মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা

মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা (বরিশাল জেলা)  আয়তন: ৪১৮.৯৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৪১´ থেকে ২৩°৫৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৩´ থেকে ৯০°৩৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে হিজলা এবং মুলাদী উপজেলা, দক্ষিণে বরিশাল সদর এবং ভোলা সদর উপজেলা, পূর্বে ভোলা সদর, লক্ষ্মীপুর সদর এবং রায়পুর উপজেলা, পশ্চিমে মুলাদী ও বরিশাল সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩০১০৪৬; পুরুষ ১৪৬৯২৬, মহিলা ১৫৪১২০। মুসলিম ২৮৯৩০৮, হিন্দু ১১৬৮১, বৌদ্ধ ২১, খ্রিস্টান ১৩ এবং অন্যান্য ২৩।

জলাশয় মেঘনা, লতা, আড়িয়াল খাঁ, তেতুলিয়া, ধর্মগঞ্জ, আজিমপুর, নয়াভাঙ্গা, সুলতানী ও গণেশপুরা নদী উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন মেহেন্দীগঞ্জ থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৫ অক্টোবর ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৩ ১১৯ ১৪২ ৩৩৮০২ ২৬৭২৪৪ ৭১৯ ৬৩.৮ (২০০১) ৪৬.৬
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৪.৯৬ (২০০১) ১১ ৩০০৬৭ ১৯৫৭ (২০০১) ৬৪.৩
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২.২৯ (২০০১) ৩৭৩৫ ১৬০৩ (২০০১) ৫৫.৫
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আন্ধারমানিক ১৫ ৬১০৬ ৯৯৬৪ ১০৯৫৬ ৫৫.৮
আলীমাবাদ ১৩ ১২৯১৩ ১৪৭৬১ ১৫০২৯ ৩১.৬
উলানিয়া ৯৪ ৬০৯৬ ২৫৩৪৫ ২৫৭৩২ ৪৬.৫
গোবিন্দপুর ৪০ ১০৫৮০ ৪১৫০ ৪০০৮ ৫৬.৮
চর গোপালপুর ৫৫ ৬৫৯৩ ৬৩৭৫ ৬৬১১ ৫২.০
চরএক্কারিয়া ৪৭ ১১৫৪৮ ১৫৫২৯ ১৬৪৪৬ ৫৩.৯
চাঁদপুর ৩৯ ৪২১২ ১০০৭০ ১১১১৪ ৪৮.৫
জাঙ্গালীয়া ৭১ ৮৮৪৫ ১০৪৩৮ ৯৯৮৬ ৪৫.২
দড়িচর খাজুরিয়া ৬৩ ৪৬৮৭ ৫১২৬ ৫৩১৬ ৪২.৩
বিদ্যানন্দপুর ৩১ ৭৬৬৭ ৬১৪০ ৬৬৩২ ৩৩.৫
ভাসানচর ২৩ ৪৫২৪ ৮০৬৪ ৮৭৭৪ ৪২.০
মেহেন্দীগঞ্জ ৮৭ ৫৭৭৭ ৭১৮৫ ৭৮৫২ ৪৮.৩
লতা ৭৯ ৭১৪১ ৯২৪৪ ১০১৩২ ৫৪.১

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ উলানিয়ার জমিদার বাড়ী ও মসজিদ, বাসুদেব মূর্তি এবং সংগ্রাম সিংহের কেল্লা (মোগল আমলে নির্মিত)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের জুলাই মাসের শেষদিকে উলানিয়া এবং ভাষানচরের মাঝামাঝি একটি স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম সম্মুখযুদ্ধ হয়। পরবর্তীতে কালিকাপুর, মেহেন্দীগঞ্জ থানা ও মেহেন্দীগঞ্জ বন্দরে মুক্তিযোদ্ধারা অপারেশন পরিচালনা করে। পাতারহাট আর সি কলেজ প্রাঙ্গণে ১টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৮।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৩৩০, মন্দির ২৮।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৮.৬%; পুরুষ ৪৬.৪%, মহিলা ৫০.৬%। কলেজ ৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭০, মাদ্রাসা ১১৩। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: পাতারহাট আর সি কলেজ, একতা কলেজ, উলানিয়া মুজাফ্ফর খান কলেজ, আন্ধারমানিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আমীরগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, লস্করপুর উত্তর জাঙ্গালিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উদয়পুর মুসলিম আকন্দ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উলানিয়া করনেশন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উলানিয়া বালিকা বিদ্যালয় (মাধ্যমিক), কালিকাপুর রমিজস্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাতারহাট মুসলিম হাইস্কুল (১৯২৪), ভাষানচর এস এম মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৪৩), আন্ধারমানিক আজিমপুর দাখিল মাদ্রাসা, আন্ধারমানিক আলীমাবাদ ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, আসলামিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা, উলানিয়া আহমদিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসা, পাতার হাট সিনিয়র মাদ্রাসা, ভাসানচর নেছারিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, মাদারতলী ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, সন্তোষপুর সিনিয়র মাদ্রাসা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ৪২, সিনেমা হল ১, মহিলা সংগঠন ৫, খেলার মাঠ ৩৫, নাট্যদল ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৯.৭৬ght%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৩৩%, ব্যবসা ১৩.৬৮%, পরিবহণ ১.৪৪%, চাকরি ৭.৫৫%, নির্মাণ ১.৭০%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.৪৫% এবং অন্যান্য ৯.০৯%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৮.৮৫%, ভূমিহীন ৪১.১৫%। শহরে ৫২.৩০% ও গ্রামে ৫৯.৬২% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, ডাল, মিষ্টি আলু, পিঁয়াজ, পান, আখ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, কাউন, সরিষা।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, জাম, তাল, নারিকেল, আতা, সুপারি।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৫১, হাঁস-মুরগি ১৭৪, হ্যাচারি ১০।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৪১.২৮ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৩৪.৫১ কিমি, কাঁচারাস্তা ৯০৬.৩২ কিমি; নৌপথ ৪০০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা আটাকল ১, আইস ফ্যাক্টরি ৫, বিস্কুট ফ্যাক্টরি ২০, লবণ কারখানা ১, বিড়ি কারখানা ১।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প ৫০, মৃৎশিল্প ৮৬, মাদুরশিল্প ৫৬, বাঁশের কাজ ২০, নকশী কাঁথা ১৮।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৮, মেলা ১। পাতার হাট, উলানিয়া হাট, কোর্টের হাট, বাংলাবাজার কাজির হাট ও দফাদার হাট উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য পান, পিঁয়াজ, মিষ্টি আলু, সুপারি, ডাল, দধি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লি¬বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৬.২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯১.৪%, ট্যাপ ০.৪% এবং অন্যান্য ৮.২%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলায় ৭৩.০% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৫.০% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ২.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১৩, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৪।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮২২ ও ১৮৯৫ সালের বন্যা এবং ১৮৬৪, ১৯৬১ ও ১৯৬৫ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এ উপজেলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, কারিতাস, আশা, প্রশিকা।  [আহসান হাবিব]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।