মোড়েলগঞ্জ উপজেলা

মোড়েলগঞ্জ উপজেলা (বাগেরহাট জেলা)  আয়তন: ৪৬০.৯১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°২০´ থেকে ২২°৩৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪২´ থেকে ৮৯°৫৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কচুয়া (বাগেরহাট) ও বাগেরহাট সদর উপজেলা, দক্ষিণে শরণখোলা ও মঠবাড়িয়া উপজেলা, পূর্বে পিরোজপুর সদর ও ভান্ডারিয়া উপজেলা, পশ্চিমে রামপাল ও মংলা উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩৪৯৫৫১; পুরুষ ১৭৮৬৭৬, মহিলা ১৭০৮৭৫। মুসলিম ৩০৯৬৫০, হিন্দু ৩৯৮১১, বৌদ্ধ ২৮ এবং অন্যান্য ৬২।

জলাশয় বলেশ্বরী, ঘাসিয়াখালী, পানগুছি, ভোলা এবং বলবুনিয়া নদী উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন মোড়েলগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৯০৯ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৫ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৬ ১২১ ১৮১ ২৭৩৫২ ৩২২১৯৯ ৭৫৮ ৬৮.৯ ৬১.৮
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬.০০ ১২ ২১৭১৮ ৩৬২০ ৭১.৩
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৭.২৩ ৫৬৩৪ ৭৭৯ ৫৯.৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
খাউলিয়া ৫৯ ১০৩৭৪ ১৬৪৩১ ১৫৯২২ ৫৭.১৩
চিংড়াখালী ২৯ ৫৪৯৭ ৯৫৯৯ ৯৫৬৫ ৬৮.৯৮
জিউধারা ৫৩ ১২৪১৮ ১৩৩৩৬ ১২৩৭২ ৬২.৮১
তেলিগাতি ৯৫ ৪৯০১ ৬৮৩৬ ৬৭২০ ৬৮.৬৮
দৈবজ্ঞহাটি ৩৫ ৫১৬০ ৯৮৬৮ ৯৬৩৫ ৬০.৪৯
নিশানবাড়িয়া ৭১ ১২০০২ ১৪৮১৯ ১৪৭৭৫ ৫৭.৭৬
পঞ্চকরণ ৭৭ ৬৯৪৯ ১০৯৪৫ ১০৫৩০ ৬২.৬৯
পুটিখালী ৮৩ ৫৫২১ ৯৮৫৭ ৯৫৭৪ ৬৪.৮৭
বনগ্রাম ১৭ ৪৩৩৫ ৬৬৩২ ৬২২৫ ৫৮.৬৪
বলাইবুনিয়া ১১ ৪০৫০ ৯২০৫ ৮৩৯৪ ৬৫.২৩
বহরবুনিয়া ১০ ৭৭০৮ ১১০৭১ ১০৭২১ ৬৩.১১
বারইখালী ২৩ ৭২২৮ ১২৬৫৮ ১২১৯৫ ৬৯.৬৪
মোড়েলগঞ্জ ৬৫ ৪৭২০ ৭০৯৬ ৬৬৬২ ৫৩.৯৩
রামচন্দ্রপুর ৮৯ ৬১০২ ১০৫০৭ ৯৩৪৪ ৬১.৩৫
হোগলাপাশা ৪৭ ৪৪১৪ ৬৯৮৬ ৬২৭১ ৫৯.৯৫
হোগলাবুনিয়া ৪১ ৭২৫২ ১১৩৮৭ ১১৬৯৫ ৫৪.৪৪

