মোহনগঞ্জ উপজেলা

মোহনগঞ্জ উপজেলা (নেত্রকোনা জেলা)  আয়তন: ২৪১.৯৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৪৫´ থেকে ২৪°৫৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৫´ থেকে ৯১°০৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বারহাট্টা ও ধর্মপাশা উপজেলা, দক্ষিণে আটপাড়া, মদন ও খালিয়াজুরী উপজেলা, পূর্বে জামালগঞ্জ ও খালিয়াজুরী উপজেলা, পশ্চিমে আটপাড়া উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৬৭৫০৭; পুরুষ ৮৪২২৩, মহিলা ৮৩২৮৪। মুসলিম ১৪০৮৫৫, হিন্দু ২৬৫০২, খ্রিস্টান ৯২ এবং অন্যান্য ৫৮।

জলাশয় ধলাই, মগরা, কানসা, ঘোড়াউৎরা, ধনু ও চিনাই নদী এবং বান্দা ও মাকরা বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন মোহনগঞ্জ থানা গঠিত হয় ৬ এপ্রিল ১৯২০ সালে। থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮২ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১১৫ ১৬৩ ২৭১৯৩ ১৪০৩১৪ ৬৯২ ৬৫.৮ ৩৭.৩
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬.৯৭ ১৮ ২৭১৯৩ ৩৯০১ ৬৫.৮
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
গাগলাজুর ৩১ ১০৮৩১ ৯৬৫৮ ৯৪১৮ ৩৪.৫
তেঁতুলিয়া ৮৪ ৯৮৯৮ ৯৩৭৫ ৯৪১২ ২৯.২
বড়কাশিয়া বিরামপুর ১০ ৫৩৩৮ ৯৯০৯ ৯৫২০ ৪২.০
বড়তলী বানিহারী ২১ ৬৪০৩ ১০১৩৪ ৯৮৭৯ ৪১.৬
মাগন সিয়াধর ৪২ ৯১৭৭ ১০৯১৩ ১১০১০ ৩৯.৮
সমাজ সহিলদেও ৬৩ ৭৮৫৭ ১১০৮৬ ১১০৯৫ ৩৩.১
সুয়াইর ৭৩ ৮৫৭১ ৯৫১২ ৯৩৯৩ ৪০.৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ বেথাম গ্রামের প্রাচীন দুর্গ (সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলে নির্মিত), শেখের বাড়ির মসজিদ (হোসেন শাহী আমল), দৌলতপুর মন্দির (৮৭৬ বঙ্গাব্দ)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা মোহনগঞ্জ থানার পাকসেনাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করলে পাকসেনারা বারহাট্টার দিকে পালিয়ে যায় এবং মুক্তিযোদ্ধারা মোহনগঞ্জ থানা দখল করে নেয়। ৮ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা স্থানীয় লোকদের সহায়তায় ১৯ জন রাজাকারকে মোহনগঞ্জের পাথরঘাটায় হত্যা করে।

বিস্তারিত দেখুন মোহনগঞ্জ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৮।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২১৭, মন্দির ৩২।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪২.১%; পুরুষ ৪৩.৪%, মহিলা ৪০.৮%। কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৮, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫০, স্কুল ৪৬, মাদ্রাসা ৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মোহনগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ (১৯৬৯), মোহনগঞ্জ মহিলা কলেজ (১৯৯৮), মোহনগঞ্জ সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩১), মোহনগঞ্জ পাবলিক হাই স্কুল (১৯৮১)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৪, ক্লাব ৩৬, সিনেমা হল ৩, মহিলা সংগঠন ৪, খেলার মাঠ ১২, নাট্যদল ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৭.৭৫%, অকৃষি শ্রমিক ২.৮৭%, শিল্প ০.৮০%, ব্যবসা ১১.৮৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৮০%, চাকরি ৪.৩০%, নির্মাণ ০.৮৬%, ধর্মীয় সেবা ০.৪৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৮% এবং অন্যান্য ৮.০১%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, সরিষা, তুলা।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি আলু।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, জাম।

মৎস, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার  মৎস্য ৫০, হাঁস-মুরগি ৬১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৭৮ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৪ কিমি, কাঁচারাস্তা ২০৫ কিমি; রেলপথ ৩৮ কিমি; নৌপথ ৫০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, মহিষের গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা আটামিল, স’মিল, রাইস মিল, তেলকল, আইস ফ্যাক্টরী, প্রিন্টিং প্রেস, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, সূচিশিল্প, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩৮, মেলা ২। মোহনগঞ্জ, ছেছড়াখালি, মথুরা, জৈনপুর, বেথাম, গাগলাজুর, পাইকুড়া ও পালগাঁও হাট এবং নাগডরা ও বড়ান্তর মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, শুঁটকি মাছ, ডিম।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়নের আওতাধীন। তবে ৩৮.১% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯১.৭%, ট্যাপ ১.৩% এবং অন্যান্য ৭.০%। এ উপজেলার ৩৩% অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৬.৬% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫৫.২% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ৮.২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ২।

এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, আশা, আহসানিয়া মিশন। [সৈয়দ মারুফুজ্জামান]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মোহনগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।