রাধিকারমূলক নির্বাচনের জন্য মৌমাছিরা প্রসিদ্ধ। প্রোটিনসমৃদ্ধ পরাগ মূলত ছানাপোনার খাবারের জন্য এবং ওড়াউড়ি, খাদ্যসংগ্রহ ও সন্তান পালনের জন্য শর্করা জ্বালানি হিসেবে মধু ব্যবহূত হয়। ভাল মধুর জন্য প্রাথমিক প্রয়োজন আনুষঙ্গিক উৎকৃষ্ট গাছপালা। যেসব গাছের পরাগ সংগ্রহযোগ্য এবং পুষ্টি ও শক্তিতে সমৃদ্ধ সেইসব গাছের দিকেই সাধারণত মৌমাছিদের নজর। তা সত্ত্বেও এরা খুব খুঁতখুঁতে স্বভাবের। এদের বাছাই করা পরাগের প্রোটিন শরীরে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটায় না।
নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল থেকে পৃথক বাংলাদেশে মৌমাছিরা সারা বছরই পছন্দসই গাছগাছড়া খুঁজে পায়, যদিও ডিসেম্বর-জানুয়ারিই মধু সংগ্রহের অনুকূল সময় যখন মাঠের অঢেল রবিশস্য পর্যাপ্ত মধু যোগায় আর এ প্রক্রিয়া চালু থাকে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। মধুদায়ী অধিকাংশ গাছগাছড়ার ফুল নজরকাড়া ও চড়া রঙের (লাল ছাড়া) মধু সংগ্রহকালে মৌমাছিরা পরাগ বা মধু, কিংবা একসঙ্গে দুটিই সংগ্রহ করে। সকল মৌমাছিরই একটি উপযুক্ত পরাগডালা (corbiculae) থাকে। মধু সংগ্রহের সময় ব্যাপকভাবে কার্যকর পরাগযোগ ঘটে আর তাতে ফলন এবং অনেক কৃষি ফসলের বীজের গুণমান বৃদ্ধি পায়। কোন অঞ্চলের মধুদায়ী গাছপালা জানার জন্য পরাগবিশ্লেষ (milissopalynological analysis) আবশ্যক। মৌচাকে মৌমাছিদের আনা পরাগপিন্ড ও মধু থেকে মধুদায়ী গাছগাছড়া শনাক্ত করা যায়। মৌমাছিরা যেসব ফুল থেকে পরাগ সংগ্রহ করে তারা সেগুলির মধ্যে তফাৎ করতে জানে। সাধারণত এরা মৌচাকের ২-৩ কিলোমিটার আওতার মধ্যেকার ফুলগুলিতেই যাতায়াত করে। Apis cerana indica আনীত পরাগপিন্ডে সংগ্রহের হার ও রেণুর আয়তন নির্বিশেষে ৬,০০০-২০,০০০ রেণু থাকে।
প্রত্যেক এলাকায় নির্দিষ্ট মধুদায়ী গাছগাছড়া থাকে। অধিকন্তু এগুলির ঘনত্ব আর উপাদানও বিবিধ। পরাগপিন্ড পরীক্ষা থেকে দেখা গেছে যে, বাংলাদেশে মধুদায়ী গাছগাছড়ার সংখ্যা প্রায় ১১০। এগুলির মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যায় আছে আম, নারিকেল, কুলবরই, লিচু, গরান, গোলপাতা, জবাজাতীয় প্রজাতি, কুমড়াবর্গ আর শুঁটি, সরষে ও বেগুন জাতীয় প্রজাতি। এগুলির অধিকাংশই কৃষিক্ষেত বা বাগানের ফসল। [মোস্তফা কামাল পাশা]
আরও দেখুন ভ্রমর; মৌমাছিপালন; মধুদায়ী উদ্ভিদ।