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মোড়েলগঞ্জ কুঠিবাড়ি (১৮৪৯), লক্ষ্মীখালি আশ্রম ও বনগ্রামের রাজবাড়ি।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি  ইংরেজ শাসনামলে হেনরি মোরেল এ এলাকায় কুঠি স্থাপন করে ব্যাপক নির্যাতন চালায়। এর প্রতিবাদে উপজেলার বারৈখালীর কৃষক নেতা রহিমুল্লার নেতৃত্বে কৃষক আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনে ১৮৬১ সালের ২৫ নভেম্বর রহিমুল্লাহ নিহত হন। ১৯৭১ সালের মে মাসের শেষের দিকে মোড়েলগঞ্জ বাজারে এক গণহত্যা সংঘটিত হয়। বাগেরহাট থেকে পাকবাহিনী ও রাজাকারেরা লঞ্চে এসে সারা বাজার ঘিরে ফেলে এবং বহু লোককে গুলি করে হত্যা করে। পাকবাহিনী বাড়িঘরে আগুন দিয়ে বহু সংখ্যক লোককে পুড়িয়ে হত্যা করে।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ ১।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৬১৮, মন্দির ৬৫। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: টাউন জামে মসজিদ, বাদশাহ’র হাট জামে মসজিদ, সরদারপাড়া জামে মসজিদ, হাওলাদার ডাঙ্গা জামে মসজিদ, শ্রী শ্রী কালী মন্দির, ঠাকুরের কাচারি মন্দির, দৈবজ্ঞহাটি শীতলা মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬২.৩%; পুরুষ ৬৩.৮%, মহিলা ৬০.৮%। কলেজ ৮, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩০২, মাদ্রাসা ৬৩। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: এস এম কলেজ (১৯৬৮), সেলিমাবাদ কলেজ (১৯৯০), বনগ্রাম সেন্সুরি ইনস্টিটিউশন (১৯০১), দৈবজ্ঞহাটি বিশ্বেশ্বর বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৫), চিংড়াখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২০), এসি লাহা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), কচুবুনিয়া রহমাতিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৭)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: রয়েল বেঙ্গল (অবলুপ্ত), পানগুছি (অনিয়মিত), মৌচাক; পাক্ষিক: মোড়েলগঞ্জ বার্তা; সাময়িকী: মজলুম, মোড়েলগঞ্জ পরিক্রমা, প্রকাশ, বসুন্ধরা,  প্রজাপতি (শিশু কিশোর পত্রিকা)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান প্রেসক্লাব ১, লাইব্রেরি ৮, থিয়েটার ২, যাত্রাদল ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৬.৭৭%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৮১%, শিল্প ০.৯১%, ব্যবসা ১৫.৩২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.১৩%, চাকরি ৮.১%, নির্মাণ ১.২২%, ধর্মীয় সেবা ০.২৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৪৯% এবং অন্যান্য ৮.৯৭%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৭.৪৫%, ভূমিহীন ৪২.৫৫%। শহরে ৩৯.৭৮% এবং  গ্রামে ৫৮.৮৯% পরিবারের  কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, আখ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসল  মিষ্টি আলু।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, তাল, নারিকেল, কলা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৯৬০, হাঁস-মুরগি ১৩, গবাদিপশু ৮, হ্যাচারি ১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১১০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৭২২ কিমি; নৌপথ ৩৬ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি।

শিল্প ও কলকারখানা আইস ফ্যাক্টরী, করাতকল, রাইসমিল, ওয়েল্ডিং কারখানা, ইটভাটা।

কুটিরশিল্প সূচিশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩১, মেলা ৪। মোড়েলগঞ্জ, দৈবজ্ঞহাটি, পোলেরহাট, ডেউয়াতলা ও লক্ষ্মীখালি হাট এবং কালাচাঁদ আউলিয়া, লক্ষ্মীখালীর গোপাল সাধু, সানকি ভাংগা বৈশাখী ও পোলেরহাট আহমদ চাঁদের মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  চিংড়ি, নারিকেল, কলা।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৩.৮৫% পরিবারের  বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৩১.১২%, পুকুর ৬৪.১১%, ট্যাপ ২.৭১% এবং অন্যান্য ২.০৬%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২৯.৪৮% (গ্রামে ৩০.৫৭% এবং শহরে ১৬.০২%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৬৪.৬% (গ্রামে ৬৩.৩৫% এবং শহরে ৭৯.৯৪%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ৫.৯২% পরিবারের কোন ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১৬, ক্লিনিক ৬, পশু হাসপাতাল ১।

এনজিও ব্র্যাক, উদ্দীপন, প্রশিকা, আশা।  [মো. শিবিবর আহম্মেদ]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মোড়েলগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।